ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। আষাঢ়ে শিমের বীজ বপন করলে পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার উচ্চ ফলনশীল জাত সম্পর্কে পরিচিত না হলে ফলন কমে যায়।
আসুন প্রথমেই জেনে নিই জাত পরিচিতি:
১. বারি শিম ১– মাঝারি আগাম জাত। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসে বীজ বপন করতে হয়। প্রতিটি শিমের ওজন ১০-১১ গ্রাম, শিমে ৪-৫ টি বীজ হয়, গাছ প্রতি ৪৫০-৫০০ টি শিম ধরে। জীবনকাল ২০০-২২০ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন ২০-২২ টন।
২. বারি শিম ২– আগাম জাত। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসে বীজ বপন করতে হয়। প্রতিটি শিমের ওজন ১০-১৩ গ্রাম, শিমে ৪-৫ টি বীজ হয়, গাছ প্রতি ৩৮০-৪০০ টি শিম ধরে। জীবনকাল ১৯০-২১০ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন ১০-১২ টন।
৩. বিইউ শিম ৩– সারা বছর চাষ করা যায়। গ্রীষ্ম মৌসুমেও চাষের উপযোগী। শিমের রঙ বেগুনি। প্রতিটি শিমে গড়ে ৫ টি বীজ হয়। হেক্টর প্রতি ফলন ৭-৮ টন।
৪. ইপসা শিম ১– সারা বছর চাষ করা যায়। গ্রীষ্ম মৌসুমেও চাষের উপযোগী। শিমের রঙ বেগুনি। প্রতিটি শিমে গড়ে ৫ টি বীজ হয়। হেক্টর প্রতি ফলন ৫-১০ টন।
৫. ইপসা শিম ২– সারা বছর চাষ করা যায়। গ্রীষ্ম মৌসুমেও চাষের উপযোগী। শিমের রঙ সাদাটে সবুজ। প্রতিটি শিমে গড়ে ৪ টি বীজ হয়। হেক্টর প্রতি ফলন ৭-৮ টন।
শিম চাষের জন্য আষাঢ় মাসে বীজ বপন করলে অনেকটা সতর্ক থাকতে হয়। বীজ বপনের পর বীজতলা/মাদা/ বীজ বপনের স্থান ঢেঁকে দিলে অতিরিক্ত পানির কারনে বীজ পচতে পারে না। বীজ থেকে গাছ বের হয়ে চারা উপযুক্ত হলেই কেবল উন্মুক্ত করা উচিত।
বীজের পরিমাণ
বপন পদ্ধতি মাদা প্রতি হেক্টর প্রতি
সারিতে বোনা হলে ৪-৫ টি ১৫ কেজি
মাদায় বোনা হলে ৪-৫ টি ১০ কেজি
আরোও পড়ুন:শিমের শোষক পোকা ও মাইটের আক্রমণের প্রতিকার
যে পদ্ধতিতে শিম চাষে শতভাগ সফলতা
জমি তৈরিঃ
বেশী জমিতে আবাদ করা হলে কয়েকটি চাষ ও মই দেয়া ভাল। মাদার দৈর্ঘ্য, প্রস’ ও গভীরতার আকার ৪৫ সেন্টিমিটার রাখতে হবে।
মাদার দুরত্বঃ
এক মাদা থেকে অন্য মাদার দুরত্ব ৩.০ মিটার।
প্রতি মাদার জন্য সারের পরিমাণ
গোবর ১০ কেজি, খৈল ২০০ গ্রাম, ছাই ২ কেজি, টিএসপি ১০০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম। মাদা তৈরি করার সময় এসব সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজালে ১৪ থেকে ২১ দিন পর পর দু’কিসি-তে ৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম করে এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ বপনের নিয়মঃ
প্রতি মাদায় ৪-৫ টি বীজ বুনতে হয়। বীজ বপনের আগে ১০-১২ ঘন্টা বীজ ভিজিয়ে নিতে হবে। প্রতিটি মাদায় ২-৩ টি করে সুস’ চারা রেখে বাকী চারা তুলে ফেলতে হয়।
পরিচর্যাঃ
কোন অবস্থাতেই গাছের গোড়ায় পানি যাতে না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে জমিতে প্রয়োজন মত সেচ দিতে হবে। মাঝে মাঝে মাটি নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে। এছাড়া গাছ যখন ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা হবে তখন মাদার গাছের গোড়ার পাশে বাঁশের ডগা মাটিতে পুঁতে বাউনির ব্যবস্থা করতে হবে।
পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা:
শিমের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল ফল ছিদ্রকারী পোকা ও জাব পোকা। চারা অবস্থায় পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা মহা ক্ষতিকর। লাল ক্ষুদ্র মাকড়ও অনেক সময় বেশ ক্ষতি করে থাকে ফুল ফুটলে থ্রিপস ক্ষতি করতে পারে। ফল পেকে এলে বিন পড বাগ বা শিমের গান্ধি পোকা ক্ষতি করে। আইপিএম পদ্ধতি অনুসরণ করে এসব পোকামাকড় দমনের ব্যসস্থা নিতে হবে।
রোগ ব্যবস্থাপনা:
শিমের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ দু’টি- মোজেইক ও অ্যানথ্রাকনোজ।
ফসল সংগ্রহঃ
আশ্বিন-কার্তিক মাসে ফুল ধরে। ফুল ফোটার ২০-২৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। ৪ মাসেরও বেশী সময় ধরে ফল দেয়। ফলন প্রতি শতকে ৩৫-৭৫ কেজি, হেক্টর প্রতি ১০-১৫ টন।
আষাঢ়ে শিমের বীজ বপন ও উচ্চ ফলনশীল জাত পরিচিতি সংবাদের তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে নেওয়া হয়েছে।
এগ্রিকেয়ার/এমএইচ
