অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলতি করোনা মহামারীর কারণে করুণ দশায় পড়তে পারে তেলের বাজার। বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা স্বাভাবিক হতে সময় লাগতে পারে দুই থেকে চার বছর। এ সময় বাড়তে পারে ২০২৩ সাল নাগাদ, আবার ২০২৫ সালও লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)।

সংস্থাটি মনে করছে, মহামারীর কারণে এ বছর তেলের চাহিদা ৮ শতাংশ পড়ে গেছে এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার খুব ধীরগতিতে হবে। দীর্ঘ সময় তেলের বাজারকে হুমকিতে ফেলবে বলে খবর প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ।

আইইএর আরেকটি পূর্বাভাস বলছিল, আরো বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রচলন হলে তেলের চাহিদা কমে যাবে। ২০৩০ সাল নাগাদ দিনে ১০ কোটি ৩২ লাখ ব্যারেলের চাহিদায় পৌঁছতে এখন থেকেই প্রতি বছর ৭ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল বাড়াতে হবে। গত বছরের পূর্বাভাসে অবশ্য এর চেয়ে ২০ লাখ ব্যারেল বেশি বলা হয়েছিল। ২০৩০ সাল নাগাদ তেলের চাহিদার প্রবৃদ্ধির সমাপ্তি ঘটবে এবং তখন চাহিদা নির্দিষ্ট মাত্রায় স্থিতিশীল থাকবে।

সংস্থাটির এর নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল বলেন, ‘বৈশ্বিক তেল চাহিদার প্রবৃদ্ধির শেষ হবে পরের দশকে।’

আইইএ বলছে, মহামারীর ক্ষত থেকে সেরে ওঠার প্রক্রিয়া যদি ধীরগতির হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধন হয়, তবে তেলের চাহিদায় প্রবৃদ্ধি আসতে বেশ কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।

বিপি পিএলসি, রয়্যাল ডাচ শেল পিএলসির মতো শীর্ষ তেল কোম্পানি স্বীকার করেছে, কভিড-১৯ মহামারী ও জলবায়ু সংকট এড়াতে দ্রুতগতিতে পরিবর্তন আনতে তাদের সম্পদ ও ব্যবসায়িক মডেলের ওপর সুগভীর প্রভাব পড়তে পারে। আইইএর পর্যবেক্ষণে এসব কোম্পানির আশঙ্কার বিষয়টি স্থান পেয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে চলতি বছরের শেষ ভাগে তেলের ব্যবহার করোনাভাইরাসের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না এবং এর পর পরই তেলের চাহিদা দিনে ১০ কোটি ব্যারেলের নিচে নেমে যাবে এবং সেখানে স্থিতিশীল অবস্থায় থাকতে পারে।

আইইএ ও আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানির শঙ্কার সঙ্গে অবশ্য তেল রফতানিকারক দেশগুলোর ভাবনা মিলছে না, যারা বলছে, দুই দশক ধরেই তেলের চাহিদা প্রবৃদ্ধির ধারায় থাকবে। আবার দ্য কার্টেল বলছে, ২০২২ সালের মধ্যে তেলের চাহিদা আগের জায়গায় ফিরে আসবে, যা আইইএ বলছে ২০২৩ সাল।

দশক শেষে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম হতে পারে ৭৫ ডলার, বর্তমানে যা ৪০ ডলারের একটু বেশি। তেলের দাম বেশি পেলে তেল খনি ড্রিলাররা বেশি উৎসাহ নিয়ে কাজ করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের শিলা শিল্প ২০২২ সালে কভিড-পূর্ব অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। তাতে ২০৪০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী হিসেবে টিকে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও শিলা শিল্প যদি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয় কিংবা ঋণের ওপর বেশি নির্ভর হয়ে পড়ে, তবে তেলের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ পারফরম্যান্স চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘পুঁজিবাজার এখন বেশ ভালো অবস্থায় নেই এবং পরের ঝড় যাবে ব্যাংক খাতের ওপর দিয়ে। এটা পরিষ্কার নয়, এ বিনিয়াগ হবে কিনা।’

ওপেক সদস্যরাও কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে চলেছে। কেননা হ্রাসপ্রাপ্ত রাজস্ব জাতীয় বাজেটের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং নাইজেরিয়া, ইরাক ও অ্যাঙ্গোলায় যে প্রবৃদ্ধির আশা করা হচ্ছিল তাও হারানোর পথে।

করুণ দশায় পড়তে পারে তেলের বাজার সংবাদের তথ্য বণিক বার্তা থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ