অর্থ বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। বাজারে পণ্যটির সরবরাহও বড়েছে। এতে দামও কমেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির।

প্রায় এক মাস ধরে হিলি স্থলবন্দরের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কেজি ১০ টাকার আশপাশে রয়েছে। সরবরাহ বেশি থাকার ফলে ভারতের বাজারেও পেঁয়াজের দাম কমতির দিকে রয়েছে।

এর পরও দেশীয় আমদানিকারকরা পণ্যটির আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। এর পেছনে দাম না পাওয়ায় আর্থিক লোকসানের আশঙ্কাকে চিহ্নিত করেন হিলির ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা।

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়। বর্তমানে স্থানীয় পাইকারি বাজারে (ট্রাকসেল) আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ১০-১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস ধরেই হিলিতে আমদানি করা পেঁয়াজের এ দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

হিলি স্থলবন্দর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ইন্দোর, হুগলি ও গুজরাট থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। এর মধ্যে ইন্দোর থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ১০-১১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হুগলির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২-১৩ টাকায়।

আর গুজরাট থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ১১-১২ টাকা। চলতি বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১৭-২১ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। তবে দরপতনের পর এক মাস ধরে পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি ১০-১৩ টাকার আশপাশে অপরিবর্তিত রয়েছে।

পাইকারির পাশাপাশি স্থানীয় খুচরা বাজারেও কমতির দিকে রয়েছে পেঁয়াজের দাম। সম্প্রতি বাংলাহিলি বাজার ঘুরে ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারির তুলনায় সামান্য বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা যায়।

তবে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশি ছিল। খুচরা বাজারে পণ্যটি কেজিপ্রতি ১৫-১৮ টাকায় বিক্রি হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশ ও ভারত— দুই দেশের বাজারেই নতুন মৌসুমের পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে গেছে। বাড়তি সরবরাহের কারণে পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতে দাম কম থাকলে দেশীয় আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি বাড়িয়ে দেন। পরে দাম বেড়ে গেলে আমদানি করা এসব পেঁয়াজ বিক্রি করে অধিক মুনাফা করেন।

তবে এবার ভারতে দাম কম থাকলেও পেঁয়াজ আমদানি বাড়েনি। কারণ দেশের বাজারে দাম পড়তে থাকায় লোকসানের আশঙ্কা থেকে আমদানিকারকরা অতিরিক্ত পেঁয়াজ আমদানিতে সাহস পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন হিলির পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

হিলি স্থলবন্দর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ে এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন ৪৫-৫০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়। বর্তমানে এর পরিমাণ ১৫-২০ ট্রাকে নেমে এসেছে। চলতি মাসের শেষে দেশে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এ সময় সাপ্তাহিক ছুটি, নির্বাচন ও বার্ষিক ক্লোজিং মিলিয়ে টানা চারদিন ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধ থাকার কারণে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে নতুন এলসি খোলার সুযোগ থাকবে না। ফলে পেঁয়াজ আমদানি আরো কমে আসতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন হারুন উর রশীদ হারুন। বণিক বার্তার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের মান তুলনামূলক ভালো। মৌসুমের শুরুতে পণ্যটির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ বেশি কিনছেন। এ কারণে পাইকারি ও খুচরা— উভয় বাজারেই আমদানি করা পেঁয়াজের চাহিদা কমে গেছে।

চাহিদা না থাকায় দামও কমে গেছে। লোকসানের আশঙ্কা থেকে আগামী দিনগুলোয় আমদানি আরো কমে গেলে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তবে বাড়তি সরবরাহের বিপরীতে চাহিদা না বাড়লে পেঁয়াজের দামে বিদ্যমান মন্দাভাব আরো দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার জোরালো আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র: বণিক বার্তা।