আনোয়ার হোসেন শাহীন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কঠোর পরিশ্রম ও সাধনায় কৃষিতে সফল উদ্যোক্তা ময়মনসিংহের গৌরীপুরের তরুণ ও অগ্রগামী কৃষক আবুল ফজল বলেন, আমি যখন কৃষি খামার শুরু করি তখন এলাকাবাসি আমাকে পাগল বলতো। এখন আমি “কৃষক পুরস্কার” ২০২২ এর ১ম পুরস্কার লাভ করেছি। আমি এখন সফল।

কৃষক আবুল ফজল আধুনিক সুপরিকল্পিত এবং সুবিন্যস্তভাবে কৃষি কাজে যত্নের সাথে গড়ে তুলেন ফজল এগ্রো কৃষি খামার। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষকরা আসছেন তাঁর কাছে পরামর্শ নিতে। তাই তিনি কৃষকদের পরামর্শ দিতে কৃষি খামারেই খুলেছেন কৃষকদের জন্য “কৃষক পরামর্শ কেন্দ্র”। কৃষকরা তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে কৃষি কাজে লাভবানও হচ্ছেন।

কৃষিতে অনবদ্য অবদানের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক ফসলের নিবিরতা বৃদ্ধিকরন প্রকল্পে গত ২৮ নভেম্বর’ বৃহত্তর মময়মনসিংহ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে কৃষক ক্যাগরিতে “কৃষক পুরস্কার” ২০২২ এর ১ম পুরস্কার লাভ করেন আবুল ফজল।

ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের বালুচরা গ্রামের মোঃ আব্দুল কাইয়ুমের বড় সন্তান আবুল ফজল। নিম্ন মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান। পরিবারের আর্থিক অসচ্চলতার দরুন ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় ২২ বছর চাকুরী করে ২০২০ সালে করোনা কালিন সময়ে ফ্যাক্টরির ছাটাই তালিকায় নাম উঠায় চলে আসেন বাড়ীতে। চাকুরী অবস্থায় তার চিন্তা ছিল নিজে কৃষি কাজের মাধ্যমে কিছু করার সে ভাবনা থেকেই – দৃড় মনোবল নিয়ে সিদ্ধান্তনেন কৃষিকাজ করার।

প্রথমেই বাড়ীর পাশ্বে ব্যাক্তি মালিকানাধীন ২৭০ শতাংশের একটি পুরাতন ভবনের ইট পাথরের স্তুপ পরিস্কার করে চাষাবাদ যোগ্য করে তুলেন এবং নিজের ১০২ শতাংশ জায়গাসহ মোট ৩৭২ শতক জমি নিয়ে গড়ে তুলেন কৃষি খামার।

প্রথমেই তিনি দেশের প্রানী সম্পদ গরু ছাগলের খাবারের উন্নত মানের ঘাস জারা হাইব্রিড, অজানা হাইব্রিড, নেপিয়ার ঘাস সহ চাষ করেন, সিজনাল শাক সবজি, ৭০০ সজিনা ঘাস, টমেটো, লাউ,বেগুন, মরিচ,সিম,করলাসহ বিভিন্ন জাতের সিজনাল ও অফ সিজনাল শাক সবজির। প্রথম তিনি আর্থিকভাবে লোকশানে মনোবল ভেঙ্গে যায় তারপরও মনোবল হারাননি।

এলাকাবাসিও তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করতো ও পাগল বলতো। বর্তমানে তিনি শাঁক সবজি ও ঘাষ উৎপাদন করে এখন তিনি সবার চোখে একজন আদর্শ কৃষক। তার এমন কাজে সফলতা পাওয়ায় কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নে।

এছাড়া তিনি প্রথমে ৪টি গরু দিয়ে শুরু করা গরুর খামারটিতে বর্তমানে ১৪ টি গরু রয়েছে এর আগে ৪টি গরুও বিক্রি করেছেন। গরুর দুধ বিক্রি করে গরুর লালনপালন খরচ মিটে যায়। গরুর খামারের গরুর গোবর দিয়ে তিনি করেছেন কেচো কমপোস্ট সার যা জৈব স্যার হিসেবে কৃষিকাজে ব্যবহার করেন।

আবুল ফজল এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, বিভিন্ন সবজির চারা, ঘাসের কাটিং করে সুলভ মূল্যে চাষীদের কাছে খুচরা অথবা পাইকারী দামে বিক্রি করা হয়। শুধু তাই নয়, নিজ এলাকা ও বিভিন্ন স্থান থেকে যারা কৃষি খামার করতে আগ্রহী তাদেরকে খামার করার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ, কলাকৌশলসহ যাবতীয় পরিকল্পনা, উৎপাদন, পরিচর্যা, গাছের রোগ বালাই দমন সহ এসব বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করে থাকি। খামারেই করেছি কৃষি পরামর্শ কেন্দ্র ।

এতে বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষকরা জমায়েত হয়ে পরামর্শ নেন আমার কাছ থেকে। এতে নিরাপদ পদ্ধতিতে ফল-সবজী উৎপাদনের কলাকৌশল, মাল্চিং পদ্ধতি, সবজী উৎপাদনে ফেরোমন ট্র্যাপ,জৈব সার ব্যবহার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কৃষক ও নতুন উদ্যোক্তাদের সাথে আলোচনা করি।

আবুল ফজলের এমন উদ্যোগে এলাকা ও দুর দুরান্ত থেকে কৃষকরা পরামর্শ নিয়ে কাজ করে সফল হচ্ছেন। তাছাড়া তিনি অত্যন্ত সুলভ মূল্যে চারা সরবরাহ করে থাকেন যাতে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হতে পারে।

বাগানের রোগ বালাই, পোকা-মাকড় দমন, সার প্রয়োগ, পানি সেচ সহ পরিচর্যার বিষয়ে আবুল ফজল জানান, ফসলের রোগ বালাই পোকা মাকড় দমনের জন্য প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, প্রয়োজনে কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের পরামর্শের পাশাপাশা ইউটিউব থেকেও তিনি প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেন।

বাগানের উৎপাদিত ফলমূল সবজী বাজারজাত করণের প্রশ্নে আবুল ফজল জানান, তার খামারের উৎপাদিত পন্যের অনেক চাহিদা খামার থেকেই পাইকারি ও খুচরা বিক্রি হয়। বিষমুক্ত উৎপাদন থাকার অনেকেই নিজেরা এসে নিয়ে যান।

আবুল ফজলের কৃষি খামারটির খোঁজ খবর রাখেন এবং প্রয়োজনে পরিদর্শন করে পরামর্শ দেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

বিভিন্ন উন্নত প্রজাতির ঘাষ চাষ করে নিজের গরুর খামারের চাহিদা পুরন করে তিনি ঘাস ও ঘাসের কাটিং বিক্রি শুরু করেন।এতে এলাকা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এসে ঘাসের কাটিং নিয়ে যান। এতে দেশের প্রাণী সম্পদের পুষ্টি সম্পন্ন খাদ্যের ব্যাপক উন্নতি ঘটাতে কাজ করছেন।

বর্তমানে আবুল ফজল তার আধুনিক কৃষি কাজে মনোনিবেশ করে ব্যবসার যেমন প্রসার করছেন তেমনি বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদন করে এলাকার সবজি উৎপদনে অবদান রাখছেন।

বর্তমানে তিনি কোন ঋণ গ্রহন করেননি। তবে ভবিষ্যতে তিনি যদি কোন ব্যাংক থেকে আর্থিক সহযোগিতা পান তাহলে বড় ধরনের কোন কৃষি প্রকল্প হাতে নেবেন বলে জানান। সফল উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি এলাকার যেমন সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কাজে অবদান রাখছেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ