অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বিশ্বের শীর্ষ পাম অয়েল উৎপাদক দেশ ইন্দোনেশিয়া। দেশটি রফতানি শুল্ক প্রত্যাহার করার কারণে চাপের মুখে পড়েছে মালয়েশিয়া। এখন দু দেশের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। পেরে না উঠায় কমছে মালয়েশিয়ান পাম অয়েলের দাম।

চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বেশির ভাগ সময়জুড়েই নিম্নমুখী থাকবে মালয়েশিয়ান পাম অয়েলের দাম। গতকাল দেশটির পণ্যবাজার বিষয়ক মন্ত্রী এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ইন্দোনেশিয়া পণ্যটির রফতানি শুল্ক প্রত্যাহার করায় বাজারদরে প্রভাব পড়েছে বলে জানান তিনি।

এক বিবৃতিতে পণ্যবাজার বিষয়কমন্ত্রী জুরাইদা কামারুদ্দিন বলেন, বিশ্বের শীর্ষ পাম অয়েল উৎপাদক দেশ ইন্দোনেশিয়া রফতানি শুল্ক প্রত্যাহার করায় দেশটির সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। অব্যাহতভাবে পাম অয়েলের বাড়তে থাকা মজুদ খালি করতেই দেশটি শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পড়তে পারেন: বিদেশে পাম ওয়েলের লিটার ৭১, দেশে ১৫৪ টাকা

চলতি মাসে ইন্দোনেশিয়া অপরিশোধিত পাম অয়েলের রফতানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। মূলত রফতানি বাড়ানোর পাশাপাশি আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকা মজুদ খালি করাই এর উদ্দেশ্য। পাশাপাশি রফতানির ক্ষেত্রে স্থানীয় বাজারে বিক্রির (ডিএমও নীতিমালা) বাধ্যবাধকতাও উঠিয়ে নেয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তথ্য বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত পাম অয়েলের তীব্র সংকট দেখা দেয়। তার ওপর ইন্দোনেশিয়া পণ্যটির রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে সংকট আরো প্রকট হয়ে ওঠে। এসব কারণে বছরের শুরুর দিকে মালয়েশিয়ান বাজার আদর্শ পাম অয়েলের দাম রেকর্ড সর্বোচ্চে উন্নীত হয়।

তবে ইন্দোনেশিয়া রফতানি নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার পর থেকেই কমতে শুরু করে মালয়েশিয়ান পাম অয়েলের দাম। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

জুরাইদা কামারুদ্দিন বলেন, ইন্দোনেশিয়ার এসব পদক্ষেপের কারণে জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপরিশোধিত পাম অয়েলের গড় দাম কমে টনপ্রতি ৪ হাজার ৮০০ (১ হাজার ৭৮ ডলার ৪১ সেন্ট) থেকে ৫ হাজার ২০০ (হাজার ১৬৮ ডলার ২৮ সেন্ট) রিঙ্গিতে অবস্থান করতে পারে। মালয়েশিয়ায় পণ্যটির ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদনও দাম কমাতে সহায়তা করবে বলে জানান তিনি।

পড়তে পারেন: মালয়েশিয়া থেকে পাম ওয়েল আমদানি কমাতে পারে চীন

মন্ত্রণালয়ের করা প্রাক্কলন অনুযায়ী, বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) মালয়েশিয়ান পাম অয়েলের দাম ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার রিঙ্গিতে উন্নীত হতে পারে। কারণ ওই সময় ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল রফতানি শুল্ক আবারো কার্যকর হবে। তাছাড়া উৎপাদন কমারও সম্ভাবনা রয়েছে।

পাম অয়েল নিয়ন্ত্রক সংস্থা মালয়েশিয়া পাম অয়েল বোর্ড (এমপিওবি) সম্প্র্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত মাসে দেশটিতে পাম অয়েলের মজুদ আগের মাসের তুলনায় ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১০ হাজার টনে।

প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, গত মাসে দেশটিতে পাম অয়েল উৎপাদন লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় রফতানি না বেড়ে উল্টো কমেছে। অর্থাৎ উৎপাদিত পাম অয়েল বিক্রি না হওয়ায় মজুদ বেড়েছে।

পড়তে পারেন: দাম কমায় তেল আমদানি কমিয়েছে ভারত

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ব্যাপক সুবিধা পায় মালয়েশিয়া। দেশটির রফতানি বেড়ে যায়। তবে ইন্দোনেশিয়া নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার পাশাপাশি পণ্যটির শুল্ক কমিয়ে দিলে আবারো দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়। এ কারণে রফতানি নিম্নমুখী হয়ে পড়ে।

এমপিওবির দেয়া তথ্য বলছে, গত মাসে মালয়েশিয়ার অপরিশোধিত পাম অয়েল রফতানি আগের মাসের তুলনায় ১৩ দশমিক ২৬ শতাংশ কমেছে। রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৯০ হাজার টনে। এর বিপরীতে পণ্যটির উৎপাদন ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টনে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ