আন্তর্জাতিক কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মার্কিন রফতানিকারকরা টানা তৃতীয় বছর ভুট্টা ও সয়াবিন অতিরিক্ত দামে কিনেছে। কিন্তু সম্প্রতি এ দুটি পণ্যের দাম এমন নাগালের বাইরে তাই ক্রেতারা তা কেনাই বন্ধ করে দিয়েছে।

বৈশ্বিক বিপুল চাহিদার প্রেক্ষাপটে করোনাকোলে দাম বাড়ে এ দুটি পণ্যের। তবে, সেই থেকে দাম কমেনি। বর্তমানে অতিরিক্ত দামে কিনতে রাজী নয় ক্রেতারা। এমনই খবর প্রকাশ করেছে রয়টার্স।

৭ জুলাই শেষ হওয়া সপ্তাহে টানা তৃতীয় সপ্তাহের মতো নিট সয়াবিন রফতানি ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। বাতিল ও পুনরায় বিক্রি সমঝোতা বছরের এ সময়ে খুব সাধারণ ঘটনা। রফতানি ছয় লাখ টনের বেশি হারানো অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি।

পড়তে পারেন: সয়াবিন তেলের দাম কমলো ৬ টাকা

২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন রফতানি হয়েছে ৫ কোটি ৯৫ লাখ টন, যা সরকারের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মাত্র চার লাখ টন (দেড় কোটি বুশেল) বেশি। সাম্প্রতিক ক্রয়াদেশ বাতিল প্রবণতা আমলে নিলে এটা বেশ আশঙ্কাজনক।

গত সপ্তাহে ২০২২-২৩ অর্থবছরের মার্কিন সয়াবিন রফতানি লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)। সয়াবিন রফতানির আগের লক্ষ্যমাত্রার ৬ কোটি ৫০ লাখ বুশেল কমিয়ে ২১৩ কোটি বুশেল রফতানির নতুন লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে, যা তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল নীতি চলতি বছর বিশ্ববাজারে বেশ বড়সড় প্রভাব ফেলেছে। তাতে যেমন পণ্যটির সহজলভ্যতা প্রভাবিত হয়েছে, তেমনই প্রভাব পড়েছে দামেও। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রফতানি নিষেধাজ্ঞা বাতিল এবং রফতানি ত্বরান্বিতকরণ কর্মসূচির বাস্তবায়নই আমদানিকারক দেশগুলোকে পাম অয়েলের দামের তীব্র হ্রাসের মুখোমুখি ফেলেছে।

সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাজারের বাধাগুলো কমে আসা এবং সম্মিলিত রফতানি কর ও শুল্ক কমে আসা এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। দেশটি এখন বিশ্ববাজারের জন্য আরো বেশি বেশি পাম তেল সহজলভ্য করে তুলছে। ফলে চলতি বছর পাম অয়েলের দাম সবচেয়ে নিচে নেমে যায়।

পড়তে পারেন: বিশ্ববাজারে কমলো দাম, দেশে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন

উদ্ভিজ্জ তেলের গত বছরের বাজার বিশ্লেষণ করে ইউএসডিএ বলছে, এ তেলের বাজার বেশকিছু কারণে কঠিন অবস্থায় রয়েছে। তার মধ্যে কানাডায় রেপসিড শস্যের ফলন কম হওয়া, যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন তেলের বেশি বেশি ব্যবহার এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শীর্ষ রফতানিকারকদের কাছ থেকে সূর্যমুখীর তেল প্রাপ্তি স্থগিত হয়ে যাওয়া এর কারণ।

যেহেতু অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তেলের সহজলভ্যতা কমে গেছে। কিছু আমদানিকারক তখন পাম তেল আমদানির দিকে ঝুঁকে পড়ে। তাতেই দাম বেড়ে যায় এ তেলের। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক সংকট এবং মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বেশি বেশি জৈব জ্বালানির পোড়ানোর কারণেও এর আগেই বেড়েছিল পাম অয়েলের দাম। তারপর গত এপ্রিলে পাম অয়েল রফতানিতে ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় এসব সংকট আরো ঘনীভূত হয়। কারণ বৈশ্বিক সরবরাহের অর্ধেকই পাওয়া যায় ইন্দোনেশিয়া থেকে।

চলতি মৌসুমে বিশ্বব্যাপী তেলের বীজ উৎপাদনের পূর্বাভাস করা হয়েছে ৬৪৩ দশমিক শূন্য ৭ মিলিয়ন টন, যেখানে গত মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ৬০০ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন টন। ইউএসডিএর পূর্বাভাস বলছে, চলতি মৌসুমে সূর্যমুখীর বীজের উৎপাদন কিছুটা কমে আসবে। যদিও বিশ্বব্যাপী উদ্ভিজ্জ তেল যেমন সয়াবিন তেল, রেপসিড তেল ও সূর্যমুখীর তেলের উৎপাদন বাড়বে বলেই পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।