আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন তেল সরবরাহকারী দেশ আর্জেন্টিনা। দেশটিতে খরার কারণে সয়াবিন তেলের উৎপাদন ভালো হয়নি। এতে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলটির দাম এমনিতেই ঊর্ধ্বমুখী।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে আবারও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল রফতানি বন্ধের ঘোষণায় দাম বাড়ছে বলে জানায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।

বিশ্বজুড়ে পাম অয়েলের বিকল্প অন্যান্য তেলের সরবরাহ এমনিতেই অপ্রতুল। তার ওপর ইন্দোনেশিয়ার এ সিদ্ধান্তে সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইউক্রেন বিশ্বের শীর্ষ সূর্যমুখী তেল উৎপাদক ও রফতানিকারক। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া দেশটিতে হামলা চালালে দেশটির সব ধরনের পণ্য রফতানিই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। কমতে থাকে সূর্যমুখী তেলের সরবরাহ।

শিল্পসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গত বছর করোনা মহামারীর বিধিনিষেধ শিথিল হতে শুরু করলে খাদ্য ও বায়োডিজেল হিসেবে বাড়তে শুরু করে ভোজ্যতেলের চাহিদা। মূলত তার পরই বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের সংকট বাড়তে শুরু করে।

পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে তেলবীজ মাড়াইকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। করোনার কারণে অন্তত এক বছরের বেশি সময় এসব প্রতিষ্ঠানে মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

তথ্য বলছে, শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে প্রতি পাউন্ড সয়াবিন তেলের দাম ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে পাউন্ডপ্রতি ৮৩ দশমিক ২১ সেন্টে উন্নীত হয়েছে, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত সয়াবিন তেলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

২৮ এপ্রিল থেকে ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল রফতানি বন্ধের ঘোষণা কার্যকর হবে। দেশটির এ সিদ্ধান্তে খাদ্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

ভোজ্যতেল হিসেবেই সাধারণত পাম অয়েল ব্যবহার হয়। রান্নার পাশাপাশি কেকসহ মোড়কজাত বিভিন্ন খাবার তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ পাম অয়েল। শুধু তাই নয়, প্রসাধনী তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হয়। ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রফতানি বন্ধ ঘোষণা করায় বিশ্বজুড়ে এসব পণ্য উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে। বায়োডিজেল বা খাদ্যপণ্য উৎপাদন—যেকোনো একটির জন্য পাম অয়েলকে বেছে নিতে বাধ্য হবে ভোক্তা দেশগুলোর সরকার।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ পাম অয়েল সরবরাহ হয় তার অর্ধেকেরও বেশি আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে। এক ভিডিও বার্তায় দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বের শীর্ষ দুটি খাদ্যশস্য উৎপাদনকারী দেশ। দেশ দুটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়ছে রেকর্ড উচ্চতায়। এ পরিস্থিতিতে নিজের দেশে খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে চান তিনি।

প্রেসিডেন্ট বলেন, স্থানীয় বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে পাম অয়েলের ব্যাপক পরিমাণ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও যাচাই-বাছাই করব।

সলভেন্ট এক্সট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (এসইএ) প্রেসিডেন্ট অতুল চতুর্বেদী বলেন, ইন্দোনেশিয়ার এ সিদ্ধান্তে শীর্ষ আমদানিকারক ভারতসহ বিশ্বের সব ব্যবহারকারী দেশ ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এ সিদ্ধান্ত একেবারেই অপ্রত্যাশিত ও দুর্ভাগ্যজনক।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ