আবু খালিদ, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: অপপ্রচার যে কত বড় ভয়ানক, তা হারে হারে টের পাচ্ছে দেশের সবচেয়ে উদীয়মান পোল্ট্রি শিল্পের উদ্যোক্তারা। অপপ্রচারের ভয়াল থাবায় দিন যতই যাচ্ছে ততই যেন নুয়ে পড়ছে শিল্পটি।

দেশের মানুষের পুষ্টি ও প্রোটিন নিশ্চিত, অল্প টাকায় মাংস এবং ডিম খাওয়ার সুযোগ, কর্মসংস্থান, দারিদ্রবিমোচনসহ নানা দিকদিয়ে অবদান রাখা শিল্পটির তরতর করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু অপপ্রচার এবং ভুল তথ্য উপস্থাপনে দিনদিন সংকটের মুখে পড়ছে শিল্পটি।

এদিকে সমানতালে পোল্ট্রির অপপ্রচার চললেও প্রতিরোধে নেই কোন উদ্যোগ। বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? শিল্পটি অপপ্রচারে বারবার হোঁচট খেলেও যেন ঘুম ভাঙছে না সংশ্লিষ্টদের।

পোল্ট্রির অপপ্রচার রোধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে নীরব উদ্যোক্তারা। আর সরকারিভাবে বলা হচ্ছে পদক্ষেপের জোর প্রস্তুতি চলছে। সভা সেমিনারে বক্তব্যের মধ্যে পোল্ট্রির অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যা কিছু বলছেন বক্তারা। এর বাইরে সবাই চুপ।

ভেজাল পোল্ট্রি খাদ্য, নকল ডিম, ডিমের কুসুম ক্ষতিকর এমন সব নানা অপপ্রচারের সঙ্গে এবার ব্রয়লার মাংস নিয়ে ভুল গবেষণা যুক্ত হয়েছে। কিন্তু ওই ভুল গবেষণার বিপরীতে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নের পথে যে কয়েকটি অন্তরায় বা বাঁধা হয়ে সামনে দাঁড়িয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো অপপ্রচার। এর রেশে ব্রয়লারের খামারিরা সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছেন।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর একটি ছোট জরিপে দেখা গেছে, পোল্ট্রি নিয়ে সঠিক তথ্য না জেনেই সবাই একজনের দেখাদেখি ভুল তথ্য তুলে ধরছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন ঘটনা বেশি ঘটছে।

ডিমের কুসুম নিয়ে নেতিবাচক একটি পোস্ট দিয়েছিলেন জুলফিকার হাবিব বুলবুল। এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর পক্ষ থেকে তার সাথে যোগাযোগ করা হয়।

তাকে প্রশ্ন করা হয় কী তথ্যের ভিত্তিতে তিনি ডিমের কুসুম খেলে অসুখ হওয়ার পোস্টটি দিয়েছিলেন। উত্তরে তিনি বলেন, ফেসবুকে ছবিসহ পোস্টটি দেখার পর আমিও শেয়ার দিয়েছি।

এরপর গবেষকের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিয়ে কথা বলার জন্যে অনুরোধ করা হয় তাকে। উনি কথা বলে পরিস্কার হন যে ডিমের কুসুমে ক্ষতিকর কিছু নেই। ঠিক একইভাবে ব্রয়লারের মাংস নিয়েও আমরা কথা বলেছি অনেকের সাথে। সেখানেও একই রকম তথ্য পাওয়া গেছে।

মানুষের মাঝে ভুল বার্তাগুলো গুজবের মতো দ্রুত ছড়িয়ে গেলেও এটি প্রতিরোধে কোন উদ্যোগ এখনো সংশ্লিষ্টরা নিচ্ছেন না কেন?

উত্তরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রাণিসম্পদ-২) কাজী ওয়াছি উদ্দিন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মূলত আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কিছু প্রমাণের দরকার ছিলো। যেন আমরা গবেষণা ও পরীক্ষা করে বলতে পারি যে এটা সঠিক ওইটা মিথ্যা।

তিনি বলেন, সেই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে আমরা ল্যাব করেছি। সেখানে পরীক্ষা করে সব উত্তর দিতে পারবো।

এখন থেকে সব ধরণের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে বলেও মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এ ঊর্ধতন কর্মকর্তা।

তিনি জানান, ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পোল্ট্রি খাদ্যে যেন হেভি মেটাল ব্যবহার না করতে পারে সেটা নিশ্চিত করছি।

সংবাদ পরিবেশনের আগে গুরুত্ব সহকারে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক নাথুরাম সরকার।

তিনি বলেন, তথ্য বিভ্রাটের কারণে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এতে সাধারন মানুষ ডিম ও মুরগির মাংস খাওয়া কমিয়ে দিতে পারে।

খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্টানদের মাঝেও অনেক অসাধু ব্যবসায়ী অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে অপপ্রচারে সহায়তা করছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সচ্চিদানন্দ দাস চৌধুরী।

তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মালিকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা থামাতে হবে। এসব মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমার ফিডে এতো দিনে এতো গ্রোথ হবে, এসব প্রচারণায় প্রলুব্ধ হচ্ছেন খামারিরা।

তিনি আরও বলেন, আবার কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এমন কিছু উপাদান ব্যবহার করছেন সেটা ব্যবহারে গ্রোথ ঠিকই হয়তো হচ্ছে কিন্তু স্বাদ কমে যাচ্ছে। এতে কিন্তু ব্রয়লারের মান কমে যাচ্ছে। এ কারণে মনিটরিং থাকতে হবে শক্তভাবে। কোয়ালিটি কন্ট্রোল থাকতে হবে।

মনে রাখতে হবে, মুরগির চরিত্র আছে, নির্দিষ্ট সময়ে তার গ্রোথ হবে। সেটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের সবদিকে করণীয় আছে।

পোল্ট্রি সংগঠনের পক্ষ থেকে ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আলী ইমামের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয় অপপ্রচার প্রতিরোধে আমরা কী সঠিক পথে আছি। উত্তরে তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, না, আমাদের যেভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত সেভাবে করতে পারছি না। এরফলে নেতিবাচক প্রভাব পরছে শিল্পটির ওপর।