ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম : আকাশে মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরি। কাস্তের টানে খেতের ধান কেটে চলছে শ্রমিকের দল। পাকা আউশ ধানের মৌ-মৌ গন্ধে মাতোয়ারা চারিপাশ। মেঘ-বৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে সূর্য যখন তপ্ত রোদ ছড়ায়, শ্রমিকের দেহ তখন খানিকটা দম নিতে চায়। দম নেওয়ার এ সুযোগে শ্রমিকেরা মেতে ওঠে নানা গল্পে।

এসব শ্রমিকের একজন নওগাঁর মহাদেবপুরের লিয়াকত হোসেন। বলছিলেন করোনা আর ধানের বাজারদর নিয়ে। বললেন সুখস্মৃতি ‘করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের মরণ দশা। তবে করোনার খারাপ সময়ের মধ্যেও কৃষক এবার ধানের দাম পাচ্ছেন।’ অন্য বছর কষ্টের ফসল বাজারে নিয়ে দাম শুনে হতাশ হলেও এবার ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাদেবপুর কার্যালয় থেকে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে আউশ চাষ হয়েছে ১৫ হাজার ৬৭০ হেক্টর। যা গত বছরের চেয়ে ৪ হাজার ৬৭০ হেক্টর বেশি। এবার হেক্টর প্রতি ৩.২ থেকে ৩.৩ টন হারে ফলন হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। বাজারে প্রতি মণ ধান ৮৫০-৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষি বিভাগ গত সোমবার উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের তেরোমাইল মোড় এলাকার আনুষ্ঠানিকভাবে আউশ ধানের নমুনা শস্য কর্তন করেছে।

নমুনা শস্য কর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সুধেন্দ্রনাথ রায়, নওগাঁর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সামসুল ওয়াদুদ, জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার রবি আহ নূর আহম্মেদ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায়, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তৌফিক আল জুবায়ের, আলী রিয়াজ প্রমুখ। এসময় উত্তর আন্ধারকোটা গ্রামের কৃষক হারুন অর রশিদের জমির উচ্চ ফলনশীল ব্রি ধান-৪৮ এবং পারিজা জাতের ধান কর্তন করা হয়।

আরোও পড়ুন: করোনাকালেও ভালো দামে মরিচ চাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক

ধানের পাতা মোড়ানো ও লেদা পোকা দমনে করণীয়

ধানের পাতামাছি পোকা দমন ব্যবস্থাপনা

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার উত্তরগ্রাম, শিবরামপুর, বামনসাতা, কর্ণপুর, ধর্মপুর, খোশালপুর, রাইগাঁ ও এনায়েতপুর এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠে ব্যাপক হারে আউশ ধান চাষ হয়েছে। সবুজ ধানের সোনালী শীষে ছেয়ে আছে ক্ষেতগুলো। যা দৃষ্টিসীমাকেও ছাপিয়ে যায়। সেসব ক্ষেতে দলবেঁধে ধান কাটছেন শ্রমিকরা। বর্তমানে উদ্দাম গতিতে চলছে ধানকাটা মাড়াইয়ের কাজ। ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। ধান কাটার পর উচুঁ স্থানে রোদে শুকিয়ে বিক্রি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে চাষিরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বাম্পার হয়েছে। আউশ কাটার সাথে সাথে রোপা আমন লাগানো চলছে। অনেক এলাকার কৃষকরা ইতোমধ্যে জমিতে রোপা আমন ধান চাষও শেষ করেছেন। আউস মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াই শেষ হতে আরও ৮-১০ দিন সময় লাগবে -এমনটাই জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা।

স্থানীয় কৃষকদের ভাষায়, এটি তাদের সারা বছরে উৎপাদিত ফসলের মধ্যে বাড়তি ফসল। যা থেকে বাড়তি আয় আসে। আর অসময়ে এ বাড়তি আয় তাদের সংসারের অভাব অনেকটাই ঘুচিয়ে দেয়।

খোসালপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম, ধর্মপুর গ্রামের আবু তাহের, বামনসাতা গ্রামের সোহেল রানাসহ একাধিক কৃষক জানান, বোরো ধান ঘরে তোলার পর আমন চাষের আগে বেশিরভাগ জমি প্রায় তিন মাস পরে থাকে। এই সময়টাতে কৃষকরা আউশ ধান আবাদ করে ফলন ঘরে তোলার পর আবার রোপা আমন ধান চাষ করে। এতে জমি ফেলে না রেখে বাড়তি ফলন ঘরে তোলা যায়। স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে গেল দু’সপ্তাহ ধরে এই ধান উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে প্রতিমণ কাঁচা ধান ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ধান চাষ হয়। আউশ ধান কাটা শুরু হয়েছে। বাজারে ধানের দাম ভালো। আউশ ধান চাষে তেমন সেচ ও সারের প্রয়োজন হয় না। তিনি বলেন, স্থানীয় কৃষকরা জমি ফেলে না রেখে চাষকরে ঘরে ফলন তোলে। এটাকে তারা আপদকালিন বা বাড়তি ফলন বলে থাকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলেন অতিরিক্ত পরিচালক সুধেন্দ্রনাথ রায় বলেন, কৃষি বিভাগের লোকজন সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছেন। এবার আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাছাড়া বাজারে ধানের দামও মোটামোটি ভালো থাকায় কৃষক বেশ লাভবান হয়েছেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ