মোট ইটভাটার ৫০ ভাগই অবৈধ!

এগ্রিকেয়ার প্রতিবেদক: অধিকাংশ ইট ভাটার মালিক পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ছাড়া ইট তৈরি করছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য এবং পবার মাঠ পর্যায়ের তথ্য মতে ড্রাম চিমনির ভাটাসহ দেশে বর্তমানে ইটভাটার সংখ্যা প্রায় ৯৭০০টি যার প্রায় ৫০ ভাগই অবৈধ।

রাজধানীর পবা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘ইটভাটার দূষণ : হুমকিতে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে জানানো হয়, ইটভাটায় আধুনিক প্রযুক্তির পরিবর্তে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ড্রাম চিমনি ও ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনির ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে।

বেশির ভাগ ইটাভাটাই নিয়মবহির্ভূতভাবে স্থাপন করা হয়েছে লোকালয় তথা মানুষের বসতবাড়ি, গ্রাম-গঞ্জ, শহর বন্দরের নিকটে, কৃষি জমিতে, নদীর তীরে, পাহাড়ের পাদদেশে। ইটভাটাগুলো থেকে নির্গত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া। যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে  ইটভাটা সৃষ্ট দূষণে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এছাড়া কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত নানা রোগ দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি ধুলা-ময়লা উড়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। ইটভাটাসৃষ্ট দূষণ পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি উৎপাদন ও ফল-মূলের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত এবং গাছপালার স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করছে।

সংবাদ সম্মেলনে পবা’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবা’র সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান। উপস্থিত ছিলেন মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসানাত, পবা’র সম্পাদক সৈয়দ মাহাবুবুল আলম তাহিন, সহ-সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজীজ, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-এর প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমানসহ অনেকে।

মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, শিল্পকারখানা স্থাপন, আবাসিক ভবন নির্মাণ, নদী ভাঙ্গনের ফলে প্রতি বছর গড়ে দেশের কৃষি জমির এক শতাংশ হ্রাস পাচ্ছে। তিন ফসলি জমির উপর গড়ে উঠছে অসংখ্য ইটভাটা। আবার তিন ফসলি জমির উর্বর ও সারযুক্ত টপসয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটেই তৈরী করা হচ্ছে ইট।

ইটভাটায় জ্বালানী কাঠ ব্যবহার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও ড্রাম চিমনিবিশিষ্ট ভাটায় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্যান্য ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে জ্বালানি কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। ঘটছে পরিবেশ বিপর্যয় ও কমছে বনাঞ্চল।

গত ২০০১ সাল থেকে ড্রাম চিমনিবিশিষ্ট ইটভাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলেও তা অবাধে ব্যবহার হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত ইটভাটার সংখ্যা ৬৭৭০টি। এর মধ্যে ৪১০৮টি জিগজাগ বা উন্নত জিগজাগ, ২৫৪১টি ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনি ভাটা এবং ১২১টি এইচএইচকে ও টানেল ভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য এবং পবার মাঠ পর্যায়ের তথ্য মতে দেশে বর্তমানে ইটভাটার সংখ্যা প্রায় ৯৭০০টি। এর মধ্যে প্রায় ১৮০০টির অধিক ড্রাম চিমনিবিশিষ্ট ইটভাটা, ৪৭০০টি জিগজাগ বা উন্নত জিগজাগ, ৩০৭৫টি ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনি ভাটা এবং ১২৫টি এইচএইচকে ও টানেল ভাটা। ৪৮২৫টি ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র বা জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স রয়েছে, যা মোট ভাটার ৫০% বা ড্রাম চিমনিবিশিষ্ট ইটভাটা ছাড়া ভাটাসমূহের ৬১%। এসব ইটভাটায় ২৭ লাখ ৬৩ হাজার টন কাঠ এবং ৬৭,১৫,০০০ টন কয়লা পোড়ানো হয়।

১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং ২০১৩ সনের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী ইটভাটার দূষণরোধের মূল দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের উপর ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরকে আইন দুটি এনফোর্স করতে দেখা যাচ্ছে না। অধিদপ্তর শুধুমাত্র সচেতনতামূলক কার্যক্রম (মিটিং, সেমিনার, ওর্য়াকশপ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রোনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচার) করে যাচ্ছে।

নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসাবে আইন দুটি প্রয়োগ না করে শুধুমাত্র সচেতনামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ইটভাটার দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ইটভাটার দূষণরোধে পরিবেশ অধিদপ্তর আইন দুটি যথাযথবাবে এনফোর্স করবে এটাই জনগণের প্রত্যাশা। সংবাদ সম্মেলনে একাধিক সুপারিশও তুলে ধরা হয়।