আন্তর্জাতিক বাজারে দুগ্ধপণ্যের দাম

আন্তর্জাতিক ‍কৃষি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: এবার আন্তর্জাতিক বাজারে দুগ্ধপণ্যের দাম কমার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে গ্লোবাল ডেইরি ট্রেডের (জিডিটি) সর্বশেষ নিলামে দুগ্ধপণ্যের মূল্যসূচক প্রায় ১ শতাংশ কমেছে। তবে এর আগের চার নিলামে প্রতিবারই ৪ শতাংশের বেশি হারে দাম বেড়েছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় দুগ্ধপণ্যেগুলোর।

এবার সংশ্লিষ্টরা আন্তর্জাতিক বাজারে দুগ্ধপণ্যের দাম কমে যাওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছেন। তারা বলছেন, একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে চলা শুষ্ক আবহাওয়ার পর নিউজিল্যান্ডের খামারিরা দুধ দোহন বন্ধ রেখেছেন। এ কারণে নিলামে দুগ্ধপণ্য তোলা হয়েছে স্বল্প পরিমাণে। পণ্যগুলোর চাহিদা কম থাকায় অংশগ্রহণকারীরা কম দাম বলেন। যা বিশ্ববাজারে দুগ্ধপণ্যের দাম কমে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, সর্বশেষ জিডিটি নিলামে দুগ্ধপণ্যের দাম দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৫ হাজার ৩৯ ডলারে। এবারের নিলামে সর্বোচ্চ ২৬ হাজার ১৬৫ টন দুগ্ধপণ্য সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ২৩ হাজার ২৩৮ টন। নিলামে অংশ নিয়েছেন ১৭৭ জন ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে জয়ী হন ১০৯ জন ব্যবসায়ী।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, নিলামে দুগ্ধপণ্যের মূল্যসূচক কমে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধ (ডব্লিউএমপি)। এটিকে নিলামের প্রধান পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গত নিলামের তুলনায় পণ্যটির দাম কমেছে ২ দশমিক ১ শতাংশ। প্রতি টন বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৬ ডলারে।

দুগ্ধপণ্যের মধ্যে দাম কমার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মাখন। পণ্যটির দাম আগের নিলামের তুলনায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। প্রতি টন বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৯৫৮ ডলারে। এছাড়া ল্যাকটোজের দাম দশমিক ৬ শতাংশ কমে ১ হাজার ৬১৮ ডলারে নেমেছে।

এছাড়া বাকি পণ্যগুলোর দাম অনেকটা ঊর্ধ্বমুখীই ছিল। এর মধ্যে ননিবিহীন গুঁড়ো দুধের (এসএমপি) দাম ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি টনের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৪৫ ডলারে। অ্যানহাইড্রাস মিল্ক ফ্যাটের দাম দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি টন বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ১১১ ডলারে। চেডার পনিরের দাম দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৪১২ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এবারের নিলামে সুইট হুই পাউডার ও মাখনযুক্ত গুঁড়ো দুধ উত্তোলন করা হয় নি।

তবে সর্বশেষ নিলামে দাম কমলেও তা রেকর্ড পর্যায়েই রয়েছে। বাজার বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্ববাজারে পাল্লা দিয়ে যেমন বাড়ছে দুগ্ধপণ্যের চাহিদা, ঠিক তেমনি কমছে সরবরাহ। কারণ গত বছর থেকেই বিশ্বজুড়ে দুধ উৎপাদন মন্দার মুখে। পশুখাদ্যের দাম অব্যাহতভাবে বাড়ায় খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। পাশাপাশি পশুপালনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপকরণের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া সরবরাহ চেইনে সংকট বাজারে অস্থিতিশীলতাকে আরও তীব্র করে তুলেছে বলে মনে করছেন তারা।

বৈশ্বিক এ নিলামে সবচেয়ে বেশি দুগ্ধপণ্য সরবরাহ করে ওশেনিয়া মহাদেশ। পাশাপাশি দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোর সরবরাহও থাকে ভরপুর। কিন্তু গত ছয় মাসে সরবরাহ আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক কমেছে। ফলে শীর্ষ ভোক্তা দেশগুলোর মাঝে সরবরাহ নিশ্চিতে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়ে উঠেছে।

তবে বিশ্বজুড়ে দুগ্ধপণ্যের চাহিদা বাড়ায় কমছে মজুদ। সর্বশেষ নিলামে বরাবরের মতোই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে ডব্লিউএমপি ও এসএমপি। আর এসব পণ্যের শীর্ষ ক্রেতা ছিল চীন। দুই বছর ধরে দেশটি রেকর্ড পরিমাণ দুগ্ধপণ্য আমদানি করেছে। এমন অস্বাভাবিক চাহিদার কারণেই দাম হু হু করে বাড়ছে।

বিশ্লেষকরা প্রত্যাশা করছেন, বছরের শেষ দিকে চাহিদা কিছুটা কমলেও বার্ষিক চাহিদার হার ঊর্ধ্বমুখীই থাকবে। তবে চলতি বছরও দুগ্ধপণ্যের সরবরাহ থাকবে কমতির দিকে। প্রধান আমদানিকারক দেশগুলো বর্তমানে দুগ্ধপণ্যের মজুদ বাড়ানোর প্রতি জোর দিচ্ছে। উদ্দেশ্য আপত্কালীন ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবেলা করা। এছাড়া জাহাজীকরণ বিলম্বের কারণেও আগেভাগে দুগ্ধপণ্য সংগ্রহ করে রাখছে এসব দেশ।