আদা একটি মসলা জাতীয় উদ্ভিদ।রন্ধন শিল্পে এবং বিভিন্ন রোগের অষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই আদার চাষ হয়ে থাকে। আদার কয়েকটি রোগ দেখা যায় তার মধ্যে রাইজোম রট, পাতা ঝলসানো, পাতায় দাগ, ব্যাক্টিরিয়াজনিত কন্দ পচা ও ঢলে পড়া ইত্যাদি রোগ অন্যতম। তবে রাইজোম রট আদার বেশি ক্ষতি করে।আদার শিঁকড় ও কন্দ পচা রোগের করণীয় নিয়ে লিখেছেন ড. কে এম খালেকুজ্জামান।

আদার রাইজম রট বা কন্দ পচা পচা রোগের কারণ পিথিয়াম এফানিডারমেটাম নামক ছত্রাক এবং ব্যাক্টিরিয়া ও রাইজোম ফ্লাই।

এ রোগের বিস্তার সাধারণত আক্রান্ত রাইজোম, মাটি, পানি ও ব্যবহৃত কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে রোগের বিস্তার ঘটে।

রোগের লক্ষণ
১. গাছের গোড়ায় কন্দতে প্রথমে পানি ভেজা দাগ দেখা যায়।
২. পরে ওই স্থানে পরম পচন দেখা যায়।
৩. ক্রমান্বয়ে কন্দের বেশি বেশি অংশ পচে যায়।
৪. আক্রান্ত গাছের শিকড়ও পচতে শুরু করে এবং গাছ টান দিলে সহজেই উঠে আসে।
৫. আক্রান্ত কন্দ থেকে এক ধরনের গন্ধ বের হয়। এ গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে রাইজোম ফ্লাই নামক পোকা আদায় আক্রমণ করে।
৬. গাছের ওপরের অংশে পাতা হলুদ হয়ে যায়। পাতায় কোনো দাগ থাকে না।
৭. পরে গাছ ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে মারা যায়।
৮. রাইজোম পচে যাওয়ার ফলে ফলন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

রোগের প্রতিকার
১. আক্রান্ত গাছ মাটিসহ উঠিয়ে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে।
২. আক্রান্ত গাছ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৩. রোগবিহীন কন্দ সংগ্রহ করে বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
৪. আক্রান্ত জমিতে শস্য পর্যায় অনুসরণ করতে হবে।
৫. মাঠে যথাযথ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৬. স্টেবল বিচিং পাউডার প্রতি হেক্টরে ২০ কেজি হারে শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
৭. রিডোমিল গোল্ড বা ব্যভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ওই দ্রবণের মধ্যে বীজ আদা আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে শোধন করে উঠিয়ে ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে জমিতে রোপণ করতে হবে।
৮. অর্ধকাঁচা মুরগির বিষ্ঠা (৩-৫ টন/হে.) আদা বপনের ২১ দিন আগে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
৯. রোগ দেখা দেয়া মাত্রই রিডোমিল গোল্ড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে (০.২%) অথবা সিক্যুয়র প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর গাছের গোড়ার মাটিতে স্প্রে করতে হবে।

আরোও পড়ুন: বস্তায় আদা চাষ, রোগ ও পোকামাকড় দমন পদ্ধতি

আদার শিঁকড় ও কন্দ পচা রোগের করণীয় শিরোনামে লেখাটি লিখেছেন ড. কে এম খালেকুজ্জামান, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব), মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া।