মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: মৌসুমের শুরুতেই আলুর দাম বাড়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। বিগত বছরের তুলনায় ভালো দাম পাওয়ায় ক্ষেতেই অনেক চাষি আলু বিক্রি করছেন।

অন্যদিকে গত বছরে হিমাগারে রাখা বীজ আলুর দাম বেশ চড়া থাকায় এবারেও চাষিরা আলু সংরক্ষণে ঝুুঁকবে বলে আশা করছেন হিমাগার কর্তৃপক্ষ।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও এ্যাস্টেরিক জাতের আলু বেশি চাষ হয়। চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। ভালো দামের আশায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে চাষ হয় আলু। এসব জমি থেকে ৮ লাখ ৪০ হাজার মেট্টিকটন উৎপাদনের আশা করছেন কৃষি বিভাগ। সর্বশেষ ১০ মার্চের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত জেলায় মোট আলু সংগ্রহ হয়েছে ৭৩ শতাংশ। যার পরিমাণ ৬ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৯ মেট্টিকটন।

কয়েকজন চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বাজারে আলুর দাম তুলনামূলক বেশি। ক্ষেতেই প্রতি কেজি ডায়মন্ড জাতের আলু ১২ থেকে ১৩ টাকা, কার্ডিনাল, এস্টারিক্স (লাল) জাতের আলু ১৩থেকে সাড়ে ১৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় এন্দুরকানি আলু ১৯-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম ভালো পেয়ে কৃষকেরা আলু খেতেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আরো বেশি দামের আশায় বীজ আলু সংগ্রহে মনোযোগ দিচ্ছেন বাণিজ্যিক চাষিরা। বিগত কয়েক বছর ধরে তারা আলুর নায্য দাম পান না। এই বছর দাম ভালো পাওয়ায় আলু চাষে স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

তানোর যোগীশহ এলাকার আলু চাষি রেজাউল ইসলাম। তিনি বলেন, “প্রতি বছর ২০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করি। বর্তমানে আলুর দাম ভালো দাম রয়েছে। আমি আলু তোলা শুরু করেছি। বিঘাপ্রতি ফলন গড়ে ৭০ মণের বেশি ছাড়া কম হবে না। আবার কোনটা ৭০ বস্তা পার হয়ে যাবে ( ৬৫ কেজির বস্তা)। সমস্ত আলু তোলা না হলে আমরা সেভাবে বলতে পারিনা। তবে, আলুর দামে বেশ ভালোই লাগছে। লাভের টাকা থাকবে।”

একই উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের আলু চাষি ও ব্যবসায়ী আব্দুর রাকিব বলেন, “গত বছর ৫০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছিলাম। কিন্তু এবছর আলুর বীজ সংকট এবং দাম বেশি হওয়ায় ৩০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছি। আগামীকাল থেকে তুলা শুরু করবো। নমুনা হিসেবে যা তুলছি তাতে ভালোই ঠেকছে। আমি বেশিরভাগ আলু কোল্ড স্টোরেজে রাখি। এবারও রাখব।”

এবার আলু চাষে কিছুটা ধকল সহ্য করতে হয়েছে উল্লেখ করে আব্দুর রাকিব বলেন, “এবার বেশি দামে আলুর বীজ কিনতে হয়েছে। আমরা যে দামে বীজ কিনে আলুর চাষ করি ভরা মৌসুমে তার দাম সিন্ডিকেটে বাড়ায়ে দেয়। তাছাড়া শ্রমিকমূল্য কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। বীজ, সার, ঔষুধ সবকিছুর দাম বেশি। আশা করা হচ্ছে আলুর এই দাম থাকলে কৃষকরা বাঁচবে কিছুটা।”

বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত আলু হিমাগারে জমা হলেও ক্ষুদ্র চাষিরা আলু বিক্রি করছেন এখনই। বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা লায়েব আলী, “প্রতি বছর আলুর চাষ করি। এবারও করেছি বিঘা পাঁচেক জমিতে। আলুর দাম ভালো আছে তুলে তুলেই বিক্রি করে দিব।”

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোছা: উম্মে ছালমা বলেন, “আলুর দামে খুশি কৃষকরা। অনেক চাষি এবার ধান চাষ ছেড়ে আলু চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই আলুর ভালো দাম পাওয়ায় জমিতেই আলু বিক্রি করছেন কৃষকরা। রাজশাহীতে বাণিজ্যিকভাবে কার্ডিনাল আলু বেশি চাষ হয়। আমরা জানতে পেরেছি ১৩ থেকে ১৫ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে এই আলু। দাম বেশি পেলে স্বাভাবিকভাবেই আলু চাষ বৃদ্ধি পাবে।”

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ