নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ভোজ্যতেলের বাজারে যেন উঠানামা কমছেই না। সারাবিশ্বে পাম অয়েল রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণায় এক লাফে সয়াবিনের লিটারে ২০ টাকা বাড়লো ।

দাম বাড়ার ঘটনায় বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও। মিলছে না সরকার নির্ধারিত দামে। সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, সয়াবিনের দাম প্রতি লটারে ২০ টাকা এবং পাম অয়েলের দাম প্রতি লিটারে ২৫ টাকা বেড়েছে।

বাজারে তেলের কানাঘুষা নিয়ে বের হচ্ছে তথ্য। মিল মালিকরা সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। তবে মিল মালিকরা বলছেন তারা চাহিদা অনুযায়ী তেলের জোগান দিয়ে যাচ্ছেন। সরবরাহ কমানো হয়নি।

পড়তে পারেন: বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন তেল সরবরাহকারী দেশ আর্জেন্টিনা

সূত্র জানায়, দেশে বছরে শিল্প ও খাদ্য মিলে সাড়ে ২৪ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ২০ লাখ টন ব্যবহৃত হয় খাদ্য হিসাবে। বাকি ৪ লাখ টনের বেশি ব্যবহৃত হয় শিল্প খাতে। দেশে মোট চাহিদার ৬৭ শতাংশই পাম অয়েল দিয়ে মেটানো হয়। এর মধ্যে খাদ্যের চাহিদা ৫৮ শতাংশ। ৩৭ শতাংশ মেটানো হয় সয়াবিন তেল এবং বাকি ৫ শতাংশ অন্যান্য তেল দিয়ে। সয়াবিনের চেয়ে পাম অয়েলের আমদানি বেশি হলেও বাজারে বেশি পাওয়া যায় সয়াবিন তেল। অনেক সময় সয়াবিনের নামে পাম অয়েল বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া যায়।

চলতি সপ্তাহের শনিবার পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ইন্দোনেশিয়া। দেশটি নিজেদের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমাতে ও জোগান বাড়াতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, বাড়তি দাম কার্যকর হয়নি। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে। এখন যেসব তেল রপ্তানির জন্য জাহাজীকরণের পাইপলাইনে রয়েছে, সেগুলো রপ্তানি করা যাবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এরপর থেকে আর তেল রপ্তানি করা যাবে না। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

পড়তে পারেন: সয়াবিন উৎপাদনে সার সঙ্কটে ব্রাজিল

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া থেকে যেসব পাম অয়েল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে যেসব এলসির অর্থ পরিশোধ করা তা দেশে আনার জন্য ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করছেন। তবে এখন আর নতুন এলসি খোলা হচ্ছে না। একই সঙ্গে নতুন করে এলসির অর্থ পরিশোধও বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী পাম অয়েলের ৩৯ শতাংশই রপ্তানি করে ইন্দোনেশিয়া। মালয়েশিয়া করে ২৭ শতাংশ। বাকি পাম অয়েল রপ্তানি করে অন্যান্য দেশ। তবে মালয়েশিয়া এখনো পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ করেনি। দুটি দেশই পাম অয়েল উৎপাদন সোয়া ৫ শতাংশ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া উৎপাদন করবে ৪ কোটি ৭১ লাখ টন এবং মালয়েশিয়া করবে ১ কোটি ৮৯ লাখ টন।

ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণার পর একদিনের ব্যবধানে রোববার দেশের বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকার নির্ধারিত মূল্য হচ্ছে ১৩৬ টাকা। কোথাও এই দরে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়তি মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও করে ফেলেছেন। তারা মনে করছেন একদিনে আটকে রাখতে পারলেই দাম বেশি পাওয়া যাবে।

পড়তে পারেন: কোন তেল ব্যবহার করবেন-সয়াবিন নাকি সরিষা?

অন্যদিকে সরকার প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু ওই দামে বাজারে পাম অয়েল পাওয়া যায়নি। এক মাস আগে ছিল ১৪০ টাকা লিটার। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০ টাকা। দুই দিন আগে ছিল ১৬০ টাকা। রোববার বাজারে প্রতি লিটার পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১৭৫ টাকা।

বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, তেল নিয়ে যাতে ঈদের আগে নতুন করে নৈরাজ্য না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দাম বেড়ে যাওয়ার তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। আমরা ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করব। কোনো দেশ এখন যদি রপ্তানি বন্ধ করে, এতে দেশের বাজারে এখনই দাম বেড়ে যাওয়ার কথা নয়।

কারণ এই প্রভাব বাজারে পড়তে সময় লাগবে। আমরা তা খতিয়ে দেখছি। পাশাপাশি ভোজ্যতেল নিয়ে যাতে কোনো ধরনের কারসাজি বা কৃত্রিম সংকট না করতে পারে, সেজন্য পর্যাপ্ত নজরদারি করা হচ্ছে। মিল থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

মিলে কী পরিমানে মজুত আছে, সে হিসাব নেওয়া হচ্ছে। কী দরে আমদানি করা হয়েছে, সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। এছাড়া ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বাড়াতে প্রস্তাব দিয়েছে। ঈদের পর সভা করে দাম বাড়ানো হবে কি না, এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দেবে। পরিস্থিতি যা হোক, তেল নিয়ে আর নৈরাজ্য হতে দেওয়া হবে না।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ