নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজধানীর বাজারগুলোতে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১৫ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। দাম বেড়েছে তেল, আটাসহ ব্রয়লার মুরগিরও।

করোনা শুরুর পর থেকে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা যেন কমছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে নাভিশ্বাস ভোক্তাদের।শুক্রবার রাজধানীর বাজারে দেখা গেছে, পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশী পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১৫ টাকা। বেড়েছে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও।

পড়তে পারেন: ফের দাম বাড়লো ব্রয়লার-গরুর মাংস, চাল, তেল, চিনি, ডিমের

এছাড়া চাল(মোটা), পামওয়েল (লুজ, সুপার), সয়াবিন (লুজ, বোতল), জিরা, পিয়াজ(দেশী,আম), মুরগী ব্রয়লার, গরু মাংস, চিনি, ডিম এর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। চাল(মাঝারী), রসুন (দেশী) নতুন/পুরাতন, হলুদ(আম) এর মূল্য হ্রাস পেয়েছে। অন্যান্য পণ্যের মূল্য অপরিবর্তীত রয়েছে।

গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও, আজ রাজধানীর বেশিরভাগ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কৃষক ফসল উত্তোলন করে ফেলায় সাময়িকভাবে সংকট তৈরি হয়েছে।

পড়তে পারেন: দাম বেড়েছে ব্রয়লার ও দেশীসহ সব ধরনের মুরগির

ভোক্তাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্যাব বলছে, বাজারের নিয়মিত তদারকি না হলে এবং পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানো না গেলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না।

বাজারে দাম বেড়েছে ভোজ্যতেল, আটা এবং মুরগিরও। প্যাকেটজাত আটা কেজিতে ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে।

তেলের দাম লিটারে বেড়েছে পাঁচ টাকা। সয়াবিন তেলে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। নতুন করে না বাড়লেও আগের মতো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। সরবরাহ ভালো থাকলেও সবজি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

এদিকে, বাজারে শীতকালীন সরবজির সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও দাম বেশি বলছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা জানান, সরবরাহ কমার পাশাপাশি পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে দাম।

পড়তে পারেন: সপ্তহের ব্যবধানে ডিম-মুরগিসহ দাম বেড়েছে ১৪ পণ্যের

রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে দাবি আড়তদারদের। এ বিষয়ে আড়তদাররা বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা বেশি আসায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশি হলেও ভবিষ্যতে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনা যেন সত্যি হতে চলেছে।

উল্লেখ্য, পাবনা মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবারে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে সেসব এলাকার ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ ওঠার ফলে দেশের বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। সেইসঙ্গে দেশীয় পেঁয়াজের দাম অনেকটা কমে ১৮-১৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন হলেও দাম বাড়তি হওয়ায় স্থানীয় বাজারগুলোতেও দাম বাড়তে শুরু করেছে।

পড়তে পারেন: দেশীর কাছে হার ভারতীয় পেঁয়াজের

এ কারণে দেশের বিভিন্ন মোকামগুলোতে আগে যেখানে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা ছিল, এখন সেসব মোকামে দেশীয় পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। আর চাহিদা বাড়ার কারণে দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এতে দেশের বাজারে আমদানি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা আগের তুলনায় অনেকাংশে কমে এসেছিল। এর পরেও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে পেঁয়াজের আমদানি অব্যাহত রয়েছে। দেশের বাজারে চাহিদার তুলনায় পণ্যটির সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কম হওয়ার পর আবার দাম বাড়লো।

এদিকে পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় বাংলাদেশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এমনই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) গাজীপুর আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা ।

পড়তে পারেন: দেশীর কাছে হার ভারতীয় পেঁয়াজের

বিজ্ঞানীরা জানান, বারি-৫ পেঁয়াজ আগাম ও নাবি খরিপ মৌসুমে আবাদ উপযোগী। এটি স্বল্পমেয়াদি গ্রীষ্মকালীন হলেও সারা বছর চাষের উপযোগী উচ্চ ফলনশীল জাত। তাঁরা আরও জানান, দেশে পেঁয়াজের হেক্টরপ্রতি জাতীয় গড় ফলন ১০ দশমিক ৫৬ টন হলেও বারি পেঁয়াজ-৫ হেক্টরপ্রতি ১৬-২২ টন উৎপাদিত হয়। এই জাতের পেঁয়াজ চাষ হলে আমাদের দেশ একদিন পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে।

তারা আরোও বলেন, ‘প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ৩৫-৩৬ লাখ মেট্রিক টন। সেখানে গত বছর উৎপাদন হয়েছে ৩২ লাখ মেট্রিক টন। গত এক বছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় আট লাখ মেট্রিক টনে।

বিজ্ঞানীরা বলেন, ‘দেশের কৃষকরা নতুন জাতের পেঁয়াজ সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে পেঁয়াজ উৎপাদনে খুব শিগগিরই আমাদের দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে।’

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ