অধিক লাভজনক বিটরুট চাষে

এম. আব্দুল বাতেন, গোদাগাড়ী প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রোগ বালাই কম ও কম খরচে অধিক লাভজনক বিটরুট চাষে সফল বরেন্দ্রের শিক্ষার্থী ইউসুফ এখন বরেন্দ্র অঞ্চলে নতুন দিগন্ত শুরু করেছেন।

শিক্ষার্থী ইউসুফ আলীর বাবা পেশায় কৃষক হওয়ায় কৃষি পেশার ওপর রয়েছে অগাধ সম্মান ও ভালোলাগা। আর এই ভালোলাগা থেকে রাজশাহী অঞ্চলে প্রথম বারের মত বিটরুট চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের যৌবন লাইনপাড়া গ্রামের কৃষক সোলাইমান আলীর ছেলে ইউসুফ আলী (২৪) রোগ বালাইকম, অল্প খরচে বেশী লাভ আর বাজারে এর চাহিদা থাকায় সফলতার মুখ দেখতে চলেছেন।

রাজশাহী বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী ইউসুফ এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, বিটরুট অতীতে রাজশাহী অঞ্চলে চাষাবাদ হয় নি। পুষ্টিগুণ আর এলাকায় ধারণা দিতে মূলত তিনি সবজি জাতীয় ফসল বিটরুট চাষ করেছেন।

পরিচিত এক ভাইয়ের কাছ হতে ভারত হতে বীজ এনে তিনবিঘা বিটরুট চাষ করেছেন তরুণ ইউসুফ আলী। তিনি পড়াশোনার ফাঁকে সপ্তাহে শুক্রবার ছুটি পেয়ে বাড়িতে ছুটে এসে ফসলটি চাষে পরিশ্রমে নেমে পড়েন।

বিটরুপ চাষ বিষয়ে ইউসুফ আলী জানান, ১ কেজি বীজ ও সার মিলিয়ে ৬ হাজার টাকা, লেবার ও পানি খরচ ১০ হাজার টাকা সবমিলিয়ে বিঘাপ্রতি ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বেলে, দো-আঁশ জাতীয় উর্বর মাটিতে চাষ করলে সার কম লাগে এবং এই গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী হওয়ায় খরচ অনেকটাই কম।

অধিক লাভজনক বিটরুট চাষে ২তরুণ এ শিক্ষার্থী বলেন, বিটরুট ফলটি ডিসেম্বর মাসের শুরুতে রোপন করার উপয্ক্তু সময় এবং তা উঠতে প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ দিন সময় লাগে। মার্চের শেষে ফসলটি সংগ্রহ করতে করে বাজারে বিক্রি করার উপযুক্ত সময়। এটি সুস্বাদু হওয়ায় খালি মুখে, ভাজি ও স্যুপ করে খাওয়া যায়।

রাজশাহী অঞ্চলে ফসলটির চাহিদা সম্পর্কে এ তরুণ জানান, রাজশাহী অঞ্চলে এ ফসলটির চাষাবাদ ও প্রচলন থাকায় চাহিদা অনেকাংশই কম। এক্ষেত্রে বাজারজাত করতে হয়তো প্রথমে হিমশিম খেতে হতে পারে।

বর্তমানে বিটরুট এর ফলের মৌসুম হওয়ায় বাজার মূল্য কেজিতে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। তবে অন্য সময়ে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে।

ফলন ও খরচ বিষয়ে তিনি আরও জানান, মোট ৩ বিঘা জমিতে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে জমিতে খরচের তিনগুণ আয় করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। সব খরচ বাদ দিয়ে দেড় হতে দুই লাখ টাকা মুনাফা হবে বলে এবার তিনি মনে করছেন।

বিটরুট খাওয়ার বিষয়ে ইউসুফ আলী এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, খাবার হিসেবে বড় বড় সুপার শপ, রেষ্টুরেন্ট, চাইনিজ হোটেল গুলোতে স্যুপ, জুসসহ বিভিন্ন রেসিপি হিসেবে বিক্রয় হয়। ফলটির পুষ্টিগুণ অনেক ও ভিটামিন এ প্রচুর পরিমানে আছে। উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের মহাঔষুধ হিসেবেও ফলটি খুবই কার্যকর।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি উপ-সহকারি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে এ বিষয়ে বলেন, বিটরুট চাষ গোদাগাড়ীর মাটি ও আবহাওয়া জন্য উপযুক্ত। ফসলটি বেশি করে চাষের জন্য এলাকার কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

স্থানীয় ভাবে বাজারজাত করণের বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস হতে পরিচালিত সিসিএমসি বাজার কমিটি সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় ভাবে এবং বাইরে বিটরুটের বাজার ধরতে চেষ্টা অব্যহত আছে।

বিটরুট চাষের সর্বিক বিষয়ে উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার জানান, বিটরুটের রোগ বালাই কম, তেমন যতœ না নিলেও ফলে। পুষ্টগুণ সমৃদ্ধ ও মাটির নিচের ফল হওয়াতে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ, ভিটামিন এ  আছে। ফলটি ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও সালাত হিসেবে খেতে ভালো যোগ করেন এ কৃষি কর্মকর্তা।

অধিক লাভজনক বিটরুট চাষে সফল বরেন্দ্রের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলীর প্রতি এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর পক্ষ থেকে শুভ কামনা ও অভিনন্দন।

আরও পড়ুন: কৃষিতে সিআইপি’র মতো এআইপি’র আবেদন শুরু, যেভাবে করবেন