
কৃষিবিদ ড. কে এম খালেকুজ্জামান, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: টমেটোর জমিতে রোগের বাসা বাঁধে মাটি সব সময় স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে ক্রমাগত মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া বিরাজ করলে। তাই টমেটোর পাতা কোঁকড়ানো ও ঢলে পড়া রোগের সমাধান না জানলে চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
ঢলে পড়া (Bacterial wilt): রোগের কারণ ও বিস্তার : রালসটোনিয়া সোলানেসিয়ারাম (Ralstonia solanacearum) নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হয়। গাছের পরিত্যক্ত অংশ, মাটি ও বিকল্প পোষকে এ রোগের জীবাণু বেঁচে থাকে। সেচের পানি ও মাঠে ব্যবহৃত কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। উচ্চ তাপমাত্রা (২৮-৩২০ সেলসিয়াস) ও অধিক আর্দ্রতায় এ রোগ দ্রুত ছড়ায়।
রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার : গাছ বৃদ্ধির যে কোনো সময় এ রোগ হতে পারে এবং ব্যাপক ক্ষতি করে। আক্রান্ত গাছের পাতা ও ডাঁটা খুব দ্রুত ঢলে পড়ে এবং গাছ মরে যায়। গাছ মরার পূর্ব পর্যন্ত পাতায় কোনো প্রকার দাগ পড়ে না।
মাটির ওপরে আক্রান্ত গাছের গোড়া থেকে সাদা রঙের শিকড় বের হয়। রোগের প্রারম্ভে কাণ্ডের নিম্নাংশ চিরলে এর মজ্জার মধ্যে কালো রঙের দাগ দেখা যায় এবং চাপ দিলে তা থেকে ধূসর বর্ণের তরল আঠাল পদার্থ বের হয়ে আসে। এ তরল পদার্থে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া থাকে।
তাছাড়া আক্রান্ত গাছের গোড়ার দিকের কা- কেটে পরিষ্কার গ্লাসে পানিতে ডুবিয়ে রাখলে সাদা সুতার মতো ব্যাকটেরিয়াল উজ বের হয়ে আসতে দেখা যায়।
যা করতে হবে:
রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করতে হবে; বুনো বেগুন গাছের কাণ্ডের সাথে কাক্সিক্ষত জাতের টমেটোর জোড় কলম করতে হবে; শস্য পর্যায়ে বাদাম, সরিষা, ভুট্টা ফসল চাষ করতে হবে; রোগাক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র মাটিসহ তুলে ধ্বংস করতে হবে; টমেটোর জমি স্যাঁতস্যাঁতে রাখা যাবে না; হেক্টর প্রতি ২০ কেজি স্টেবল ব্লিচিং পাউডার শেষ চাষের সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে; স্ট্রেপ্টোমাইসিন সালফেট (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন) ২০ পিপিএম অথবা ক্রোসিন এজি ১০ এসপি ০.৫ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৪-৭ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:
টমেটোর ৪ ধরণের রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনা
এক টেকনিকেই টমেটোর ফলন হবে দ্বিগুণ
গ্রীষ্মকালীন টমেটো বারি-৮ চাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে কৃষকের
পাতা কুঁকড়ানো (Leaf curl) :
রোগের কারণ ও বিস্তার : ভাইরাসের (Virus) আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। সাদা মাছি নামক পোকার আক্রমণে এ রোগ অসুস্থ গাছ থেকে সুস্থ গাছে সংক্রমিত হয়।
রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার : গাছ খর্বাকৃতির হয়ে যায়। পাতার গায়ে ঢেউয়ের মতো ভাঁজ সৃষ্টি হয় ও পাতা ভীষণভাবে কুঁকড়িয়ে যায়। বয়স্ক কুঁকড়ানো পাতা পুরু ও মচমচে হয়ে যায়।
আক্রমণের মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে পাতা মরে যায়। গাছে অতিরিক্ত শাখা হয় ও গাছ সম্পূর্ণরূপে ফুল, ফল ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
যা করতে হবে:
রোগাক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তুলে ধ্বংস করতে হবে; রোগাক্রান্ত চারা কোনো অবস্থাতেই লাগানো যাবে না; সুস্থ গাছ থেকে পরবর্তী মৌসুমের জন্য বীজ সংগ্রহ করতে হবে; গাউচু নামক কীটনাশক (৫ গ্রাম/কেজি বীজ) দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে; পোকা দমনের জন্য এডমায়ার কীটনাশক ১ লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
টমেটোর পাতা কোঁকড়ানো ও ঢলে পড়া রোগের সমাধান লিখেছেন কৃষিবিদ ড. কে এম খালেকুজ্জামান এসএসও (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব), মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া। লেখাটি কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে নেওয়া হয়েছে।
এগ্রিকেয়ার/এমএইচ