নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সারাদেশে ডিম-মুরগির দাম নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়েছে ব্রয়লার মুরগি। গত দুদিন আগে রোববার (১৪ আগস্ট) রেকর্ড দামে পৌঁছায় এই পোল্ট্রি পণ্যের দাম। তবে, তা একদিনই স্থায়ী থাকার পর কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে ডিম-মুরগির দাম নিন্মমুখী। সেইসাথে হু-হু করে বাড়ছে একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চার দাম।

গত রোববারের (১৪ আগষ্ট) সারাদেশের পোল্ট্রির ডিম, মুরগি ও একদিনের বাচ্চার পাইকারি দাম ইউনাইটেড এগ(সেল পয়েন্ট) লাল ডিম ১২ এবং সাদা ডিম ১১ টাকা ৬০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। ডাম্পিং মার্কেট– লাল(বাদামী) ডিম ১১ টাকা ৫০ পয়সা এবং সাদা ডিম ১১ টাকা ১০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। আজ দুদিন পর ১৭ আগস্ট নাই হয়ে গেছে ডিমের পাইকারি দাম। প্রতিপিস ডিমে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা উধাও। অপরদিকে বাড়তি বাচ্চার দাম।

পড়তে পারেন: মঙ্গলবারের (১৬ আগষ্ট) পোল্ট্রির ডিম, মুরগি ও বাচ্চার পাইকারি দাম

ঢাকার পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরে লাল(বাদামী) ডিম ১১ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে আজ ১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে অর্থ্যাৎ ৬০ পয়সা নাই হয়ে গেছে। সাদা ডিম ১০ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি হলেও আজ ৩০ পয়সা কমে ১০ টাকা ৪০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে কমেছে ব্রয়লার মুরগির কেজতে। দুদিন আগে ১৭৫ টাকার ব্রয়লার কেজিতে কমেছে ৩০ টাকা। ফলে ১৪৫ টাকা পাইকারিতে ব্রয়লার বিক্রি করতে হছেছ খামারিদের।

বাচ্চার দামের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, লেয়ার লাল মুরগির বাচ্চা ৪০-৪৪ টাকায় বিক্রি হলেও তা বেড়েছে ৪ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা দরে। একইভাবে লেয়ার সাদা ৩৫-৩৮ থেকে বেড়ে ৪০ টাকা হয়েছে। ব্রয়লার=৩৮-৪০ টাকা।
শুধু ঢাকায় নয় চট্টগ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামে লাল (বাদামী) ডিম ১১ টাকা ৭০ পয়সা বিক্রি হলেও আজ তা কমে ১০ টাকা ৭০ পয়সায় নেমেছে। ফলে নাই হয়ে গেছে ১ টাকা। সাদা ডিম ১১ টাকা ৩০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে দুদিন আগেই কিন্তু আজ তা ১০ টাকা ৩০ পয়সায় নেমেছে। ব্রয়লার মুরগী ১৬০ কেজি হিসেবে বিক্রি হয়েছে অথচ আজ তা কমে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পড়তে পারেন: ডিম মুরগির দাম বাড়ার আসল কারণ!

চট্টগ্রামেও বাচ্চার দাম বাড়ছে। লেয়ার লাল মুরগির বাচ্চা ৪০-৪৪ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৫০ টাকা হয়েছে। লেয়ার সাদা ৩৮-৪২ টাকা থেকে বেড়ে ৪৬টাকা।

একইভাবে রাজশাহীতে দুদিন আগে– লাল(বাদামী) ডিম ১১ এবং সাদা ডিম ১০ টাকা ১০ পয়সা দরে বিক্রি হলেও তা কমে এখন লাল ডিম ১০ টাকা ৩৪ পয়সা এবং সাদা ৯ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে।

সারাদেশের অন্তত ২০টি অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ডিম-মুরগির দাম ক্রমাগম কমছে। অন্যদিকে একদিন বয়সী বাচ্চার দাম বাড়ছে। বাচ্চার দাম বাড়ার হার ৪-৮ শতাংশ। অন্যদিকে ডিম-মুরগির দাম কমার হার ১৫ থেকে ৩০ শতাংশের মতো।
খামারিরা বলছেন, বিগত আড়াই বছর ধরে পোল্ট্রি খামারিরা তেমন লাভের মুখ দেখেননি। অনেকে ছেড়ে দিয়েছেন ব্যবসা, তালা ঝুলিয়েছেন খামারে। তবে, গত দু-সপ্তাহের ব্যবধানে ডিম-মুরগির দাম আশানুরুপ বেড়েছে। ফলে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন, হয়েছেন খুশি। তবে বর্তমানে দাম কমতে থাকায় হতাশা দেখা দিয়েছে।

পড়তে পারেন: রাজশাহী অঞ্চলের আজকের ডিম, মুরগি ও বাচ্চার পাইকারি দাম

খামারিদের অভিযোগ, পাইকারি বাজারে ডিমের দাম কমছে সেইসাথে মুরগির দাম কমছে কিন্তু খুচরা বাজারে ঠিকই তারা ব্যবসা করছে। লাভ করছে নিজের মতো। আগের দামেই বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে বাজার মনিটরিংয়ের দিকে নজর দিতে বলছেন অনেকেই।

রাজশাহীর পব্ াউপজেলার পারিলা এলাকার লেয়ার খামারি আব্দুল মজিদ এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, গত দুই বছর ধরে পাঁচ-ছয় দফায় পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়েছে। আমরা লোকসানে লোকসানে শেষ হয়ে গেছি। গত মাসেও খাদ্যের দাম বেড়েছে। আগে ১৯’শ টাকায় যে খাদ্য কিনেছি সেই খাদ্য এখন ৩২’শ ৫০ টাকা বস্তা। তবে, ডিমের দাম বাড়ার কারণে লাভ হচ্ছে। মিথ্যে বলবনা- ১ হাজার ডিমে এখন দেড়-দু হাজার টাকা লাভ হচ্ছে। কিন্তু এইযে আবার দাম কমে গেলো।

তিনি আরও বলেন, দুদনি আগে খামারে লাল ডিমের পাইকারি রেট ১ হাজার ২০টাকা শ। সাদা ডিম সাড়ে ৯’শ টাকা একশ ডিমের দাম। আবার দাম কমে গেছে। আজকের রেট ১০ টাকা ২০ পয়সা। রাতারাতি ১ টাকা নাই হয়ে গেলো। ১ হাজার ডিমের ১ হাজার টাকা নাই।

রাজশাহীর সাহেববাজারের পাইকারি ডিম বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই আড়ত এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ডিমের দাম বাড়তি। ৪৫ টাকা হালি লাল ডিম এবং সাদা ডিম ৪০ টাকা। হাঁসের ডিম ৪৮ টাকা। ডিমের দাম আরও বাড়বে। বাজারে ডিমের ঘাটতি বলাই চলে। ডিমের দাম কমেনি।

পড়তে পারেন: ডিম-মুরগির দাম নির্ধারণ করে কারা, কেন ধরা খায় খামারিরা?

মুরগির দাম বাড়তি থাকায় মাংস উৎপাদনের ব্রয়লার, সোনালি, কক মুরগির বাচ্চা আবারো খামারে তুলতে শুরু করেছেন খামারিরা। এমনই জানিয়েছেন রাজশাহী পোল্ট্রি এসোসিয়েশন।

ডিম-মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে কথা হয় রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হকের সাথে। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, চারিদিকে সবকিছুর দাম যেভাবে বাড়ছে ডিম-মুরগির দাম বাড়া অসম্ভব নয়। অবহেলিত এ খাতের মাথা চাড়া দেওয়ার সময় হয়ত চলে এসেছে। রাজশাহীতে করোনায় ৭০ ভাগ খামার বন্ধ। মাঝখানে উৎপাদন খরচ আরো বেড়ে গেলো, কারণ ভুট্টা, সয়াবিন মিল, প্রোটিনের দাম বেড়েছে। রেডি মুরগির দাম কমায় খামারিরা আরো বিপাকে পড়েছিল। কয়েকমাস আগে খামারিরা বাচ্চা তোলা বন্ধ করে দেয় ফলে দেখা যায় সেই সংকট এখন। ৫০ শতাংশ খামারে মুরগি নেই। এই কারনেই দাম বেড়েছে। বাজারে পণ্য আসতে শুরু করেছে ফলে দাম কমেছে।

এই পোল্ট্রি সংগঠক বলেন, বর্তমানে লেয়ার মুরগির বাচ্চা খামারিরা তুলতে শুরু করেছেন তাই বাচ্চার দাম বাড়ছে। কারণ দীর্ঘমেয়াদী এই প্রজেক্ট। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে তখন খামারিরা ভয় পেয়ে বাচ্চা তোলেননি। আগামীর ভবিষৎ চিন্তা করে খামারিরা আবার নামছেন মাঠে। এখন আবার খামার শুরু করছেন।

পড়তে পারেন: মুরগির বাচ্চার গামবোরো রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার

মুরগি দোকানদার মিঠু হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, পোল্ট্রি মুরগি ১৮৫ টাকা দরে বেঁচা হচ্ছে। ব্রয়লারের আমদানী হচ্ছে দামও কিছুটা কমেছে। সোনালি ২৮০ টাকা, কক মুরগি ২৮০ টাকা, হাঁস ৪৫০ টাকা, রাজহাঁস ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। দাম আর বাড়বে না। এখন থেকে কমবে।

একই বাজারের ফাহিম ডিম ভান্ডারের মালিক মাসুদরানা এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ডিমের দামে খামারিরা কিছুটা লাভবান হচ্ছেন। খাবারের দাম বেশি থাকলে লাভ কিছুটা কম হয়। লাল ডিম পাইকারিতে হালি ৪৬ টাকা টাকা আর সাদা ডিম ৪৪ টাকা দরে বিক্রি করছি।

রাজশাহীর পবা উপজেলার পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তা মুজিবুর রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, মূলত প্রান্তিক এক হাজার-দু-হাজার মুরগির খামারিরা ধ্বংশ হয়ে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে যেসব মুরগি ও ডিমের উৎপাদন হচ্ছে তা বাজারে আসছে। বাজারে এখন যে দাম তাতে খামারির লাভ হবে ঠিক কিন্ত এই লাভের চেয়ে ১০ গুণ লোকসান দিয়েছেন তারা। এখন কিছুটা হয়ত পোষাবে। সেটাও তো আর হলোনা। দাম কমতে শুরু করেছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ