ব্রির শততম জাত উদ্ভাবনের

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশে প্রচলিত ধানের জাতগুলো উচ্চতাপ সহ্য করতে না পারায় ফলন বিপরর‌্যয় দেখা যায়। এমন সময় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটাতে উচ্চতাপ সহনশীল ধান আবিষ্কারের দাবি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি’র) গবেষকদের।

ব্রি  সূত্রে জানা যায়, বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বুঝতে পেরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১৩ সাল থেকে উচ্চ তাপমাত্রা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের গবেষণা শুরু করে। উচ্চ তাপমাত্রা সহিষ্ণু এন২২ (ঘ২২) জাতের সাথে বোরো মওসুমের জনপ্রিয় আধুনিক জাত ব্রি ধান২৮ এর সঙ্করায়ণ করে মার্কার এসিসটেড ব্যাকক্রসিং পদ্ধতির মাধ্যমে একটি অগ্রগামী সারি নির্বাচন করেছে যা মধ্যম মাত্রার উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল।

এ সারিটি বর্তমানে আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষণ পর্যায়ে রয়েছে। ফলন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হলে এটিকে জাত হিসেবে অনুমোদনের জন্য জাতীয় বীজ বোর্ডে আবেদন করা হবে। জাত হিসেবে অনুমোদিত হলে ফুল ফোটা পর্যায়ে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি হলেও এ সারিটি আশানুরূপ ফলন দিতে পারবে।

এই গবেষণা দলের সদস্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা সমন্বয়ক ড. মুন্নুজান খানম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাপমাত্রা বাড়লে ধানের ফলনে বিরূপ প্রভাব পড়বে এমন ধারণা থেকে আমরা ৭ বছর আগে গবেষণা শুরু করি। গবেষণায় উঠে আসা নতুন সারিটিকে আমরা বার বার ট্রায়াল করছি। আমরা তাপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা দিয়ে পরীক্ষা করেছি। এই তাপমাত্রায়ও ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।

আরোও পড়ুন: তাপদাহ ও ঝড়ো আবহাওয়ার পরবর্তীতে বোরো ধানের পরিচর্যা

গতকাল রোববার (১৮ এপ্রিল ২০২১) বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ তাপ সহনশীল ধানের জাত এবং এ সংক্রান্ত গবেষণার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি ধানের গবেষণা প্লটসহ ব্লাস্ট ও বিএলবি প্রতিরোধী ধানের অগ্রগামী জাত, ব্রি উদ্ভাবিত বাসমতি টাইপ ধান, হাইব্রিড ধানের গবেষণা এবং ব্ল্যাক রাইসসহ বিভিন্ন উন্নত গুণসম্পন্ন জাতের প্লটগুলো পরিদর্শন করে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশজুড়ে একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে দেশের মেহনতি কৃষক ভাইদের এমন বিপর্যয় এর মুখোমুখি হতে না হয় সেজন্যেই উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল এবং রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধক উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনের বিষয়ে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। পরিদর্শনকালে ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর মন্ত্রীকে বিভিন্ন গবেষণা প্লট সর্ম্পকে ব্রিফ করেন।

পরিদর্শনকালে কৃষিমন্ত্রী সুপার হাইব্রিড ইউএস৮৮ এবং ব্রি উদ্ভাবিত বোরো মওসুমের ব্রি হাইব্রিড ধান৩, ব্রি হাইব্রিড ধান৫, ব্রি হাইব্রিড ধান৮ (প্রস্তাবিত) এবং বহুল প্রচলিত হাইব্রিড ঝখ-৮ ও তেজ গোল্ডের ফলনের তুলনামূলক পরীক্ষণ এবং ব্রি হাইব্রিড ধান৫ এর বীজ উৎপাদন প্লট পরিদর্শন করেন।

এ সময় বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার, ব্রি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. কৃষ্ণপদ হালদার, পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আবু বকর ছিদ্দিক এবং বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে রোববার সকালে কৃষিমন্ত্রী গাজীপুরের নীলের পাড়ায় কম্বাইন হার্ভেস্টারের মাধ্যমে স্কয়ার হসপিটালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রফেসর ডা. সানোয়ার হোসেনের আবাদকৃত ব্রি ধান ৫০ এর শস্য কর্তন প্রত্যক্ষ করেন।

উচ্চতাপ সহনশীল ধান আবিষ্কারের দাবি ব্রি’র, আর পুড়বে না ধান শিরোনামের সংবাদটির তথ্য ব্রি’র সিনিয়র লিয়াজোঁ অফিসার কৃষিবিদ মো. আব্দুল মোমিন নিশ্চিত করেছেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ