এগ্রিকেয়ার২৪.কম ফসল ডেস্ক: গত কয়েক বছরে পাট নিয়ে নানা চমক ও উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনা ঘটেছে। জিনোম আবিষ্কার, পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধিতে সরকারি প্রণোদনা এবং সর্বশেষ পাট থেকে পলিথিন আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু একাধিক কারণে ফসলটির উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কৃষকরা।

গত কয়েক বছরে রংপুর জেলায় পাটের আবাদ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। পাট চাষ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশী পাট বীজের সংকট, অসময়ে বৃষ্টিপাত ও পাটের বাজারমূল্য কমে যাওয়ায় চলতি মৌসুমে (২০১৭-১৮) রংপুরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।

জেলা কৃষি অফিস বলছে, ভুট্টা এবং ধানের দাম ভালো পাওয়ায় পাটের জমিতে রোপা আউশ ধান এবং ভুট্টার আবাদ বেড়েছে। এছাড়া অসময়ে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির কারণেও অনেকে পাট আবাদ ছেড়ে দিয়েছেন।

পাট চাষ ছেড়ে দেয়ার পেছনে ভুট্টা ও ধানে তুলনামূলক ভালো দাম পাওয়ার পাশাপাশি আরো কিছু কারণ উল্লেখ করেন সদর উপজেলার চন্দপাট ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল হালিম।

তিনি জানান, এক সময়ে নিয়মিত পাট চাষ করতেন। কিন্তু পরিশ্রম অনুযায়ী আর তেমন লাভ হয় না। এখন প্রায় দুই একর জমিতে রোপা আউশ এবং ভুট্টার আবাদ করছেন। এছাড়া ইদানীং পাট বোনার পর পরই বৃষ্টি হচ্ছে, এতে বীজ গজানো ব্যাহত হয়। জলাশয়ের অভাবে পাট জাগ দেয়া নিয়েও ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।

চলতি বছরও আগাম বর্ষার কারণে বিপাকে পড়েছেন পাটচাষীরা। বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেকের পাটক্ষেতে পানি জমে গেছে। মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, দ্রুত পানি সরে না গেলে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাবেন না।

পাটের আবাদ কমে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণের কথা জানান আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ খোন্দকার মেজবাহুল ইসলাম।

তিনি বলেন, শুধু রংপুরে নয়, দেশের অনেক জায়গায় পাটের আবাদ কমছে। এর অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে: বিদেশী ভেজাল বীজের আধিক্য, নিজস্ব বীজ সংগ্রহে কৃষকদের অনীহা।

বীজ নিয়ে সমস্যার কথা জানান গংগাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের খামার মোহনা গ্রামের কৃষক সামিউল ইসলাম। দুবছর আগে তিনি পাটের আবাদ ছেড়ে দিয়েছেন।

তিনি জানান, এর মূল কারণ বীজ অঙ্কুরোদ্গমের হার কম, কিছু গাছ ছোট থাকতেই ডগা ফেটে যায়। তাছাড়া পাটের ভালো ফলন পেতে চাইলে জমিতে সারাক্ষণ লেগে থাকতে হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুর জেলায় দেশী এবং তোষা পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমি এবং ১ লাখ ২৪ হাজার ৮৫২ বেল। সেখানে পাট চাষ হয়েছে মাত্র ৮ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে। ফলে প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজার বেল পাট কম উৎপাদনের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কৃষি অফিসের একটি সূত্র জানায়, পাটের আবাদ কমলেও আবাদ বেড়েছে রোপা আউশ ধান ও ভুট্টার। এখন পর্যন্ত আউশের আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে। এ আউশ রোপণ চলবে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। গত বছর রোপা আউশের আবাদ হয়েছিল ১৬ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সরওয়ারুল হক জানান, কৃষকরা যে ফসলে লাভ পান, সে ফসল আবাদে ঝোঁকেন। তাই পাটের আবাদ কমিয়ে দিয়েছেন অনেক কৃষক। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিরূপ আবহাওয়ার কারণেও চলতি বছর রংপুর জেলায় পাট চাষ কম হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সূত্র: বণিক বার্তা।