মেহেদী হাসান , রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: এবার আবহাওয়া অনুকূলে, দামও তুলনামুলক বেশি। ফলে রবি মৌসুমে অধিক লাভের আশায় আগেভাগে আলুর আবাদে নেমে পড়েছেন রাজশাহীর চাষিরা। হিমাগার থেকে বীজ উত্তোলন, জমি তৈরি, আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ এবং প্রস্তুতকৃত জমিতে আলু রোপণের কাজে ব্যস্ত চাষিরা।

জেলার নয়টি উপজেলার সব উপজেলাতেই পুরোদমে চলছে আলু আবাদের প্রস্তুতি। জমি তৈরি করে ডায়মন্ড, গ্রানুলা, স্টারিস ও কার্ডিনাল জাতের বীজ আলু কেটে প্রস্তুত করার পর রোপণ করা হচ্ছে। চলছে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধে কীটনাশক স্প্রেও। পুরোপুরি ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও বাণিজ্যিকভাবে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহীতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও এ্যাস্টেরিক জাতের আলু বেশি চাষ হয়। চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে। যা গত বছর ছিল ৩৮ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে। চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে আগের তুলনায় কমেছে আলুর চাষ। ৩৬ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে ৯ লাখ ৭৬ হাজার ১২৭ মেট্রিক টন আলু চাষের পরিকল্পনায় এগোচ্ছে কৃষি বিভাগ। অর্থাৎ প্রতি হেক্টর জমিতে ২৬ দশমিক ৫০ টন আলু চাষ করার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে আলু চাষ কিছুটা কমার কারণ হিসেবে কৃষি বিভাগ বলছে, আলু ছেড়ে সরিষা চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। দেশের কৃৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আলু বিদেশে রপ্তারির যে আশ্বাস দিয়েছিলেন তা বেশ কিছু কারণে হয়নি। এ কারণে কৃষকরা সরিষা চাষ করছেন।

চাষিরা বলছেন, বিগত কয়েক বছর ধরে তারা আলুর নায্য দাম পান না। তবে গত দুই বছর থেকে দাম ভালো পাওয়ায় আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন তারা। তানোর যোগীশহ এলাকার আলু চাষি রেজাউল ইসলাম।

তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এ বছর ২০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছি। বর্তমানে আলুর দাম ভালো দাম রয়েছে। ফলে উপজেলার আলু ব্যবসায়ীসহ সাধারণ লোকজনও ঝুঁকছেন আলু চাষে। শ্রমিকের সংকট দেখা না গেলেও বীজের সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া সার ও বীজের দাম রয়েছে লাগাম ছাড়া। রেজাউল বলেন, আলু চাষের কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি ভালো দামের আশায় প্রায় সবাই আলু চাষ করায় ভরা মৌসুমে দাম কমতে পারে। তবে এ বছর আলুর ভালো ফলন হবে।

একই উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের আলু চাষি আব্দুর রাকিব এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, চলতি মৌসুমে ভালো দামের আশায় অনেকেই আলু চাষে নেমেছেন। ফলে এবার তুলনামূলক কম জমিতে আলু চাষ করছি। মোট ৩০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করবো। গত কয়েক দিন ধরে এ পর্যন্ত ২৫ বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছি। আগামীকাল ৫ বিঘা জমিতে আলু লাগালে মোট ৩০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করা হবে। আলুর বীজ সংকটে পড়েছি। এই বীজ সংকটের পেছনে এক ধরণের সিন্ডিকেট চক্রের হাত রয়েছে বলে ধারণা করছেন আব্দুর রাকিব।

আড়াই বিঘা জমি লিজ নিয়ে আলু চাষ করছেন রাজপাড়া থানার বাসিন্দা আব্দুর রহিম। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, গত রোববার থেকে জমিতে আলু রোপণের প্রস্তুতির কাজ করেছি। আজকে আলু রোপণের কাজ শুরু করেছি। এ বছর এলাকায় শ্রমিক সংকট দেখা দেয়নি। ফলে অনেকে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে আলু চাষ করছেন। আলুর বীজ সংকট এবং সারের কারণে এবার অতিরিক্ত খরচ হওয়ার আশঙ্কা করছি। তবে বাজারে এরকম দাম ও ফলন ভালো হলে খরচের টাকা পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন এগ্রিকেয়ার.কম কে বলেন, আলুর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষক। কৃষকদের জমি প্রস্তত। আমরা সরেজমিনে গিয়ে চাষিদের সাথে কথা বলেছি। বীজ কিংবা সারের কোন সংকট নেই। আর নির্ধারিত সময়ে আলু চাষের জন্য উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন সমাবেশের মাধ্যমে তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কৃষকরা যাতে আলুর ভালো ফলন পান সেই জন্য সার, সেচ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ