বাতেন আহম্মেদ, রাজশাহী  প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আমের নগরী খ্যাত রাজশাহীতে সস্তায় মিলছে আম। সর্বনিম্ন এ দাম কেজিপ্রতি ১২ টাকায় পৌঁছেছে। প্রতি বছর আমকে কেন্দ্র করে শতকোটি টাকার বাণিজ্য হওয়া এ নগরীতে এবার ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে চাষিরা হিমশিম খাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক যুগের মধ্যে এবারই প্রথম আমের দাম এতো তলানিতে পরেছে। ৫০০ টাকায় মিলছে একমন আম। এ হিসাবে প্রতি কেজি আমের দাম পড়ছে সাড়ে ১২ টাকা। মুনাফার আশা ছেড়েই দিয়েছে এ অঞ্চলের ছোট-বড় চাষি।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দাম না পাওয়ায় অনেকেই গাছ থেকে আম সংগ্রহ করেন নি। গাছেই পাকছে চাষিদের আম। গাছ থেকে আম সংগ্রহের সময়সীমা নিয়েও চাষিদের মনে ক্ষোভ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছরের আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গত ২০ মে থেকে শুরু হয় আম পাড়ার কর্মযজ্ঞ। ওই দিন থেকে গুটি ও গোপাল ভোগ জাতের আম বাজারে ওঠার কথা ছিলো। কিন্তু এবার বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে পাকেনি গুটি ও গোপাল ভোগ।

১ জুন থেকে হিমসাগর, ক্ষিরসাপাত ও লক্ষণভোগ এবং ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া বাজারে ওঠার কথা ছিলো। না পাকায় বাজারে ওঠেনি এসব জাতের আমও। ২০ মে থেকে ১০ জুন আম পাকার জন্য যে তাপমাত্রার প্রয়োজন ছিলো, তা ছিল না। ফলে কমসংখ্যক চাষিই ওই সময়ে গাছ থেকে আম নামাতে পেরেছেন। আবার ১০ জুনের পর থেকে তাপমাত্র বেড়ে যায়।

সপ্তাহ জুড়ে তাপমাত্রার পারদ ওঠানামা করে ৩৫-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ভ্যাপসা গরমে একসঙ্গে পেকে যায় সবজাতের আম। আর রোজা থাকায় আমের বিক্রি কমে যায়। মৌসুমের শেষ আশ্বিনা জাতের আম ছাড়া প্রায় সব জাতেরই আম চলে এসেছে বাজারে। আগামী ১ জুলাই বাজারে উঠবে আশ্বিনা।

এদিকে ঈদের কারণে চাষিরা প্রয়োজনীয় শ্রমিক সঙ্কটেও পরেছেন। বেশি পারিশ্রমিকে শ্রমিক পেলেও আম সংগ্রহ করে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হয়ে গেছে টানা কয়েকদিন পরিবহন সেবা বন্ধ থাকায়।  এ কারণেও বেশ ক্ষতিতে পরতে হয়েছে চাষিদের।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আম পাকার আগ মুর্হূর্তে ঝড়ের কবলে পড়ে আম বাগানগুলো। এতে বেশির ভাগ আম পড়ে যায়। যেটুকু আম ছিলো তা বিক্রির মত ক্রেতা পাননি। শ্রমিক খরচা না ওঠায় আম নামাতেই পারেননি গাছ থেকে।

আম চাষিরা জানান, গত মৌসুমে গাছ থেকেই হিমসাগর ১৬০০-১৮০০ টাকা, ল্যাংড়া এবং ক্ষিরসাপাত ১৬০০-১৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার দাম অর্ধেকেও কম। তারপরও ক্রেতা নেই। চাষ-বাসের খরচই উঠবে না এবার।

রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়ার বানেশ্বর হাট। এ অঞ্চলে গোপালভোগ আম রয়েছে প্রায় শেষ পর্যায়ে। তারপরও এ মোকামে আমের দাম গত কয়েক মৌসুমের মধ্যে সবচেয়ে কম।

সুমিষ্ট এ জাতের আম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, হিমসাগর এক হাজার থেকে ১১০০ টাকা এবং ল্যাংড়া ১১০০-১২০০ টাকা এবং ক্ষিরসাপাত ১২০০-১৩০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। আর বিভিন্ন জাতের গুটি আমের দাম মণ প্রতি মাত্র ৫০০ টাকা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালি জানান, প্রচণ্ড গরম পড়ায় দ্রুত আম পেকে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। এতে বিপাকে পড়েন চাষিরা। আম মূলত বিরুপ প্রকৃতির ফসল। প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠলে চাষিদের মুখে হাসি ফোটায় ফলের রাজা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জানায়, কয়েক বছর ধরেই দেশে আমের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে আমের উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১০ লাখ ১৮ হাজার টন। পরের অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ লাখ ৬১ হাজার ৬৮৫ টনে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে আম উৎপাদন হয় সাড়ে ১২ লাখ টন। তবে চলতি অর্থবছর তা ছাড়িয়ে যাবে ১৪ লাখ টন। এর মধ্যে রাজশাহীতেই তিন লাখ টনের উপর উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

জানা যায়, দেশে বর্তমানে আম উৎপাদন হচ্ছে প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে বৃহত্তর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। গত ৭ বছরে এ অঞ্চলে আমের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। গত বছর এ অঞ্চলের ১৭ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে।

সেখানে উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৮১ হাজার ১০৭ টন। এর আগে ২০১৬ সালে রাজশাহীতে ১৬ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রাজশাহীর আম যাচ্ছে বিশ্ববাজারে।