চাষ ব্যবস্থাপনা ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ফুলের রাজ্যে রঙিন, সুগন্ধি আর বহুলবিস্তৃত বৈশিষ্ট্য নিয়ে অর্কিড সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে। এক অনিন্দ সুন্দর ফুল হিসেবে এর খ্যাতি বিশ্বজুড়ে।

বলা হয়, ফুল উৎপাদনোক্ষম উদ্ভিদ জগতে অর্কিড একটি বিশাল পরিবার, যার প্রায় ৯০০ গণ এবং ৩০,০০০ এরও অধিক প্রজাতি রয়েছে। ফুলটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আকর্ষণীয় রঙ, বিভিন্ন ধরনের গড়ন, সুগন্ধ, ঔষধি গুণাগুণ, দীর্ঘ স্থায়িত্বকাল।

এই অর্কিড ফুলের গঠন বৈচিত্র্যে বিস্মিত হয়ে প্রাচীন চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস ‘সেরাফুল’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। দার্শনিক প্লেটো, এরিস্টোটল, থিওফ্রাসটাস আদর করে এ ফুলের নাম দিয়েছিলেন অর্কিস। কালক্রমে এ নামটিই বিবর্তিত হয়ে অর্কিড হয়েছে।

পাঠক অর্কিডেসি পরিবারের সদস্য এ ফুল চাষ শখ ও বাণিজ্যিক দুই ভাবেই করতে পারেন। ফুলদানিতে দীর্ঘকাল সজীব থাকা এই কাটফ্লাওয়ার চাষ সম্পর্কে আজ বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। সঠিক নিয়ম মেনে চাষ করলেই কেবল ফুটবে আকর্ষণীয় এ ফুল। সুবাশ ছড়াবে চারপাশে, মিলবে সফলতা। 

ছায়াযুক্ত সুনিষ্কাশিত কিন্তু স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে চাষ করা যায়। প্রখর সূর্যালোকে এই ফুল ভাল হয় না। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষের জন্য জমিতে সেডনেট দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ৪০-৬০% সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে। টবে চাষের ক্ষেত্রে বড় গাছের নিচে এ ফুলের চাষ করা যেতে পারে। এ জাতটি বহুর্ষজীবি।

সাকার উৎপাদন বংশ বিস্তার: গাছের ফুল বা ফুল কাটার পর প্রতিটি গাছ থেকে পার্শ্বীয়ভাবে সাকার বের হয়। এই সাকারসমূহ গাছে লাগানো অবস্থায় যখন শিকড় বের হয় তখনই গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মূল জমিতে লাগানো যেতে পারে। এছাড়া কেটে ফেলা ফ্লাওয়ার স্টিকের ফুল শেষ হয়ে গেলে তা থেকেও চারা উৎপাদন করা যেতে পারে। এজন্য বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়।

জমি তৈরি রোপন পদ্ধতি: বিভাজন  প্রক্রিয়ায় গাছ থেকে সাকার সংগ্রহ করে অথবা টিস্যু কালচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চারা তৈরি করে জমিতে লাগাতে হবে। পচা গোবর/কম্পোষ্ট, নারিকেলের ছোবরা, ধানের তুষ ও বেলে দোআঁশ মাটির সমপরিমাণ মিশ্রনের মাধ্যমে বেড তৈরি করতে হবে।

সাকার লাগানোর সময় সারি থেকে সারি ৩০-৪০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছে ২৫-৩০ সেমি দূরত্ব দরাখতে হবে। সাকার লাগানোর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে শিকড়গুলো পুরোপুরি মাটির নিচে থাকে।

সার প্রয়োগ: ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি সমৃদ্ধ ২০:২০:২০ মিশ্র সার বেশ উপযোগী। সার পানিতে গুলিয়ে সপ্তাহে এক বা দু’দিন গাছে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করার সময় গাছের পাতা যেন ভালভাবে ভিজে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সেচ পানি নিষ্কাশন: মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রস থাকতে লাগানোর পর হালকা সেচ দিতে হয় যাতে সাকারগুলো মাটিতে লেগে যায়। পরবর্তীতে আবহাওয়ার আবস্থা বুঝে সেচ দিতে হবে। এছাড়াও এ ফুল চাষের জন্য বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬০ বজায় রাখতে হলে স্প্রিংকলার দিয়ে মাঝে মাঝে পানি স্প্রে করতে হবে। জমিতে দাঁড়ানো পানি এ ফসলের জন্য ক্ষতিকর। যদিও প্রচুর পানির প্রয়োজন।

রোগ পোকা দমন: এ ফুলটিতে সাধারণত কোন রোগ বা পোকার আক্রমণ দেখা যায় না। তবে ভাইরাস রোগের ক্ষেত্রে আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ফুলের কুঁড়ির কীড়া দমনের জন্য যে কোন সিস্টেমিক বালাই নাশক অনুমোদিত প্রয়োগ মাত্রায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

ফুল কাটা: সাকার থেকে গাছ লাগানোর এক বছরের মধ্যেই ফুল আসে। অপরদিকে টিস্যুকালচার থেকে প্রাপ্ত চারা থেকে ফুল পেতে কমপক্ষে আঠারো মাস সময় লাগে। বাণিজ্যিক চাষের ক্ষেত্রে স্টিকের এক বা দু;টি ফুল ফোটার সাথে সাথে কাটতে হবে। বাগানে বা টবে সৌখিন চাষের ক্ষেত্রে ফুল কাটার প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে গাছে প্রায় ৩০-৪৫ দিন পর্যমত্ম ফুল টিকে থাকে।

ফুল আসার সময়: ফাল্গুন-চৈত্র মাস। ফলন/হেক্টর প্রথম বছরঃ ৮০০০ স্টিক, দ্বিতীয় বছরঃ ১৫০০ স্টিক, তৃতীয় বছর ২৫০০০ স্টিক। এছাড়া প্রতিবছর গাছ থেকে চারা রেখে ২-৫টি সাকার সংগ্রহ করা সম্ভব।