রবি ফসলের রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে যা করতে হবে

এগ্রিকেয়ার ডেস্ক: রবি মৌসুমে আগাম বৃষ্টিপাত, অতিরিক্ত কুয়াশা ইত্যাদি রবি ফসল চাষের প্রধান অন্তরায়। বৃষ্টিপাত এবং কুয়াশা ফসলের রোগবালাই এর সংক্রমণ ও বিস্তারের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ বছর ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে এবং ডিসেম্বরের শুরু থেকেই প্রচুর কুয়াশার কারণে রবি ফসলের রোগবালাই বিশেষ করে মাটিবাহিত রোগের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে দ্রুত নালা কেটে মাঠ থেকে পানি বের করে দিতে হবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব নিড়ানি দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে। ব্যাপক ফসলহানি এড়াতে এই পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে।

ফসলের নাম– পেঁয়াজ ও রসুন।

রোগের নাম– পার্পল ব্লচ এবং স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট রোগ।

যা করতে হবে– জমিতে রোগ দেখা দিলে রুভরাল ৫০ ডবিউ পি প্রতিলিটার পানিতে ২ গ্রাম ও এ্যামিস্টার টপ প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর পর্যায়ক্রমে (১ম সপ্তাহে রোভরাল, ২য় সপ্তাহে এ্যামিস্টার টপ, ৩য় সপ্তাহে রোভরাল, ৪র্থ সপ্তাহে এ্যামিস্টার টপ) ৩-৪ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।

কান্ড/কন্দ পঁচা রোগ জমিতে রোগ দেখা দিলে ব্যভিস্টিন অথবা প্রোভেক্স প্রতিলিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছের গোড়ায় মাটিতে স্প্রে করতে হবে।

ফসলের নাম– ধনিয়া, মেথী, কালোজিরা, সলুক ইত্যাদি মাইনর মসলা ফসল।

রোগের নাম– গোড়া পঁচা/ঢলে পড়া রোগ।

যা করতে হবে– অটোস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় মাটিতে ৭ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।

আলু গোড়া পঁচা রোগ– বীজ আলু যদি বপন অবস্থায় মাটির নিচে থাকে তাহলে জরুরিভাবে নালায় জমা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। বীজ আলু গজিয়ে যদি সদ্য চারা হয় আথবা চারার বয়স যদি ১০ থেকে ১৫ দিন হয় এ ক্ষেত্রেও জরুরীভাবে নালায় জমা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

চারায় গোড়া পঁচা রোগের আক্রমণ হলে ব্যাভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে গাছের গোড়ার মাটি ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। নিম্ন তাপমাত্রা, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া ও বৃষ্টির পূর্বাভাস পাওয়ার সাথে সাথে রোগ প্রতিরাধের জন্য ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর ম্যানকোজেব গোত্রের ছত্রাকনাশক যেমন- ডাইথেন এম-৪৫/ইন্ডোফিল/  হেম্যানকোজেব/ ফরমোকোজেব ৮০ ডব্লিওপি/ মাইকোজেব ৮০ ডব্লিওপি ইত্যাদি প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে পাতার উপরে ও নিচে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

ফসলের নাম– সরিষা।

রোগের নাম– পাতা ঝলসানো রোগ, বৃষ্টিতে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে রোভরাল-৫০ ডবি- উপি ০.২% হারে (প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম) পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পরপর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।

গোঁড়া পঁচা রোগ জমিতে রোগ দেখা দিলে অটোস্টিন অথবা প্রোভেক্স প্রতিলিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছের গোড়ায় মাটিতে স্প্রে করতে হবে।

কান্ড পঁচা রোগ এ রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে রোভরাল ৫০ ডবি- উ পি শতকরা ০.২ ভাগ হারে (প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম ছত্রাক নাশক) পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর ৩ বার সমস্ত গাছে ছিটিয়ে প্রয়োগ করলে এ রোগ থেকে ফসলকে অনেকাংশে রক্ষা করা সম্ভব।

ডাল ফসল মসুর ও ছোলার গোড়া পঁচা রোগ জমিতে রোগ দেখা দিলে অটোস্টিন অথবা প্রোভেক্স প্রতিলিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছের গোড়ায় মাটিতে স্প্রে করতে হবে। গম ফসল গোড়া পঁচা রোগ জমিতে রোগ দেখা দিলে অটোস্টিন অথবা প্রোভেক্স প্রতিলিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছের গোড়ায় মাটিতে স্প্রে করতে হবে।

সবজি ফসল

রবি ফসলের রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে যা করতে হবে

ক) টমেটো/বেগুন/বাঁধাকপি/ফুলকপি /গাজর/ মুলা। চারা ঢলে পড়া বা ড্যাম্পিং অফ রোগ-জমিতে এ রোগ দেখা দিলে 

রিডোমিল গোল্ড এবং ম্যানকোজেব গ্রুপ এর ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।

খ) টমেটো/বেগুন ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট রোগ। মাঠের পানি দ্রুত সুনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। ঢলে পড়া গাছ মাঠ থেকে সংগ্রহ করে দ্রুত ধ্বংস করতে হবে।

গ) টমেটো নাবী ধ্বসা বা লেট বাইট রোগ । মাঠের পানি দ্রুত সুনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। রিডোমিল গোল্ড ছত্রাক নাশক ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।

ঘ) বাঁধাকপি/ফুলকপি- গোড়া পঁচা রোগ – মাঠের পানি দ্রুত সুনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যাভিস্টিন (কারবেনডাজীম গ্রুপ) ছত্রাক নাশক ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।

ঙ) লাউ গোড়া পঁচা রোগ – মাঠের পানি দ্রুত সুনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। গোড়ায় ব্যাভিস্টিন ছত্রাকনাশক ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গোড়ায় মাটিতে স্প্রে করতে হবে।  আক্রান্ত কান্ডে পরিমিত মাত্রায় বর্দোপেস্ট ব্যবহার করতে হবে।

চ) গাজর/মুলা গোড়া পঁচা রোগ। মাঠের পানি দ্রুত সুনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। সিকিউর অথবা রিডোমিল গোল্ড ছত্রাক নাশক ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করতে হবে।

ছ) শিম/ঝাড় শিম অ্যানথ্রাক্নোজ এবং ক্লেরোটিনিয়া ফুল এবং ফল পঁচা রোগ জমিতে এ রোগ দেখা দিলে কনটাফ ৫ ইসি ছত্রাকনাশক ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।