চাল রপ্তানিতে ১৫% প্রণোদনা

ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশে প্রায় গত দুই বছরে ভারত থেকে ২৪ লাখ টন চাল আমদানি করা হয়েছে। এই চাল আমদানিতে খরচ হয়েছে প্রায় প্রায় ৯৮ কোটি ৮৯ লাখ ডলার।

সম্প্রতি দি এশিয়া ফাউন্ডেশন ও বিআরআইইএফ কর্তৃক প্রকাশিত ‘দ্য পলিটিক্যাল ইকোনমি অব রাইস ট্রেড বিটুইন বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া অ্যান্ড নেপাল’শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।



এতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ২০ মাসে ভারত থেকে প্রায় ২৪ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে দেশে। এর সিংহভাগ নন-বাসমতী হলেও বাসমতী চালও রয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের অর্থবছরের হিসাবে ২০১৭-১৮ সময়ে দেশটি থেকে বাংলাদেশে চাল (বাসমতী ও নন-বাসমতী) রফতানি হয়েছে ২০ লাখ ৪২ হাজার ৫৮২ টন।

অন্যদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি হয়েছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ২৮১ টন। সব মিলিয়ে দুই অর্থবছরের ২০ মাসে ভারত থেকে বাংলাদেশে চাল এসেছে ২৩ লাখ ৮৮ হাজার ৮৬৩ টন। ১ এপ্রিল থেকে ভারতে নতুন অর্থবছর শুরু হয়।

চালের এ আমদানি বাংলাদেশের ধান-চালের বাজারেও প্রভাব ফেলছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।  তারা বলছেন, চাল আমদানি উন্মুক্ত রেখে কৃষকের উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ সাংঘর্ষিক।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, গত আমন মৌসুমে যখন বাম্পার ফলন হলো, তখনই উচিত ছিল চাল আমদানি বন্ধ কিংবা আরো উচ্চ শুল্কারোপ, সেটি করা হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা দেশে উৎপাদন কমে গেলে আমদানি শিথিল করা যেতে পারে। চলতি বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে।

আমনের পর বোরোতে পরপর দুই মৌসুম ভালো ফলনের কারণে চাল আমদানির ব্যাপারে এখনই কঠোর হতে হবে। তা না হলে কৃষক যে বোরো ধানের দাম পাচ্ছেন না তা আরো জটিল আকার ধারণ করবে। ভবিষ্যতে কৃষক চাল উৎপাদন থেকে সরে আসতে পারে। এতে হুমকিতে পড়তে পারে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা।

দুই বছরে ভারত থেকে ২৪ লাখ টন চাল আমদানি এ পরিমাণটাকে খাটো করে দেখার সুযোগও নেই বলে তারা মনে করছেন।

ব্যবসায়ীর কারসাজি বন্ধ, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও চালের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ২০১৫ সালের শেষ দিকে শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এর সঙ্গে রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) যোগ হয় ৩ শতাংশ।

ফলে চাল আমদানিতে সব মিলিয়ে ২৮ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। এর প্রভাবে পরের প্রায় দেড় বছর ধরে চাল আমদানি এক রকম বন্ধ ছিল, কিন্তু ২০১৭ সালের মে মাসে পাহাড়ি ঢলের কারণে হাওড় অঞ্চলে সৃষ্ট আগাম বন্যায় ফসলহানির পর সরকার চালের আমদানি শুল্ক উঠিয়ে দেয়। এছাড়া বাকিতে চাল আমদানির সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়।

এ কারণে ব্যাপকভাবে চাল আমদানি শুরু হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে প্রায় ৩৯ লাখ ৯৩ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়। অবস্থানগত কারণে আমদানির সিংহভাগই হয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। গত বছরের শেষ দিকে সরকার চাল আমদানিতে ২৮ শতাংশ শুল্ক পুনর্বহাল করে।



এতে চাল আমদানি কমলেও বন্ধ হয়নি। যদিও হাওড়ের বন্যায় চালের ঘাটতি ১০ লাখ টন হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়। কিন্তু গত দুই বছরে দেশে ৫৫ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছর আমদানি হয় ১৩ লাখ ৩০ হাজার এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছর প্রায় ৪০ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে মোট আমদানি দুই লাখ টন হলেও এখনো পাইপলাইনে ৩ লাখ ৮০ হাজার টন চাল রয়েছে।

আরও পড়ুন: কী হয়েছিলো সেদিন ক্ষেতে আগুন দেয়া কৃষক আব্দুল মালেকের

সম্প্রতি এক সেমিনারে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকও চাল আমদানিকে অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন। বাড়তি আমদানি, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছে মজুদ থাকা এবং উদ্বৃত্ত উৎপাদন ধানের দাম নিয়ে সংকটকে জটিল করছে বলে মত দেন তিনি। সূত্র: বণিক বার্তা।