ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ব্রাজিল হলো ভুট্টা ও সয়াবিনের অন্যতম বড় আধার।  তবে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে শস্যপণ্য দুটোর সামান্য পরিমাণ হলেও আমদানি করে লাতিন আমেরিকার দেশটি।

কিন্তু এর বিপরীতে আন্তর্জাতিক খাদ্যশস্যের বাজারে ভুট্টা ও সয়াবিনের অন্যতম সরবরাহকারী বা অন্যতম শীর্ষ রফতানিকারকের খেতাব রয়েছে তাদের ঝুলিতে। যে কারণে চলতি বছরে করোনা মহামারীর শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে রেকর্ড পরিমাণ ভুট্টা ও সয়াবিন সরবরাহ করেছে দেশটি। আর এতেই খাদ্যশস্য দুটোর মজুদের পরিমাণ দ্রুত কমে আসছে। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতেই এখন আমদানিতে ঝুঁকতে হচ্ছে দেশটিকে। আর শীর্ষ রফতানিকারক দেশটির আমদানিনির্ভর হতে চলা যতটা না আশ্চর্যের, তার চেয়ে বেশি আশ্চর্যের বিষয় হলো ব্রাজিল তাদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকেই ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানির কথা ভাবছে। খবর রয়টার্স

আরও পড়ুন: চাল উৎপাদন কমাতে চায় জাপান

ব্রাজিলের ভুট্টা ও সয়াবিনের আমদানির বিষয়টি কতটা আশ্চর্যের সেটি বুঝতে হলে পরিসংখ্যানগত দিকে তাকাতে হবে। সেটির জন্য পেছনের দিকে তাকানো যাক। দেশটির গত পাঁচ ক্যালেন্ডার বছরের দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে, এ সময়ে গড়ে দেশটি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বছরে ২ লাখ ৫৮ হাজার ২২১ টন সয়াবিন ও ১৪ লাখ টন ভুট্টা আমদানি করেছে। যার ৯৬ শতাংশ সয়াবিন ও ৬৭ শতাংশ ভুট্টা আবার এসেছে আরেক লাতিন দেশ প্যারাগুয়ে থেকে।

এর বিপরীতে গত পাঁচ বছরে দেশটি আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে ৬ কোটি ৬০ লাখ টন সয়াবিন এবং ২ কোটি ৯০ লাখ টন ভুট্টা সরবরাহ করেছে। এ পরিসংখ্যান থেকে দুটো বিষয় উঠে এসেছে। একটি হলো খাদ্যশস্য দুটোর আমদানি-রফতানিতে বিশাল ব্যবধান। অন্যটি হলে যেটুকু আমদানি হয়েছে তার প্রায় পুরোটা এসেছে নিজস্ব ব্লক থেকে। আর খাদ্যশস্য দুটোর বাজারে ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র একজন অন্যজনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে এখন অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংকটে লাতিন আমেরিকার ব্লক রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশটি থেকে আমদানি করার বিষয়টি বেশ আলোচনায় এসেছে। যদিও ব্রাজিল শিগগিরই যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য দুটোর আমদানি করছে, এমন তথ্য এখনো নিশ্চিত করেনি দুই পক্ষের কেউই।

তবে গত সপ্তাহে এক সিদ্ধান্তে ব্রাজিল সরকার জানায়, ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানির ওপর ৮ শতাংশ শুল্কারোপ সাময়িকভাবে তুলে নেয়া হবে। অবশ্য এটা মার্কোসুরভুক্ত (লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশের জোট) দেশগুলোর বাইরের দেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। খাদ্যমূল্যের দাম কমাতেই এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। সম্প্রতি খাদ্যপণ্য দুটোর অভ্যন্তরীণ সংকটে মূল্য নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি তৈরি হয়েছে। যে কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।

পোলট্রি ও পশু খামার খাতের খরচের ৭০ শতাংশই হয় সয়াবিন মিল ও ভুট্টার পেছনে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পণ্য দুটোর অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণে ফিডের বাজার বেশ চড়া। এতে ব্রাজিলের বিখ্যাত পোলট্রি ও পশুখাদ্য খাতে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন ব্যাহত হচ্ছে। যে কারণে ফিডের দাম কমাতে এ খাতের সংগঠনগুলো সরকারকে ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানির ওপর শুল্ক তুলে দেয়ার আবেদন জানায়।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানি করে ব্রাজিলের সরবরাহ ঘাটতি পূরণের আগে লাতিন আমেরিকার দেশটিকে বেশ কিছু বাধা কাটিয়ে উঠতে হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে শিল্প বিশেষজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ ও ব্রাজিলের ন্যাশনাল ফুড সাপ্লাই কোম্পানি (কোনাব)। এখন প্রশ্ন হলো, যদি যুক্তরাষ্ট্র এ সরবরাহকারী দেশ না হয় তবে কোন দেশ কিংবা দেশগুলোর জন্য আগে থেকেই শুল্কমুক্ত সুবিধার ঘোষণা দিল ব্রাজিল?

কোনাব বলছে, মার্কোসুরের বাইরের একমাত্র দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রেরই সক্ষমতা আছে ব্রাজিলে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সয়াবিন রফতানি করার। যদিও যুক্তরাষ্ট্র কৃষি বিভাগের বিশ্লেষণ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি মূল্য আর সমুদ্রপথে চালানের ব্যয় মিলিয়ে কাজটি তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।

আরও পড়ুন:

এক্ষেত্রে আরো কয়েকটি বিষয় সামনে এনেছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ। তারা বলছে, জিনগতভাবে পরিবর্তিত (জিএম) বৈচিত্র্যময় ভুট্টা ও সয়াবিন উৎপাদন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে, যা ব্রাজিল সচরাচর অনুমোদন দেয় না। এজন্য আমদানি করার ক্ষেত্রে বিশেষ আবেদনের প্রয়োজন পড়বে, যা খুব দ্রুত নাও হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র কৃষি বিভাগ আরো বলছে, ব্রাজিলের শস্য ও তেলবীজ টার্মিনালগুলো তৈরিই করা হয়েছে শুধু রফতানি কার্যক্রমকে মাথায় রেখে, আমদানির কথা ভেবে নয়। কাজেই এসবকে এখন আমদানি উপযোগী টার্মিনাল হিসেবে রূপান্তর করার কাজটি বেশ ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হবে। আবার সয়াবিন যেখানে গুঁড়া করা হয় সেই অঞ্চলটি ব্রাজিলের অনেক ভেতরে, ফলে এখানেও বিশাল ব্যয়ের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।