নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: রাজশাহী নগরীর রেলগেট এলাকায় এক তরমুজের দোকানে দাঁড়িয়ে মাসুদ রানা (১৯)। নওগাঁ থেকে রাজশাহী এসেছিলেন মামার কাছে বেড়াতে। বাসায় যাওয়ার সময় মৌসুমের নতুন ফল তরমুজ দেখে চোখ আটকে গেলে দাঁড়িয়ে দাম শুনছিলেন।

দোকানদার বাবু ইসলাম (৪৫) জানালেন- প্রতিকেজি তরমুজ ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। সর্বোচ্চ ১০ কেজি ও সর্বনিম্ন ওজন ৪ কেজি। দাম শুনে তরমুজ না কিনে এককেজি আপেল কেনা ভালো মন্তব্য করলেন মাসুদ।

শুধু রেলগেট নয়; রাজশাহীর উপশহর নিউমার্কেট, সাহেববাজার মাস্টারপাড়া সবজি বাজার, লক্ষীপুর কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে গরমের এ ফল বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে কয়েকটি বাজারে ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

রেলগেটের তরমুজ ব্যবসায়ী বাবু ইসলাম জানান, রাজশাহী অঞ্চলে যেসব তরমুজ আসে সবগুলোই বরিশালের। প্রথম দিকে আসে বরিশালের তরমুজ, এরপর খুলনা এবং সর্বশেষ আসে নাটোরের তরমুজ। রোজার আগে চাহিদা এবং আগাম বাজার ধরতে চাষিরা চাষ করেছিলেন। সেই অনুযায়ী এখন ফসল তুলতে পারছেন। পাইকারিতে ২০-২৫ টাকা বিক্রি করতে পেরে তারা খুশি। অন্যান্য বছরের প্রতিপিস তরমুজ বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় কিন্তু এবার ১০ কেজি ওজনের একটা তরমুজ ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম চড়া হলেও বাজারে চাহিদা রয়েছে। দিনে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করছেন এই ব্যবসায়ী।

পড়তে পারেন: আগাম তরমুজ চাষে লাখ টাকা আয় কৃষকের

তিনি আরো জানান, তরমুজ বাজারে আসার এক সপ্তাহ পর থেকে দাম কমতে শুরু করে। হয়ত রোজার আগে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে নেমে আসবে বলে ধারণা করছেন তিনি।

রাজশাহীর গোরহাঙ্গা রেলগেট এলাকার ইশান ফল ভান্ডারের মালিক মো মান্নু বলেন, তরমুজ গরমের সময় স্বস্তিদায়ক খাবার। সামনে রমজান আসছে; তরমুজের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হবে। ইফতারে আপেল, খেজুর, মাল্টার সাথে তরমুজ পছন্দ করেন অনেকে। ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। নতুন ফল আগ্রহ দেখিয়ে কিনছেন ক্রেতারা। রাজশাহীতে যেহেতু তরমুজ চাষ হয় না; সেহেতু বরিশাল থেকে আনতে হয়। শালবাগানে ফলের আড়তে আমদানি করলে সেখান থেকে এক টন দু’টন করে আমরা কিনে খুচরা বিক্রি করি।

পড়তে পারেন: তরমুজ চাষ শুরু করবেন কিভাবে? জানুন চাষ পদ্ধতি

সাহেববাজার মাস্টারপাড়া সবজি বাজার কাঁচা সবজি কিনতে এসেছিলেন সাইফুল ইসলাম। তরমুজের দাম শুনে মুখ ফিরিয়ে নিলেন তিনি। সাইফুল জানালেন, গতবারের চেয়ে তরমুজের দাম বেশি। গতবার ১০০ টাকায় যে তরমুজ কিনেছি এবার সেই তরমুজ কিনতে ৩০০ টাকা লাগে।

তিনি বলেন, তরমুজ সাধারণত আমরা ছোটবেলা থেকে পিস হিসেবে কিনেছি। এখন কেজিদরে কিনতে হচ্ছে। অবশ্য, ৫০ টাকা কেজি তরমুজ থাকবে না। দাম কমে যাবে; আবার বলাও যায় না বাংলাদেশের কথা। কখন কিসের দাম বাড়ে আর কিসের দাম কমে কেউ জানেনা।

এই বাজারের তরমুজ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে তেমন লাভ হয় না। অল্প দাম থাকলে বিক্রি হয় বেশি। তখন লাভ হয়। সব জিনিসের দাম বাড়তি তাই তরমুজের দামও চড়া। কৃষকরা এই দাম পেয়ে খুশি।

পড়তে পারেন: দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে হলুদ তরমুজ, খুশি কৃষক

এই ব্যবসায়ী আরো জানান, চাঁদাবাজির কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। তাছাড়া ক্ষেত থেকে যে দামে কেন হয় তার থেকে ৫-১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করা যাবে। কিন্তু বেকায়দায় পড়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

ব্যবসায়ী মমিনুল হক জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে লেবুর দাম বাড়তি। ইফতারে সরবত করতে লেবুর চাহিদা বেড়ে যায়। ১০ টাকা হালির লেবুর দ্বিগুণ দামে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সব ধরনের কলার দাম বেড়েছে। এর মধ্যে চম্পা কলার দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। সবরি কলা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। শশার দাম বাজারে কম থাকলেও রমজানে বেড়ে যাবে। ৪০-৫০ টাকায় দাঁড়াতে পারে কিন্তু এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ