নাটোর প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নাটোরের গুরুদাসপুরে খামারি ও গৃহিনীর দায়িত্ব পালন করেও পড়াশোনা চালিয়ে যান মা। ছেলের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মা ও ছেলে একসাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন মাধ্যমিক পরীক্ষা।

মা তাহমিনা বিনতে হক (৩৪) খামারী ও গৃহিনী হয়েও সাফল্যে ছেলে তাওহীদুল ইসলামকে(১৬)পেছনে ফেলেছেন। ঘর ও খামার দেখাশুনার পাশাপাশি ছেলের পড়াশুনা তদারকি করতে করতে ফের পড়াশুনার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন তাহমিনা।

শুরুতে স্বামীকে না জানিয়ে ছেলের সহায়তায় ভর্তি হন জোনাইল আইটি স্কুল এন্ড কলেজে। তারপর টানা দুই বছর প্রতিদিন গড়ে ৪/৫ ঘন্টা পড়াশুনায় এসেছে তার এই সাফল্য। তিনি গুরুদাসপুর পৌরসভার আনন্দ নগর মহল্লার বাসিন্দা।

এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্বামী নিয়ে তাহমিনার ছোট্ট সংসার। তাদের দেখভালের পাশপাশি তিনি অল্প পরিসরে তৈরি করেছেন তিনটি গরু ও ৪০/৫০টি হাঁস-মুরগীর খামার। এছাড়া  কৃষি খামার হিসেবে গড়ে তুলেছেন ৬০টি লিচুগাছ ও ১২০টি আম গাছের বাগান।

পড়াশুনার মতো খামার পরিচর্যাতেও একনিষ্ঠ তাহমিনা। স্বামী আলমগীর কবির রঞ্জু ঔষধ ব্যবসায় ব্যস্ত থাকেন। তবে তার ছেলে এসব কিছু দেখভালে তাকে সাহায্য করে থাকে। মা তাহমিনা বিনতে হক জেলার বড়াই গ্রাম ইউনিয়নের খাকসা গ্রামে অবস্থিত জোনাইল আই টি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভোকেশনাল শাখা থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ২৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। আর ছেলে তাওহীদুল ইসলাম দ্বারিকুশি প্রতাপপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ০৬ পেয়েছে।

মা তাহমিনা তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, অষ্টম শ্রেণীতে পড়ালেখার সময় ওষুধ ব্যবসায়ী আলমগীরের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের ঘরে আসে ছেলে তৌহিদ ও মেয়ে তৌফিকা। ছেলে তাওহীদুল ইসলাম লেখাপড়ার  অমনোযোগী ছিলো।

তার পড়ালেখার পেছনে সময় দিতে গিয়ে স্বামীর অগোচরে নিজেও স্কুলে ভর্তি হন। তার লেখাপড়ায় তার পিতা-মাতা ও শিক্ষকেরা উৎসাহ যুগিয়েছেন। তারা মা-ছেলে প্রতিদিন গড়ে ৪/৫ ঘন্টা পড়াশুনা করেছেন।ঘরকন্না আর খামার দেখভাল করে এ ফলাফল করায় খুশি তিনি। আগামীতে লেখাপড়া চালিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় মা-ছেলে আরো ভাল ফলাফল করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী।

ছেলে ও স্ত্রীর এ সাফল্যে খুবই খুশি আলমগীর কবির। মায়ের সঙ্গে পাস করতে পেরে উচ্ছ্বসিত ছেলে তাওহীদ। মায়ের ফল ভাল হওয়ায় আগামীতে লেখাপড়ায় আরও ভাল করার অনুপ্রেরনা পেয়েছে বলে জানায় তাহমিনার ছেলে-মেয়ে।

অন্যদিকে মা-ছেলে একসাথে পাস করায় আনন্দের জোয়ারে ভাসছে স্কুলের সহপাঠী ও তাদের শিক্ষকরা। মা ও ছেলে একসাথে পাস করে গুরুদাসপুরে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তারা। তাদের দেখে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত মায়েরা আবারও লেখাপড়ায় আগ্রহী হবে এমনটা মনে করেন এলাকাবাসী।