তরমুজ চাষি

আসাদুজ্জামান মিলন, শরণখোলা থেকে: আদি পেশা মাছ ধরা থেকে বেরিয়ে এসে তরমুজ চাষে বড় ধরণের সফলতার দেখা পেয়েছেন লোকমান সরদার ও তার দুই বন্ধু। এবার তরমুজে বিঘায় লাখ টাকা মুনাফা লোকমানের হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আলাপকালে শরণখোলা উপজেলার সফল তরমুজ চাষি লোকমান জানান, তিন বিঘা জমির নগদ টাকা, উন্নত বীজ সংগ্রহ, পানি সেচ ও বালাই নাশক পদ্ধতির ব্যবহার বাবদ তাদের মোট ব্যায় হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু এ বছরে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরণখোলা উপজেলার ঝিলবুনিয়া গ্রামে ব্যবসায়িক ভাবে তরমুজ চাষ শুরু করেন লোকমান সরদার ও তার দুই বন্ধু। কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই তারা তিন জনে মিলে প্রতিবেশীদের তিন বিঘা জমি নগদ রেখে তরমুজ চাষের উদ্যোগ নেন।

লোকমান বলেন, এ পর্যন্ত প্রথম ধাপে ৪০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে কেটে জমিয়ে রাখা তরমুজের মূল্য এক লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হবে। এছাড়া মাঠে থাকা তরমুজ ও ফলন অনুযায়ী তারা আরো দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন। এক প্রতিবেশীর পরামর্শে ভুল ঔষধ ব্যবহার করে তরমুজের মাঠ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তা না হলে এবারে তারা আট থেকে ১০ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারতেন বলে ধারনা করছেন সফল চাষী লোকমান সরদার ও তার দুই বন্ধু।

শরণখোলা উপজেলা সদরের নিকটবর্তী ও বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী গ্রাম ঝিলবুনিয়া। এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষের পেশা মাছ ধরা। বংশ পরম্পরায় যুবক লোকমান সরদার ও একজন জেলে। ছোট বেলা থেকেই জাল, নদী আর নৌকার সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক। এখন থেকে বছর  পাচেঁক আগে জেলে লোকমান সরদার শখের বশে সামান্য জমিতে তরমুজের চাষ করে তেমন সফলতা পান নি। কিন্তু তরমুজ চাষের নেশা তাকে ছাড়েনি।

বলেশ্বরে এখন আর আগের মত মাছ পরছে না। এক দিকে কাজের অভাব, অন্য দিকে নতুন করে বেশী জমিতে তরমুজ চাষের স্বপ্ন। সে অনুযায়ী লোকমান সরদার প্রতিবেশী মামুন ও মানিক কে সাথে নিয়ে নতুন করে জিলবুনিয়া গ্রামেই তাদের প্রতিবেশীদের তিন বিঘা জমি নগদ রাখেন।

খরচের হিসাব তুলে ধরে তারা জানান, এর প্রতি বিঘা নগদ হিসাবে রাখতে বছরে ৮ হাজার করে মোট ২৪ হাজার টাকা, উন্নত তরমুজের ৪০ গ্রাম বীজ ৩৫ হাজার টাকা, সার ও বালাই নাশক বাবদ ৮০ হাজার টাকা, নেটের বেড়া ও পানি সেচ বাবদ সব মিলিয়ে মোট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান তারা। এতে তারা প্রত্যেকে ৬০ হাজার টাকা করে বিনিয়োগ করে তরমুজ চাষের কাজ শুরু করে। তিন জনের সমান বিনিয়োগ, তিন জনেই মাঠে কাজ করেন। তিন জনেই সমান ভাগে লাভের টাকা ভাগ করে নেন। তরমুজে বিঘায় লাখ টাকা মুনাফা হওয়ায় তারা খুবই খুশি।

জিলবুনিয়া গ্রামে তিন বন্ধুর এ তরমুজ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। কাজের ফাঁকে সফল চাষী লোকমান সরদার গল্পের মত তার তরমুজ চাষের নেপথ্য কথা আর আগামীর স্বপ্নের কথা গুলো বলছিলেন। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শরণখোলার মাটি তরমুজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

এখানে তরমুজ আকারে যেমন বড় হয়, তেমনি খেতে ও অনেক সুস্বাদু হয়। এসব জমিতে একবার আমন ধান ফলানোর পড়ে সারা বছর পতিত অবস্থায় পড়ে থাকে। তাই পতিত এ জমি ব্যবহার করে শরণখোলায় পরিকল্পিত তরমুজ চাষের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে সফল চাষী লোকমান সরদারের অভিমত।

আরও পড়ুন: বাজারে এসেই তরমুজের কেজি ৫০

কম সময়ে, কম পরিশ্রমে ও কম পুজিতে তরমুজের বাম্পার ফলন ও ভালো বাজার দর পেয়ে তারা বেজায় খুশী। পাইকাররা এসে ক্ষেত থকেই প্রতি কেজি তরমুজ ৩০ টাকা ও প্রতিমন ১২ হাজার টাকা দরে কিনে নিচ্ছেন। এ বারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে আরো বেশী জমিতে তরমুজ চাষ করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তোলার স্বপ্ন দেখছেন তারা।

আরও পড়ুন: তরমুজ চাষ শুরু করবেন কিভাবে? জানুন চাষ পদ্ধতি

সংশ্লিষ্ট জিলবুনিয়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কাওছার আকন জানান, তারা তিন জনই খুব পরিশ্রমী। তাদের এ তরমুজ ক্ষেত দেখতে মানুষ ভিড় করছে। কেউ কেউ তাদের ক্ষেত থেকে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যেন একটা উৎসবের আমেজ। তাদের এ সফলতা দেখে আগামীতে প্রতিবেশী অনেক চাষী তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে জানান তিনি।

সার্বিক বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়াসিম উদ্দিন বলেন, বলেশ্বর ও ভোলা নদী বেষ্ঠিত শরণখোলায় তরমুজ চাষের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। কারন এ অঞ্চলের পানিতে সহনশীল মাত্রার লবনাক্ততা আছে। যা তরমুজ চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। কম সময়ে, কম পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়ার জন্য তরমুজ একটি ভালো অর্থকরী ফসল। এ চাষে আগ্রহী চাষীদের উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।