আন্তর্জাতিক ‍কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: এ বছরের (২০১৮ সাল) প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) ভারতে চা উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ শতাংশ কমেছে। ধারণা করা হচ্ছে বছরের শুরু থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্যের চা উৎপাদনকারী এলাকাগুলোয় প্রয়োজনের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় কমে গেছে চা উৎপাদন।

এ কারণে কমেছে চায়ের উৎপাদন। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। বাজারে এখন চায়ের দামে গরম ভাব বিরাজ করছে। গত মাস জুনে দেশটির বাজারে চায়ের গড় দাম আগের বছরের জুনের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেড়েছে। খবর ইকোনমিক টাইমস।

টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার (টিবিআই) সূত্র জানায়, গত বছর ২০১৭ সালে ভারতে ১৩২ কোটি ১০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশটিতে সাকল্যে ২৯ কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি-মে সময়ের তুলনায় দেশটিতে পানীয় পণ্যটির উৎপাদনে ৫ শতাংশ মন্দাভাব দেখা গেছে।

এর কারণ হিসেবে বিদ্যমান প্রতিকূল আবহাওয়াকে দায়ী করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। কলকাতা টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের শুরু থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের বাগানগুলোয় বৃষ্টিপাত তুলনামূলক কম হওয়ায় চা পাতা ভালোমতো বিকশিত হতে পারেনি। ফলে প্রথম পাঁচ মাসে চা উৎপাদন কম হয়েছে।

এদিকে চা উৎপাদন হ্রাসে ভারতের বাজারে চায়ের দামে চাঙ্গাভাব দেখা গেছে। কলকাতা ও গৌহাটির নিলামকেন্দ্রে গত জুনে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ১৬১ রুপিতে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালের জুনে এ দুই রাজ্যে চায়ের গড় দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৫২ টাকার সামান্য কম।

সেই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে পানীয় পণ্যটির গড় দাম সর্বোচ্চ ৯ রুপি বেড়েছে।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় চায়ের চাহিদা রয়েছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী দিনগুলোয় পানীয় পণ্যটির চাহিদা আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদন হ্রাসের খবর হতাশাজনক। এর প্রভাব পড়েছে চায়ের বাজারেও। ভারতের বাজারে বছরান্তে চায়ের গড় দাম প্রায় ৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

ভারতীয় ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠান আইসিআরএ লিমিটেডের এক নোটে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে চায়ের চাহিদা আরো বাড়বে। উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব না হলে এ পরিস্থিতিতে পানীয় পণ্যটির দাম বর্তমানের তুলনায় আরো চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট (করপোরেট) কৌশিক দাস বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা ভারতীয় চা রফতানিকারকদের জন্য একটি বড় সুযোগ। এটি কাজে লাগিয়ে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পানীয় পণ্যটির রফতানি বাড়ানো সম্ভব।

বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতে উৎপাদিত প্রচলিত জাতের চায়ের চাহিদা কয়েক গুণ বাড়তে পারে। তবে একই সময়ে দেশে চায়ের উৎপাদন কমতে থাকলে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে ভারতের চা উৎপাদন ও রফতানি খাত। সূত্র: বণিক বার্তা।