ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: গেল বছরে শিলাবৃষ্টি আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বোরো ধান আর ভুট্টা চাষের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আশায় বুক বেঁধেছিল ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক। কিন্তু এবারও ধানে দেখা দিয়েছে ব্লাস্ট আর ভুট্টায় গোড়া পঁচা রোগ। অব্যাহত ক্ষতিতে পড়ায় কৃষকের চোখে মুখে হতাশা আর বিষাদের ছাপ।

ঠাকুরগাঁওয়ের বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে সোনালী ফসল ধানের সমারোহ। কিছুদিন পড়েই নতুন ধান ঘরে তুলবে কৃষক। আর এ সময়ে ধান ক্ষেতে দেখা দিয়েছে ব্লাস্ট রোগ। ধানের শীষ সাদা হয়ে মরে যাচ্ছে। ছত্রাক নাশক ছিটিয়েও ফল পাচ্ছে না কৃষক।

এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতিপূরুণের দাবিতে বিক্ষোভ ও কর্মসূচিও পালন করেছে কৃষকেরা। এছাড়া  অভিযোগ উঠছে মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের ভালো সাড়া না পাওয়ার। অভিযোগ করে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা বলছে, বেশি ফলনের আশায় স্বায়িত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উচ্চ ফলনশীল ব্রি-৬৩ জাতের ধানের আবাদ করে চরম ক্ষতির মুখে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মাতৃগাঁও গ্রামের ৫০জন চাষি।

১৫শ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বালাইনাশক ব্যবহার করেও রোগ দমন করতে পারেনি তারা। তাই ক্ষতিপুরনের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা কৃষি অফিস ঘেরাও করে স্মারক লিপি দেয় ভুক্তভোগী কৃষকরা।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক সফিউল আলম অভিযোগ করে জানায়, স্থানীয় বীজের ডিলার ও বিক্রেতা রফিকুল ইসলামের কথায় উচ্চ ফলনশীল ৬৩ জাতের ধানের চাষ করা হয়। এই জাতের ধান যারা রোপন করেছে তারাই ক্ষতির মুখে পরেছে।

ওই গ্রামের মমিনুল ইসলাম জানায়, এক বিঘা জমি চুক্তি নিয়ে ধানের আবাদ করা হয়। এ জন্য জমির মালিককে ১০মন ধান দিতে হবে। হঠাৎ ধানের শীষ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ২ হাজার টাকার বালাইনাশক স্প্রে করা হয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। গত বছর ৪৫ মন ধান পেলেও এবার তার চার ভাগের এক ভাগও মিলবে না।

তার মতো এনামুল হকও জানায় ৭৫ শতক জমি চুক্তি নিয়ে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। সব শেষ, ঋন নিয়ে ধানের আবাদ করে গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানায় সে।

ব্রি-৬৩ জাতের ধান ক্ষেত ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধান নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান। শুধু শীষ চিটাই নয়, ধান গাছের মা’পাতাও শুকিয়ে যাচ্ছে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার অনেক কৃষকের।

ওই উপজেলার ফাসিদহ গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম, খায়রুল ইসলাম ও মোজাফফর হোসেন জানায়, ধানের চারার বয়স ৫৫ দিন হওয়ার পর থেকে মা পাতা শুকিয়ে যায়। এতে চালের দানা ছোট হবে ফলনও অর্ধেকে নেমে আসবে এমন আশংকা তাদের। এ রোগ ঠেকাতে বালাইনাশক দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না।

এদিকে সদরের নারগুন গ্রামের ভুট্টা ক্ষেতেও দেখা দিয়েছে গোড়া পচা রোগ। ওই গ্রামের আব্দুল মান্নান ও কুলসুম বেগম জানায়, গাছ ও পাতা শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে ভুট্টার মোচা। বালাইনাশক প্রয়োগ করেও দমন করতে পারছেনা চাষিরা। তাই এবার ভুট্টায় লোকসান গুনতে হবে তাদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারনের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বোরো ধান ও ভুট্টার ফলন ভাল হওয়ার আশা প্রকাশ করে বলছেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

ওই কর্মকর্তা যে কোন সমস্যায় কৃষি বিভাগের পরামর্শ নেয়ার কথা জানিয়ে বলেন, মা পাতা শুকিয়ে গেলে পটাশ সার দেয়া পারামর্শ দেন। সেই সাথে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমাতে হবে বলে জানান তিনি।

এবার জেলার ৫ উপজেলায় ৬৩ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে বোরো ও সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এ থেকে ৩ লাখ ৭৮ হাজার মে.টন ধান ও ১ লাখ ১৮ হাজার মে.টন ভুট্টা উৎপাদন হবে।