পাট একটি বর্ষাকালীন ফসল। বাংলাদেশে পাটকে সোনালী আঁশ বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের শতবর্ষের ঐতিহ্য এই পাট শিল্প। বাংলাদেশে দুই ধরনের পাট দেখতে পাওয়া যায়- তোষা পাট ও সাদা পাট। বাংলাদেশের শুষ্ক অঞ্চলগুলো বিশেষ করে বৃহত্তর যশোর, কুষ্টিয়া, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহের কিছু অংশে উন্নতমানের পাট গাছ উৎপন্ন হয় কিন্তু উৎপাদিত আঁশের মান খুবই খারাপ। পাট জাগ দেওয়া বা পচানোর কৌশল নিয়ে লিখেছেন কৃষিবিদ ড. মো. মাহবুবুল ইসলাম।

সমীক্ষা ও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পাট পচন পানির অপর্যাপ্ততা ও প্রয়োজনীয় পানির অভাবেই পাট-চাষি ভাইরা খাল/ডোবায়/পুকুরে অতি অল্প পানিতেই কাদা মাটি ঢাকা দিয়ে পাট পচনের কাজটি সমাধান করেন। ফলে স্বভাবতই উৎপাদিত আঁশের মান অতিনি¤œ মানের হয়। গবেষণার ফলাফলে প্রমাণিত হয়, সেসব এলাকায় অল্প পানিতে পাট পচানের কলাকৌশল উদ্ভাবন এবং স্থান বিশেষে পাট পচনের প্রয়োজনীয় পানি প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে উল্লিখিত এলাকার উৎপাদিত পাটের আঁশের মান উন্নত করা সম্ভব।

পাটের আঁশ থাকে পাট গাছের বাকলে বা ছালে। কাজেই পুরো পাট গাছ পাট কাঠিসহ না পচিয়ে কাঁচা অবস্থায় গাছের ছাল উঠিয়ে নিয়ে শুধুমাত্র ছাল পচালে পচন পানির প্রয়োজনীয়তা বহুলাংশে কমানো সম্ভব। পাটের ছাল পচালে শুধু যে কম পানিতে পাট পচানো সম্ভব তাই নয় বরং আরও অনেক বিশেষ সুবিধা রয়েছে, যেমন- কম পানিতে অনেক পাট পচানো যায়; কাটিংসবিহীন উন্নতমানের আঁশ উৎপাদিত হয়; গোটা পাট পচাতে যত সময়ের প্রয়োজন তার অর্ধেক সময়ে পাট পচানো সম্ভব হয়; পচন স্থানে নেয়ার জন্য পরিবহন খরচ কম লাগে। অল্প পরিমাণ স্থানে বেশি পাট পচানো সম্ভব; যেহেতু কাঁচা অবস্থায় পাট কাঠি আলাদা করা এবং এসব পাট কাঠি পচনকালে পানির সংস্পর্শে আসে না ফলে স্বভাবতই এ পাট কাঠি অপেক্ষাকৃত শক্ত থাকে। বাংলাদেশে পাট কাঠির ব্যবহারিক মূল্য অনেক।

আরোও পড়ুন: হাঁসের খামার করে লাখপতি নওগাঁর খালেক

বর্তমানে চাষি পর্যায়ে উৎপাদিত প্রায় ৩০-৪০ লাখ বেল (এক বেল= প্রায় ৫ মণ= ১৮০ কেজি) অতি নিম্নমানের ছাল ও অত্যাধিক কাটিংযুক্ত আঁশ বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন পাটকলে ও গুদামে অব্যবহৃত অবস্থায় মজুদ আছে। এসব আঁশের অভ্যন্তরীণ ও বিদেশের বাজারে কোনোই চাহিদা নেই এবং কলে ব্যবহার করাও সম্ভব নয়।

এসব আঁশগুলোকে বিভিন্ন জীবাণু তাত্ত্বিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় মানোন্নয়ন করে কলকারখানায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলার জন্য বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে বহুমুখী গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে এবং যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া গেছে।

আরোও পড়ুন: লেবুর গুটি কলম পদ্ধতি

অল্প পানিতে পাট পচানোর কৌশল  শিরোনামে সংবাদের লেখাটি লিখেছেন কৃষিবিদ ড. মো. মাহবুবুল ইসলাম, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান, কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট।