পোষা পাখি পালন ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নানামুখী সম্ভাবনা রয়েছে দেশীয় পাখি তিতির এর লাভজনক ব্যবসায়। এ পাখি পালন দেশি মুরগির চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক। তিতির দেখতে অনেকটা মুরগির মতো হলেও তিতির আসলে পাখি। তবে গ্রামাঞ্চলে একে চায়না বা চীনা মুরগি বলা হয়।

তিতির পাখির বাজার মূল্য দেশি হাঁস-মুরগির চেয়ে অনেক বেশি। তাই এটি প‍ালন দেশি মুরগির চেয়েও লাভজনক। ফলে তিতির পাখি পালন দারিদ্র বিমোচনে সহায়তা করতে পারে।এ বিষয়ে এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে এর সাথে আলাপকালে তিতিরের সম্ভাবনা নিয়ে পাবনা তিতির ও টার্কি ফার্মের স্বত্তাধীকারী মোঃশাহাদৎ শিমুল এসব তথ্য তুলে ধরেন।

প্রায় সাতশ’ বছর আগে বন-জঙ্গল থেকে গৃহপালিত পাখি হিসেবে পালিত হতে শুরু করে তিতির পাখি। আফ্রিকার এই পাখিটি ইংরেজদের হাত ধরে ইউরোপ থেকে ব্রিটিশ উপনিবেশ হয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আসে।

বর্তমানে ICUN তিতিরকে আশঙ্কাহীন বলে ঘোষণা করলেও বাংলাদেশে এরা প্রায় বিপন্ন হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

অত্যধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন এ পাখি পালনের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন ছাড়াও দেশে এর প্রজাতি সংরক্ষণে ভূমিকা রাখা সম্ভব বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষক ও পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস।

তিনি বলেন, গত ৩ দশক আগেও তিতির পাখিকে দেশের গ্রামাঞ্চলে দেশি মুরগির সঙ্গে ‍চলাফেরা করতে দেখা যেত। কিন্ত হঠাৎ করেই এই পাখি আর দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে এই পাখি গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে না থেকে ঢাকার কাটাবনে খাঁচায় দেখা যাচ্ছে। আর সেই খাঁচার প্রতিটি তিতির পাখি ১ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তাই গ্রামাঞ্চলে পালনের উদ্দেশে তিনি ২০১০ সাল থেকে বিশ্বিবিদ্যালয়ের পোল্ট্রি খামারে তিতির পাখি পালন, পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা করছেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্পের উদ্যোগে বিপন্নপ্রায় তিতির পাখি সংরক্ষণের এ উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

টানা ৬ বছর ধরে ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন ও তা পালনের সবগুলো ধাপ এই গবেষণা খামারে সম্পন্ন করেছেন অধ্যাপক ড. সুবাস। এরইমধ্যে দেশের সর্বত্র এই পাখি ছড়িয়ে দিতে বিনামূল্যে অনেককেই তিনি তিতির পাখি বিতরণ করেছেন।

এখন উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিতির পালন ছড়িয়ে দিতে কাজ শুরু করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে তিতির পালনের জন্য অনেক খামারি উৎসাহিত হচ্ছেন।

তিতির পালন সম্পর্কে অধ্যাপক সুবাস চন্দ্র দাস বলেন, দেশি মুরগির মতই এদের লালন-পালন করা যায়। তিতির পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য পাখির তুলনায় বেশি। সংক্রমণ বা পরজীবী সহজে আক্রান্ত করতে পারে না। আলাদা কোনো ভ্যাকসিন বা ওষুধও দিতে হয় না।

তিনি জানান, এমনকি তিতিরের সম্পূরক খাদ্যের চাহিদাও কম। প্রতিকূল পরিবেশে এরা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।

তিতিরের মাংস উৎপাদন সম্পর্কে অধ্যাপক সুবাস বলেন, দেশি মুরগি যেখানে ৬ মাসে সর্বোচ্চ ১ কেজি ওজনের হয় সেখানে তিতির পাখি দেড় কেজি বা তার বেশিও হয়ে থাকে।

তিতিরের ডিম সম্পর্কে তিনি বলেন, তিতিরের ডিমের খোসা অত্যন্ত শক্ত, শারীরিক বৃদ্ধির হার বেশ ভালো এবং মাংস অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হয়। একটি দেশি মুরগি বছরে ৫০-৬০টি ডিম দিলেও তিতির পাখি বছরে প্রায় ১০০- ১২০টি ডিম দেয়।

বাণিজ্যিক পোল্ট্রির দাপটে বিলুপ্তির মুখে পড়লেও ডিম আর মাংসের উৎপাদনে পোল্ট্রির চেয়েও তিতির পাখি পালনে অনেকে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস।