অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আবারো বেড়েছে অপরিশোধিত চিনির দাম। দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে কমে যাওয়া দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সরবরাহ সংকটের উদ্বেগে বেশি পরিমাণে পণ্যটি ক্রয় করছেন বিনিয়োগকারীরা।

বিজনেস রেকর্ডারের প্রকাশিত বাজারের তথ্যানুযায়ী, সর্বশেষ কার্যদিবসে ইন্টারকন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জে (আইসিই) মে মাসের সরবরাহ চুক্তিতে অপরিশোধিত চিনির দাম ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি পাউন্ডের মূল্য স্থির হয়েছে ১৭ দশমিক ৯৪ সেন্টে। এর আগে প্রতি পাউন্ডের দাম ১৭ দশমিক ৭০ সেন্টে নেমে গিয়েছিল। অন্যদিকে মে মাসের সরবরাহ চুক্তিতে সাদা চিনির দাম ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি টনের মূল্য স্থির হয়েছে ৫০১ ডলার ৭০ সেন্টে।

পড়তে পারেন: মাঠে দাঁড়িয়ে ১৫ হাজার মে. টন আখ, বেকায়দায় চিনিকল

তথ্য বলছে, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুঁজিবাজারে ঝুঁকি এড়াতে বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে অপরিশোধিত চিনি কেনা কমিয়ে দিয়েছিলেন। এ কারণে একদিন আগেও পণ্যটির দাম অবস্থান করছিল দুই মাসের সর্বনিম্নে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। মূল্যবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকবে। ফলে বিকল্প হিসেবে বাড়তে পারে আখ থেকে উৎপাদিত বায়োডিজেলের ব্যবহার। চাহিদা বেড়ে গেলে মিলগুলো আখ থেকে চিনির পরিবর্তে বায়োডিজেল উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে চিনি সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে শীর্ষ উৎপাদক ব্রাজিলের মিলগুলো বায়োডিজেল উৎপাদনে এগিয়ে থাকবে।

চলতি বিপণন মৌসুমে চিনি উৎপাদনে শীর্ষ চিনি উৎপাদক দেশ ব্রাজিলকে ছাড়িয়ে রেকর্ড গড়তে পারে ভারত। দেশটিতে মোট চিনি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

পড়তে পারেন: চিনির চেয়ে মিষ্টি এক কেজি স্টোভিয়ার দাম ৫ হাজার

সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে ইন্ডিয়ান সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (ইসমা) জানায়, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ ভারতে ৪৯২টি চিনিকল পণ্যটি উৎপাদন করেছে। আগের বছরের একই সময় ৪৮১টি চিনিকলের কার্যক্রম চালু ছিল। সে হিসাবে সক্রিয় চিনিকলের সংখ্যাও বেড়েছে।

২০২১-২২ মৌসুমের প্রথম তিন মাসেই (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ভারতে চিনি উৎপাদন গত মৌসুমের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৫ হাজার টন। আগের মৌসুমের প্রথম তিন মাসে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১০ লাখ ৭৪ হাজার টন।

ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে মহারাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি চিনি উৎপাদন হয়। মৌসুমের প্রথম তিন মাসে এ রাজ্যে ভোগ্যপণ্যটির উৎপাদন ১৫ শতাংশ বেড়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার টন। আগের মৌসুমের একই সময় উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩৯ লাখ ৮৬ হাজার টন। রাজ্যটির চিনিকলগুলো আখ মাড়াই বাড়িয়েছে। নতুন করে ১০টি চিনিকলে মাড়াই শুরু হয়েছে। বর্তমানে ১৮৯টি কল মাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

পড়তে পারেন: ভারতে চিনি উৎপাদন বেড়েছে ৩৫ লাখ ৫৪ হাজার টন

এদিকে উত্তর প্রদেশে চিনি উৎপাদন কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়েছে। আগের মৌসুমের প্রথম তিন মাসে এ রাজ্যে ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার টন চিনি উৎপাদন হলেও চলতি মৌসুমে তা কমে ৩০ লাখ ৯০ হাজার টনে নেমেছে। গত মৌসুমে ১২০টি চিনিকলের কার্যক্রম চালু থাকলেও চলতি মৌসুমে তা ১১৯টিতে নেমেছে।

সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১-২২ মৌসুমের প্রথম দুই মাসে ভারতের চিনিকলগুলোকে ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টন চিনি বিক্রির কোটা বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো কোটার চেয়ে বেশি চিনি বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছে। বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টনে।

পড়তে পারেন: চলতি মৌসুমে ভারতে সাড়ে ৩ কোটি টন চিনি উৎপাদন সম্ভাবনা

প্রান্তিকভিত্তিক বাজার প্রতিবেদনে ইন্টারন্যাশনাল সুগার অ্যাসোসিয়েশন (আইএসও) জানায়, ২০২১-২২ মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ১৭ কোটি ৩০ লাখ ৩০ হাজার টন চিনি ব্যবহার হবে। এটি আগস্টে দেয়া পূর্বাভাসের তুলনায় ১৪ লাখ ৪০ হাজার টন কম।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ মৌসুমে চিনির বৈশ্বিক উৎপাদন আগের পূর্বাভাসের তুলনায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টন কমে ১৭ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার টনে নামতে পারে। মৌসুম থেকে ভোগ্যপণ্যটির মজুদ কমে ৯ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার টনে দাঁড়াবে। গত মৌসুমে মজুদের পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৬৭ লাখ ৪০ হাজার টন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ