দুধে হেভী মেটাল সনাক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দুধে হেভী মেটাল সনাক্ত হলেই খাওয়া যাবে না এটা ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এর ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষকেরা।

তারা বলছেন, হেভী মেটাল অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিন্তু দেখতে হবে দুধে এর উপস্থিতির পরিমান সহনীয় পর্যায়ে কি না? হেভী মেটাল সনাক্ত হলেই দুধ খাওয়া যাবে না এটা ঠিক নয় কারণ এর ও একটি গ্রহণীয় মাত্রা রয়েছে।



গবেষকদলের পর্যালোচনা নিচে তুলে ধরা হলো:

পুষ্টি গুণের কারণেই দুধকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও আদর্শ খাদ্য হিসেবে অভিহিত করা হলেও নানাবিধ হেভী মেটাল যেমনঃ সীসা, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক এবং মার্কারি ইত্যাদি  দিয়ে দূষিত দুধ স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

অপরিশোধিত নর্দমার ময়লা পানি ও কলকারখানার বর্জ্যরে প্রবাহ সেচ হিসেবে ঘাসের জমিতে ব্যবহার করার কারণে প্রতিনিয়ত হেভী মেটালস গুলির মাত্রা খাদ্যদ্রব্যে বেড়েই চলছে।

যদি গাভীর খামার ও ঘাস উৎপাদনের জমি শিল্পকারখানার আশেপাশে হয় তাহলে ঐ গাভীর দুধে হেভী মেটাল আসতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রামীণ এলাকার চেয়ে শিল্পকারখানা আশেপাশের এলাকার দুধে অধিক হেভী মেটাল থাকে।

গোয়ালা কিংবা অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক দুধের মধ্যে খালের ও ডোবার দূষিত পানি মিশিয়ে দুধের পরিমান বৃদ্ধির সময় হেভী মেটাল দ্বারা দুধ দূষিত হতে পারে। আবার পশু খাদ্যে ট্যানারী বর্জ্য ইত্যাদি ব্যবহারের ফলেও দুধ দূষনের শিকার হতে পারে।

পৃথিবীর অনেক দেশের ন্যায় বাংলাদেশের তরল দুধেও হেভী মেটালের উপস্থিতি পেয়েছেন বলে গবেষকরা গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন।

হেভী মেটাল অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিন্তু দেখতে হবে দুধে এর উপস্থিতির পরিমান সহনীয় পর্যায়ে কি না? হেভী মেটাল সনাক্ত হলেই দুধ খাওয়া যাবে না এটা ঠিক নয় কারণ এর ও একটি গ্রহণীয় মাত্রা রয়েছে।

সুতরাং গবেষকদের উচিত কি পরিমান হেভী মেটাল পেলেন, কি ধরণের দুধ থেকে এবং কখন কিভাবে নমুনা নিয়েছেন সবকিছু উল্লেখ করা, এবং তাদের প্রাপ্ত হেভী মেটাল কোন মানদন্ডে খারাপ সেটাও উল্লেখ করতে হবে।

অন্যথায়, সাধারণ মানূষ আতংকিত হবে, দুধ খাওয়া কমিয়ে দিবে এবং দুগ্ধশিল্প হুমকিতে পরবে। বর্তমানে তা-ই হচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশের তরল দুধে হেভী মেটালের উপস্থিতি ভোক্তাদের মাঝে দুধ গ্রহণে অনীহা ও ভীতি সৃষ্টি করেছে যা মেধাবী জাতি গঠনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।

অন্যদিকে মানব স্বাস্থ্য, ডেয়রি খামারী ও এ দেশের দুগ্ধ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য দরকার হেভী মেটাল সর্ম্পকে সঠিক তথ্য, দেশব্যাপী দুধে হেভি মেটাল্সের উপস্থিতি পরীক্ষাকরণ, এদের স্ট্যাটাস ও আন্তজার্তিক পরিমন্ডলে আদর্শ মানের সাথে তুলনাকরণ।

ডেয়রি খামারী, ডেয়রি শিল্প কারখানা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে দরকার যথাযথ উপায়ে দেশব্যাপী নমুনা সংগ্রহ, আন্তজার্তিক পদ্ধতিতে গবেষণা এবং জনগণের মাঝে ফলাফল প্রকাশ ও করণীয় নির্ধারণ করা।

এভাবেই ভোক্তা পর্যন্ত গবেষণালবদ্ধ ফলাফল প্রকাশ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিই পারবে তরল দুধের উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ ও ডেয়রি শিল্পের প্রসার ঘটাতে।

বর্তমান সময়ে যারা দুধের উপর গবেষণা করে অতি অল্প সংখ্যক নমুনা বিশ্লেষণ করে যেভাবে দুধে হেভী মেটাল ও এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাদের উচিত ছিল সারা দেশ হতে বিভিন্ন ধরণের প্রতিনিধিত্বকারী নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেয়া। ফলাফলের সঠিকভাবে ব্যাখা  না থাকায় মানুষের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দের সৃষ্টি হযেছে-যা আমাদের কাম্য নয়।

দুধে হেভী মেটাল সনাক্ত হলেই খাওয়া যাবে না এটা ঠিক নয় সংবাদটির পাশপাশি গবেষকদলের দুধ নিয়ে আরও গবেষণা এবং পর্যালোচনা রয়েছে সেগুলো ধারাবাহিকভাবে এগ্রিকেয়ার২৪.কম এ প্রকাশ করা হবে।

গবেষক দলে ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ নুরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-অর-রশিদ, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোহেল রানা সিদ্দিকী, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম, সহকারী প্রফেসর মোঃ আবিদ হাসান সরকার, লেকচারার মোঃ সাদাকাতুল বারি এবং লেকচারার মোঃ রেজওয়ানুল হাবীব।