নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ডঃ মোঃ আবু সুফিয়ান বলেছেন, সকলের প্রচেষ্টায়, এখন আমরা মাংস এবং ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন তাদের কাজ হচ্ছে কিভাবে এই উৎপাদন কে নিরাপদ করা যায়।

দেশের প্রথম সরকার অনুমোদিত অনলাইন ভেটেরিনারি হাসপাতাল প্রাণিসেবা ভেট বিশ্ব এন্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ-২০২১ উপলক্ষে অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়ের পক্ষে তিনি এ কথা বলেন।

“Spread Awareness, Stop Resistance”  হোক সচেতনতার বিস্তার, চাই এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স থেকে নিস্তার! প্রতিপাদ্য নিয়ে ২৪ নভেম্বর এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলায় জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়। প্রাণিসেবা ভেট এর অপারেশন হেড ডাঃ রেজাউল আলম রেজার সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ান, জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, মেডিকেল ভাইরোলজিস্ট, ভেট এসোসিয়েশন ও কাউন্সিল প্রতিনিধি ও কর্পোরেট প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়ের পক্ষে প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ডঃ মোঃ আবু সুফিয়ান এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভূমিকা বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, সকলের প্রচেষ্টায়, এখন আমরা মাংস এবং ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন তাদের কাজ হচ্ছে কিভাবে এই উৎপাদন কে নিরাপদ করা যায় ।

তিনি উল্লেখ করেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ যাবৎ মাঠপর্যায়ে প্রায় ২ লক্ষ খামারিদের প্রশিক্ষিত করেছে। সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সাথে যৌথভাবে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে পশু খাদ্য আইন ২০১৩ বাস্তবায়ন করার কথা উল্ল্যেখ করেন। এছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর যে আন্তজার্তিক মানের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরি স্থাপন করার মাধ্যমে পশুখাদ্যে এন্টিবায়োটিক রেসিডিউ ও হেভি মেটাল এর উপস্থিতি পরীক্ষা করছে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)-র প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর ও ওয়ান হেলথ বাংলাদেশর জাতীয় সমন্বয়কারী ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ প্রাণিদেহে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস কে ধ্বংস করার জন্য বা বংশবৃদ্ধি রোধ করার জন্য এন্টিমাইক্রেবিয়াল যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরার গুরুত্ব আলোকপাত করেন।

তিনি বলেন, গত ২০ বছরে যেভাবে আমাদের দেশে খামার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন হয়েছে, সেভাবে কিন্তু এন্টিবায়োটিক এর যত্রতত্র ব্যবহার ও প্রাণী কল্যান আইন নিয়ে সচেতনতা বাড়েনি। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হলে, তিনি বলেন, এই সচেতনতা শুধু ভেটেরিনারিয়ান ও অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার গার্ডিয়ান যারা আছেন তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে, সমাজের সর্বস্তরেই এই সচেতনতা পৌছানো প্রয়োজন। পরিশেষে তিনি প্রাণিসেবা ভেটকে বিশেষ করে ধন্যবাদ দেন এই রকম একটি সুন্দর আয়োজনের জন্য।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজী বিভাগ এর অধ্যাপক ডাঃ সাইফ উল্লাহ মুন্সী বিশ্বব্যাপী এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের যে ব্যপকতা তার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

আমেরিকা ও চায়না বিশ্বের সবোর্চ্চ এন্টিবায়োটিক ব্যাবহারকারী দেশ। এফডিএ এর তথ্যমতে আমেরিকায় মোট এন্টিবায়োটিক এর ৮০ শতাংশই ব্যবহার হচ্ছে কৃষিতে । সিডিসির তথ্য মতে প্রতিবছর আমেরিকায় ২ মিলিয়ন লোক এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স জনিত জটিলতায় ভুগছে। বাংলাদেশে ৪৩ শতাংশ পোল্ট্রি খামারী প্রিভেনটিভ মাত্রায় এবং ৪ শতাংশ খামারি গ্রোথ প্রমোটর হিসেবে প্রথন দিন থেকেই এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, তবে আশার কথা উন্নত দেশ, এন্টিবায়োটিকের শ্রেণীবিন্যাস স্বাপেক্ষে কোনটি মানুষের জন্যে আর কোনটি কৃষিতে ব্যবহার হবে তা নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করেছে। তিনি এন্টিবায়োটিক এর ভবিষ্যত হুমকির পাশাপাশি এর ব্যবহারের ফলে খামারি পর্যায়ে যে অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধন হচ্ছে তার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেন।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’র সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) মনজুর মোর্শেদ আহমেদ বলেন, গবাদি প্রাণির উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ টিকে নিশ্চিত করার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করেন। চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় প্রাণি জবাই করা বা দুধ বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে সচেতনতা বৃদ্ধির আহবান জানান। এছাড়া প্রেস্ক্রিপসন বিহীন এন্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রির অনিয়ন্ত্রিত প্রথা কে অইনসম্মত ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলেন ।

বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল’র রেজিস্ট্রার, ডা: গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস, আজকের প্রোগ্রাম কে স্বাগত জানিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আসছে ভবিষ্যতেও এর ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখার জন্য পরিকল্পনা রয়েছে বলে উল্ল্যেখ করেন।

বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন’র মহাসচিব ড.মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা বলেন যে আমরা অনেক সম্মানিত এই জন্য যে, ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ অন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স’ এর কো-চেয়ার মনোনীত হয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি নেত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন যে, আজকের এই সচেতনতা অনুষ্ঠানে নীতি নির্ধারনি পর্যায়ের যেমন: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এর প্রতিনিধি গন উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

তিনি বলেন, একটি উপজেলাতে মাত্র একজন ভেটেরিনারিয়ান রয়েছেন। এই জন্য এন্টিবায়োটিক রেজিস্টান্স বা অন্যান্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না। এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের সচেতনতা বাড়ানো ও সঠিক প্রাণিসেবা নিশ্চিত করার জন্য উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নিদিস্ট বিশেষজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ান এর সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং আইন করে প্রতিটি বড় ফার্মে একজন ভেটেরিনারিয়ান এর তত্ত্ববধান নিশ্চিত করার গুরুত্ব প্রদান করেন। ভেটেরিনারি সেবাকে জরুরি সেবা ঘোষণার জোড় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আদর্শ প্রাণিসেবা লিমিটেড’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব ফিদা হক বলেন, এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স আমাদের এবং প্রাণিস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বুঝে না বুঝে এন্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করার প্রথা থেকে অচিরেই বেড়িয়ে আসার জন্য প্রাণিসেবা ভেট যে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে তা ব্যক্ত করেন। তিনি সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যথাসম্ভব সঠিক চিকিৎসা, পরামর্শ এবং উপদেশ প্রদান করে গবাদিপ্রাণিতে এন্টিবায়োটিকের প্রয়োগ কমানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ