মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়েছে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। ফিশিং ট্রলারভর্তি ইলিশ নিয়ে কূলে ফিরছেন জেলেরা। ইলিশের পাশাপাশি ধরা পড়ছে রূপচাঁদাসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। দামও সহনীয় পর্যায়ে। সাগরে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ায় ব্যবসায়ী ও জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে। আড়তগুলোতে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য।

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোতে বেড়েছে ইলিশ। ওজনে-আকৃতিতে যেমন পুষ্ট হয়েছে, তেমনি উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বিঘ্ন প্রজনন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের কারণে গত কয়েক বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু তারা এটাও বলছেন, জাটকা নিধন বন্ধ না হলে ইলিশের জৌলুস কমে যেতে পারে।

পড়তে পারেন: বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনে শীর্ষে বাংলাদেশ

বরিশালের পাইকারি বাজার পোর্ট রোডে গত বৃহস্পতিবার সকালে প্রায় দেড় হাজার মণ ইলিশ এসেছে। এর মধ্যে ৫০ মণ বড়, আর বাকি সব জাটকা। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৪৮ থেকে ৫০ হাজার, এক কেজি ওজনের ৪৫ হাজার, ৬০০ গ্রাম থেকে ৯৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৩৩ হাজার ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম মণ ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা, ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৩ হাজার, ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম ওজনের প্রতি মণ ৮-১০ হাজার এবং ১২ থেকে ১৪টায় এক কেজি হয় এমন ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

পড়তে পারেন: পুকুরে মিললো ১০ ইলিশ, এলাকায় চাঞ্চল্য

আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশের ইকোফিশ প্রকল্পের প্রধান ও মৎস্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবদুল ওয়াহাব  বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে ইলিশের নতুন নতুন অভয়াশ্রম এলাকা ঘোষণা করা ও সমুদ্রে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার পর ইলিশের উৎপাদনে গুণগত ও পরিমাণগত পরিবর্তন এসেছে। ফলে শীতকালে এত ইলিশ ধরা পড়ছে।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, কয়েক বছর ধরে বরিশাল বিভাগ দেশের মোট ইলিশের ৬৬ ভাগের জোগান দিচ্ছে। এ পরিমাণ প্রায় সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন। এতে শীত মৌসুমের বড় একটা অংশ যোগ হচ্ছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিভাগের বিভিন্ন নদ-নদীতে ১৯ হাজার ৫৯১ মেট্রিক টন ইলিশ পাওয়া যায়। ২০১৯ সালে কিছুটা কম থাকলেও এই সময়ে ১৭ হাজার মেট্রিক টনের মতো ইলিশ মিলেছিল। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ৯ হাজার ৬৫৭ মেট্রিক টন, ২০১৭–তে ১২ হাজার ২০ মেট্রিক টন এবং ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ২০ হাজার ৩৪৭ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছিল। তবে এ বছর শীত মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন ২৫ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যেতে পারে।

পড়তে পারেন: ইলিশের গায়ে চিহ্ন দিয়ে নদীতে ছাড়ছে ভারত

মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইলিশ সারা বছর ডিম ছাড়লেও ৮০ শতাংশ ইলিশ ডিম ছাড়ে আশ্বিনের পূর্ণিমায়। সে সময় (অক্টোবর মাস) ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ে। ইলিশ যে পরিমাণ ডিম ছাড়ে, তা থেকে মাত্র ২ শতাংশ জাটকা টিকে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে দুটি ধাপ গুরুত্বপূর্ণ। প্রজনন মৌসুমে বেশিসংখ্যক ডিম ছাড়ার জন্য মা ইলিশের নির্বিঘ্ন পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে জাটকা সুরক্ষা করা। কিন্তু এ বছর এ দুটি বিষয় নিশ্চিত করা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি।

বরিশাল মৎস্য বিভাগের উপপরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘নদীতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। তবে এত বড় এলাকায় কমসংখ্যক জনবল দিয়ে নজরদারি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ