সজিব ইসলাম, চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি: হাঁকডাক আর গ্রাহকের তেমন উপস্থিতি না থাকলেও বেড়েছে রাজশাহীর চারঘাট-বাঘার আড়ত গুলোতে কর্মতৎপরতা।ফলে অনলাইনে জমে উঠেছে আমের বেচা-কেনা।

এখন ফোনকল ও মেসেজের মাধ্যমে চলছে চারঘাটের সুস্বাদু আমের বেচাকেনা। আমের বেচাকেনার জন্য হাট হিসেবে এখন ব্যবহার হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটারের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপ।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউন, আম দেরিতে পরিপক্ক হওয়া ও ক্রেতা সমাগম কম থাকায় এ বছর গাছ চুক্তিতে আমের বেচাকেনা কম হয়েছে। তীব্র তাপদাহের কারণে আমের ক্ষতিও হয়েছে বড় ধরনের। এরপরও থেমে নেই রাজশাহী অঞ্চলের আমের বাজার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর আমের ভালো দাম পাচ্ছেন তারা। করোনার কারণে হাটে ক্রেতার উপস্থিতি কম হলেও এবার অনলাইনে আমের অর্ডার বেশি। এভাবে বেচাকেনা চললে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনা সংক্রমণের মাঝেও আমের ভালো দাম নিশ্চিতে বড় ভূমিকা রাখছে অনলাইন এই মার্কেটপ্লেস। এতে শঙ্কার মাঝেই হাসি ফুটেছে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের মুখে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাজশাহীর চারঘাট-বাঘা অঞ্চলের অনেক তরুণ উদ্যোক্তা অনলাইনের মাধ্যমে আম বিক্রি শুরু করেছেন। যার ফলে ভোক্তারা অল্প সময়ের মধ্যে পাচ্ছেন চাহিদা অনুযায়ী ফরমালিনমুক্ত সুস্বাদু ও পরিচ্ছন্ন আম।

তবে কিছু অসাধু অনলাইন ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্য, অনলাইনে অর্ডার নেওয়া, বিকাশ কিংবা নগদে পেমেন্ট আর কুরিয়ারে পণ্য পৌঁছে দেওয়া অনেকের কাছেই নতুন হওয়ায় সম্ভাবনার পাশাপাশি সমস্যার কথাও বলছেন নতুন উদ্যোক্তারা। তবে এই সমস্যাগুলোর সমাধানে কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের সাহায্য করছেন বলে জানান তারা।

চারঘাটের নতুন উদ্যোক্তা মশিউর রহমান রাসেল। তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। তিনি জানান, মহামারী করোনায় আপাতত বাড়িতেই আছি। শখের বসে ‘আমার আম’ নামে একটি পেজ খুলে অনলাইনে আম সরবরাহের বিজ্ঞপ্তি দিই। এতে প্রথম থেকেই ব্যাপক সাড়া পাই। এক পর্যায়ে সরাসরি গাছ থেকে পেড়ে সব ধরণের কীটনাশক মুক্ত আম অর্ডার নিয়ে সরবরাহের এক সপ্তাহের মাথায় বেশ কয়েক গুন আমের অর্ডার পেয়েছি। এতে আমি আমার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে সরাসরি আম সরবরাহ শুরু করেছি।

চারঘাটের সরদহ সরকারি কলেজের প্রভাষক ওবাইদুর রহমান রিগেন। তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তিনিও শখের বসে শুরু করেছেন আমের ব্যবসা। অনলাইনেই বিক্রি করছেন বেশিরভাগ আম। “রাজশাহীর আম” নামে তার একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে।

ওবাইদুর রহমান জানান, আমাদের নিজস্ব কিছু আমের বাগান রয়েছে। তারপরও খিরসাপাত আর ল্যাংড়ার অনেকগুলো গাছের আম কিনে নিয়েছি। এ ছাড়া ফজলি, আম্রপালি, বারি-৪ আর আশ্বিনা আম রয়েছে পর্যাপ্ত।

তিনি বলেন, স্থানীয় চাষীদের কাছ থেকে আম কিনে থাকি। ফলে চাষীরাও লাভবান হন। কারণ চাষীদের হাটে আম নিয়ে গেলে খাজনা দিতে হয়। আবার দামও কম পান। আড়তদাররা আবার সেই আম বিক্রি করেন আম ব্যবসায়ীদের কাছে। সেই আম কয়েক হাত ঘুরে যেত ভোক্তার কাছে। ফলে বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীদের আমে ফরমালিন দিতে হয়। অনলাইনে বিক্রির ফলে সরাসরি বাগান থেকে আম প্যাকেট হয়ে ভোক্তার কাছে পৌঁছে যায়। ফলে টাটকা ফরমালিনমুক্ত আম পেয়ে যান ভোক্তারা।

ওবাইদুর রহমান জানান, শুধু চারঘাটেই ৪০টির মতো অনলাইনে আম বেচাকেনার ফেসবুক পেজ রয়েছে। যার মধ্যে কিছু পেজ থেকে সরাসরি আম বাগান থেকে লাইভ করে ক্রেতাদের গাছ থেকে আম পাড়া ও প্যাকেটিং করে দেখানো হয়। অনেকে ফেসবুক মেসেঞ্জার, ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপে লাইভ করেন। ফলে ক্রেতারা টাটকা আম পান।

এ বিষয়ে চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন, অনলাইন আমের ব্যবসায় শিক্ষিত যুবকরা বেশী আগ্রহী। তবে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সঠিকভাবে আম সরবারহ করতে পারলে আগামী সময়ে অনলাইন ব্যবসা আরো জমজমাট হবে বলে জানান তিনি।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ