আন্তর্জাতিক কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাশিয়ার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত শস্যভান্ডার ইউক্রেন। যুদ্ধের কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় চলতি বছর দেশটিতে খাদ্যশস্য উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমতে পারে। এক মৌসুমের ব্যবধানে উৎপাদন কমতে পারে ৩ কোটি ২৩ লাখ থেকে ২ কোটি ৯৪ লাখ টন।

সম্প্রতি এমনই খবর প্রকাশ করেছে কৃষিপণ্যের বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান এপিকে ইনফর্ম।

প্রতিবেদনে দেয়া প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, চলতি বছর ইউক্রেনে খাদ্যশস্য উৎপাদন ৮ কোটি ৪৮ লাখ টন থেকে কমে ৫ কোটি ২৫ লাখ থেকে ৫ কোটি ৫৪ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে।

এপিকে ইনফর্ম জানায়, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কমেছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, দেশটির খাদ্যশস্য রফতানি শিগগিরই ৪০ লাখ টনে উন্নীত হবে। তবে এটি যুদ্ধের আগে প্রতি মাসে রফতানীকৃত খাদ্যশস্যের তুলনায় অনেক কম। ওই সময় প্রতি মাসে দেশটি ৬০ লাখ টন করে খাদ্যশস্য রফতানি করত।

পড়তে পারেন: বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের বাজারদর লাগামহীন হয়ে উঠছে

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবেদনে জানায়, চলতি বছর মোট খাদ্যশস্যের মধ্যে ১ কোটি ৮২ লাখ টন গম, ২ কোটি ৯৯ লাখ টন ভুট্টা ও ৫৯ লাখ টন যব উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে নিম্নমুখী উৎপাদন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে রফতানিতেও। ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে (জুন-জুলাই) রফতানির পরিমাণ ২ কোটি ২৯ লাখ থেকে ৩ কোটি ৯৬ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে বলে জানিয়েছে এপিকে ইনফর্ম। তবে সার্বিক রফতানি পরিস্থিতি লজিস্টিকস সরবরাহসংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতার ওপর নির্ভর করছে।

ইউক্রেন সরকার চলতি বছরের জন্য পাঁচ কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে সরকারি কোনো সংস্থা এখন পর্যন্ত রফতানি বিষয়ক পূর্বাভাস দেয়নি।

পড়তে পারেন: ৩৫ লাখ মেট্টিকটন খাদ্যশস্য মজুদ করবে সরকার

এপিকে ইনফর্ম বলছে, পরিস্থিতি ইতিবাচক থাকলে চলতি বছর সব মিলিয়ে ৫ কোটি ৫৪ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে রুশ সামরিক বাহিনী কর্তৃক ব্যাপক হারে মর্টার শেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ অব্যাহত থাকলে খাদ্যশস্য আবাদি জমির পরিমাণ কমতে পারে। সেক্ষেত্রে উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫ কোটি ২৫ লাখ টনে।

ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ কৃষিপণ্য উৎপাদক ও রফতানিকারক। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশস্য ও তেলবীজ সরবরাহের ক্ষেত্রে দেশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মার্কিন কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ মৌসুমে ইউক্রেনে ৩ কোটি ৩০ লাখ টন গম, ৪ কোটি ১৯ লাখ টন ভুট্টা ও ৯৯ লাখ যব উৎপাদন হয়েছে। মোট খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৮৪ লাখ টন।

পড়তে পারেন : রেকর্ড গড়তে পারে গম-ভুট্টার দাম

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় রুশ বাহিনী ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরীয় সমুদ্রবন্দর অবরোধ করে ফেলে। ফলে সমুদ্রপথে দেশটির খাদ্যশস্য রফতানি বন্ধ ছিল পাঁচ মাস। জুলাইয়ের শেষ দিকে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেন একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির আওতায় আবারো কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর দিয়ে খাদ্যশস্য রফতানি শুরু করেছে ইউক্রেন। ১-১৫ আগস্ট পর্যন্ত কৃষ্ণ সাগর দিয়ে ৫ লাখ ৬০ হাজার টনেরও বেশি খাদ্যশস্য রফতানি করেছে ইউক্রেন।

সূর্যমুখী তেল উৎপাদন ও রফতানিতেও শীর্ষ দেশ ইউক্রেন। এপিকে ইনফর্ম বলছে, চলতি বছর তেলবীজটির উৎপাদন ১ কোটি ৬৬ লাখ টন থেকে কমে ১ কোটি ৭ লাখ টনে নামতে পারে। আর সূর্যমুখী তেল উৎপাদন হবে ৩৫-৫০ লাখ টন।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ