ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : ‘সময়মতো পানি দাও, সার দাও আরও কত ঝামেলা, তাই এক বিঘা জমিতে ধান আবাদ না করে মরিচ চাষ করছি। এতে ঝামেলা কম, লাভও বেশি।’ কথাগুলো বলছিলেন নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের কৃষক বিকাশ। শুধু বিকাশই নন, গত কয়েক মৌসুম থেকে কৃষকরা মরিচ চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

উপজেলার সফাপুর, উত্তরগ্রাম, মহাদেবপুর সদর ও খাজুর ইউনিয়নের মাঠে এ বছর ব্যাপক হারে স্থানীয় বর্ষালী জাতের মরিচ চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাদেবপুর কার্যালয় থেকে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৩০ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ১৯০ হেক্টর জমিতে। এ বছর মরিচের আবাদ বেড়েছে ৪০ হেক্টর জমিতে।
মরিচ চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা হলে মরিচ ভালো হয়। এবার মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে বাজার দর কিছুটা কম থাকলেও এখন প্রতি মণ কাঁচা মরিচ ছয় হাজার থেকে সাত হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে মরিচ চাষে লাভ তুলনামূলক বেশি। সে কারণে কৃষকদের আগ্রহও বেশি। ধান আবাদ করে লাভের মুখ দেখতে গিয়ে উল্টো অনেক কৃষক ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছেন।

এই লোকসান থেকে বাঁচতে অনেক কৃষক আস্তে আস্তে মরিচ ও সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের কৃষক যারা সাধারণত নিজেরা শ্রম দিতে পারেন, এমন কৃষকেরা ধান চাষ ছেড়ে সবজি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। কৃষকরা যেন মরিচ আবাদে আর্থিক ক্ষতির শিকার না হয় এবং রোগ বালাই দমনে চাষিদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার সফাপুর, জিগাতলা, পাহাড়পুর, সুলতানপুর, নাটশাল, বাখেরাবাদ, মোমিনপুর, চকউজাল, শ্রীনগর, চকশিয়ালী, পবাতৈড়, বাঁশবাড়িয়া, শিবরামপুর ও ধর্মপুর এলাকায় ধানের পাশাপাশি বিস্তীর্ণ জমিতে ব্যাপক হারে মরিচ চাষ হয়েছে। সবুজে ছেয়ে আছে মরিচের খেতগুলো। কোথাও কোথাও দৃষ্টিসীমাকেও ছাপিয়ে যায়। সেসব খেত থেকে দলবেঁধে মরিচ উঠাচ্ছেন নারী শ্রমিকরা। এ সময় কথা হয় সুলতানপুর গ্রামের চাষি তাপস দেবনাথের সঙ্গে।
তিনি বলেন, স্বল্প ব্যয়ে অধিক লাভের আশায় এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন।

এই মরিচ চাষে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। চার মাস আগে এই মরিচ চাষ করেন তিনি। লাগানোর প্রায় ৪৫-৫০ দিনের মাথায় খেত থেকে মরিচ উঠানো শুরু হয়। ১৫ দিন পর পর খেত থেকে মরিচ উঠানো যায়। কোনো কোনো সময় ১০ দিন পরও উঠানো যায়। কয়েকদিন আগে এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ১০ মণ কাঁচা মরিচ উঠিয়েছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। খেত থেকে প্রায় ৫ মাস পর্যন্ত মরিচ উঠানো যায়। তবে সবকিছুই নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর।

সফাপুর গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল বলেন, প্রতিবিঘা জমি থেকে ১০-১৫ দিন পর পর প্রায় ১০-১২ মণ হারে মরিচ উঠানো যায়। মৌসুমের শুরুতে প্রতিমণ কাঁচা মরিচ ২০০০-২২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। তবে পরবর্তীতে এই মরিচ প্রতিমণ ৫০০০-৫৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। বর্তমানে ৬০০০-৭০০০ টাকায় প্রতিমণ কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, তার পাঁচ বিঘা আবাদি জমে রয়েছে। মরিচ চাষের জন্য এবার দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেননি। বর্তমানে মরিচের ফলন ও দাম দুটোই ভালো পাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, রোগ বালাই যেন মরিচের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছেন। মরিচের ফলন ও দাম দুটোই ভালো পাচ্ছেন কৃষক। তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগ কৃষকদের কম খরচে অধিক লাভ হয় এমন ফসল আবাদে উৎসাহিত করছেন এবং প্রণোদনা দিচ্ছেন।