নির্দিষ্ট সীমা রেখে শস্য

আন্তর্জাতিক কৃষিডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আন্তর্জাতিক বাজারে দানাদার খাদ্যশস্যের দাম উঠানামা করছে। উথান পতনের মধ্যে দিয়ে কেনা বেঁচা হচ্ছে বিভিন্ন দানাদার খাদ্য শস্য। তবে গম ও চাল শস্যের বাজারে বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যায় নি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোয় দানাদার খাদ্যশস্যের আন্তর্জাতিক বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। বাজার পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে ব্যবসায়ীরা আবহাওয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। খবর ওয়ার্ল্ডগ্রেইন ডটকম।

বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, লাতিন আমেরিকা ও যুক্তরাষ্ট্রে ভুট্টার দাম বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। চলতি মাসে প্রকাশিত গ্রেইন মার্কেট রিপোর্টে ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইনস কাউন্সিল (আইজিসি) জানায়, নভেম্বরে প্রকাশিত রিপোর্টের তুলনায় ভুট্টার মূল্যসূচক বেড়েছে ৪ শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আমেরিকা। যদিও ইউক্রেনে পণ্যটির দাম কিছুটা কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রে মার্চ সরবরাহ চুক্তিতে পণ্যটির দাম প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে।

মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য দেশে দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন, ব্যবহার ও মজুদে নিম্নমুখিতা তৈরি হয়েছে। ভুট্টা উৎপাদন কমার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, কেনিয়া, মেক্সিকো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও প্যারাগুয়ে। এক্ষেত্রে কিছুটা ভারসাম্য আনতে পারে ইউক্রেনের ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন।

বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে আর্জেন্টিনায় শুষ্ক আবহাওয়ার প্রকোপ বাড়ে। এ কারণে দেশটির প্রধান প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদনশীল এলাকায় আগাম আবাদি ভুট্টার ফলন বাধাগ্রস্ত হয়। যদিও বৃষ্টিপাতের কারণে দেরিতে আবাদ করা ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে। মৌসুমে আগামী মাসগুলোয় উৎপাদন সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে পারে বলে মনে করছে ইউএসডিএ।

আরও পড়ুন: হাটৎ মুরগি ও ডিমের দাম কমার পূর্বাভাস

প্রতিষ্ঠানটি আরো জানায়, ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলে মৌসুমের শুরুতে আবাদ করা ভুট্টার ফলন ব্যাহত হয়েছে। এ কারণে দেশটির মোট উৎপাদন নিম্নমুখী হয়ে উঠতে পারে।

আইজিসি জানায়, কভিড-১৯ সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা ও রফতানি চাহিদায় শ্লথগতির কারণে কিছুদিনের জন্য ফিউচারস মার্কেটে ভুট্টার দাম কমে গিয়েছিল। কিন্তু ইথানল উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ চাহিদার উল্লম্ফনে পণ্যটির দাম আবারো বেড়ে যায়। অন্যদিকে ইউক্রেন থেকে চীন অনেক বেশি পরিমাণে ভুট্টা কেনার চুক্তি করায় বাজার আরো ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে।

উৎপাদন পরিস্থিতিতে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে ফ্রি অন বোর্ড চুক্তিতে আর্জেন্টিনা ভুট্টার রফতানি মূল্য ১৯ ডলার বেড়ে টনপ্রতি ২৭১ ডলারে উন্নীত হয়েছে। ব্রাজিলে ১১ ডলার বেড়ে টনপ্রতি ২৮১ ডলারে পৌঁছেছে। যদিও ইউক্রেনে রফতানি মূল্য প্রায় ৫ ডলার কমে টনপ্রতি ২৭৭ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে আগের প্রতিবেদনের তুলনায় আইজিসিতে যবের মূল্যসূচক কমেছে ৩ শতাংশ। মূলত দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোয় বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় পণ্যটির উৎপাদন ভালো হওয়ায় বাজারদর কমেছে। পণ্যটির বাণিজ্য চলছে ঢিমেতালে।

মূলত গমের দাম কমায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে যবের দাম ১৫ ডলার কমেছে। ফ্রি অন বোর্ড চুক্তিতে প্রতি টন রফতানি করা হচ্ছে ২৯৯ ডলারে। কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলে পণ্যটির দাম ১২ ডলার কমে ফ্রি অন বোর্ড চুক্তিতে টনপ্রতি ২৯৩ ডলারে রফতানি হচ্ছে।

সম্প্রতি ইউএসডিএ ওয়ার্ল্ড এগ্রিকালচারাল সাপ্লাই অ্যান্ড ডিমান্ড এস্টিমেটস শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে চলতি মৌসুমের জন্য দানাদার খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন পূর্বাভাস ১৬ লাখ টন কমানো হয়েছে। মৌসুম শেষে উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১৫০ কোটি টনে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি মার্কিন দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদন পূর্বাভাস কিছুটা বাড়িয়ে ৩৯ কোটি ৮৭ লাখ ১০ হাজার টন নির্ধারণ করে। ডিসেম্বরে দেয়া পূর্বাভাসে ৩৯ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টন উৎপাদনের কথা বলা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে দানাদার খাদ্যশস্যের বাজার উঠা-নামা করছে শিরোনামে সংবাদটি তৈরিতে বণিক বার্তা সংবাদ মাধ্যমের সহযোগিতা নেয়া হয়েছে।