ভেড়ার পশম সম্ভাবনাময় সম্পদ

ডা. নন্দ দুলাল টীকাদার, উপজেলা লাইভস্টক অফিসার, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ভেড়ার পশম সম্ভাবনাময় সম্পদ, জিডিপিতে যোগ হতে পারে শত কোটি টাকা। বাস্তবিকভাবেই এর সত্যতা নিচে তুলে ধরা হলো। আসুন মিলিয়ে নেই।



বাংলাদেশে বর্তমানে ভেড়ার সংখ্যা ৩৪ লাখ ৬৮ হাজার। দেশি ভেড়ার পাশাপাশি বাড়ছে উন্নত জাতের গাড়ল পালন। আমাদের দেশে ভেড়ার পশমের কোন বানিজ্যিক ব্যবহার নাই বিধায় এই খাতে খামারিদের কোন আয় হয়না।

১টি দেশি ভেড়া থেকে একবারে পাওয়া যায় ২০০ গ্রাম পশম। গাড়ল থেকে পাওয়া যায় ৪০০ গ্রাম।

২০০ গ্রাম পশম পানি দিয়ে উত্তমরুপে পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকিয়ে পাওয়া যায় ১০০ গ্রাম পরিশুদ্ধ পশম। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় বছরে ৩ বার ভেড়ার পশম সংগ্রহ করা যায়। অর্থাৎ ১টি দেশি ভেড়া থেকে বছরে ৩০০ গ্রাম পরিশুদ্ধ পশম আহরণ করা সম্ভব।

৪.৫ হাত x ২.৫ হাত একটি কম্বল তৈরি করতে ২ কেজি পশমের দরকার হয়।

সম্প্রতি (এপ্রিল মাসে) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার নয়াগোলা গ্রামের ৬২ বছর বয়সী মো. আ. খালেকের সাথে আলাপ হয়। তিনি বংশ পরম্পরায় পশম দিয়ে কম্বল, মাফলার, পাপোশ, জায়নামাজ ও পূজার আসন তৈরি করে আসছেন।

খালেক জানান যে, তিনি ৪.৫ হাত x ২.৫ হাত মাপের প্রতিটি কম্বল আড়ং, অরন্য এবং হ্যান্ড টাচের নিকট পাইকারি ২ হাজার ১৫০ টাকা দামে বিক্রি করেন।

এবার আমরা একটু হিসাব নিকাশ করে দেখি:

বাংলাদেশের বার্ষিক মোট সম্ভাব্য পরিশুদ্ধ পশম উৎপাদন = ৩৪ লাখ ৬৮ হাজার x ০.৩ কেজি= ১০ লাখ ৪০ হাজার ৪০০ কেজি। যা দিয়ে ৫ লাখ ২০ হাজার ২০০টি কম্বল তৈরি হতে পারে।



প্রতিটি কম্বল ২ হাজার টাকা দরে বিক্রিতে বার্ষিক সম্ভাব্য মোট আয় ১০৪ কোটি ৪ লাখ টাকা।

অর্থাৎ আমাদের দেশি ভেড়া থেকে আহরণযোগ্য পশম পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করতে পারলে বছরে এই অপ্রচলিত খাত থেকে শত কোটি টাকার উপরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপিতে) যোগ হতে পারে।

এর অর্থনৈতিক অবদান আরও অনেক বেশি হবে। গাড়লের পশম হিসাব করলে অবদান আরও বেশি হবে। তাই ভেড়ার পশম সম্ভাবনাময় সম্পদ, জিডিপিতে যোগ হতে পারে শত কোটি টাকা। এটিকে গুরুত্ব দেয়ার সময় এসেছে।

আরও পড়ুন: গরমকালে মুরগি, পশু পালনে সমস্যা ও তার প্রতিকার