করোনার আঘাত; ডেইরি খামারিদের

ডেইরি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশের প্রান্তিক ডেইরি খামারিসহ এ খাতের উদ্যোক্তারা এখন খুব খারাপ সময় পার করছেন। করোনার আঘাতে ডেইরি খামারিদের রক্ষায় দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানের সহায়তা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বুধবার (২৫ মার্চ, ২০২০) বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশনের মোহাম্মদপুরস্থ কেন্দ্রীয় অফিসে দেশের দুগ্ধ খামার শিল্পকে রক্ষার্থে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে বর্তমানে দেশের পুরো দুগ্ধ শিল্পে খামারিদের ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে বার্ষিক প্রায় ৯৯ লাখ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয় যা মোট চাহিদার প্রায় ৭০%। বর্তমান পরিস্থিতিতে পুরো দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২০ থেকে ১৫০ লাখ লিটার দুধ অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে যার অর্থনৈতিক বাজার মূল্য প্রায় ৫৭ কোটি টাকা। মাসিক হিসাবে প্রায় ১ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।

তারা জানান, গ্রামের একজন কৃষক গরুর দুধ বিক্রি করে প্রতিদিনকার নিজের আহার এবং তার পোষা প্রাণিটির জন্য খাবার কিনে আনে। গত ৭ দিন যাবত প্রান্তিক পর্যায়ের একজন খামারি দুধ বিক্রি করতে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। খামারিদের কোথাও দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজিতে আবার কোথাও অনেকে বিক্রি করতে পারছে না।

করোনার আঘাতে ডেইরি খামারিদের রক্ষায় দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানের সহায়তা জরুরি উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশে দুগ্ধ প্রসেসর কোম্পানীগুলো দেশের মোট উৎপাদনের মাত্র ৫% দুধ প্রতিদিন সংগ্রহ করে থাকে যার পরিমান মাত্র ১৩ লাখ ৫৯ হাজার লিটার। বাকী ২ কোটি ২৮ লক্ষ ৩৬ হাজার লিটার যা মোট উৎপাদনের প্রায় ৮৪% দুধ খামারিরা বিক্রি করে বিভিন্ন মিষ্টি দোকানে ও বাসা বাড়িতে।

বর্তমানে মিষ্টির দোকান সবই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনে এবং জনজীবনে নানা অস্থিরতার কারনে দুধ বিক্রি নিয়ে খামারিরা মারাত্বক ক্ষতির সম্মুখীন। এ অবস্থায় সরকার ও দেশের দুগ্ধ প্রসেসর কোম্পানীগুলো আমাদের (খামারিদের) সহযোগিতায় না আসলে দেশের দুগ্ধ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবার উপক্রম হবে।

আমাদের দেশে ৩ টি বড় কোম্পানীর প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ লিটার দুধ সংগ্রহ করে গুড়া দুধ তৈরীর সক্ষমতা আছে। পাশাপাশি প্রায় আরো ১০ থেকে ১২ টি কোম্পানীর দুধ জাতীয় পন্য যেমনঃ ঘি, মাখন, ফ্লেভারড মিল্ক, আইসিক্রীম, ক্রীম তৈরী করার সক্ষমতা আছে।

সরকার প্রধান ও দেশের দুগ্ধ প্রসেসর কোম্পানী গুলো থেকে এই সহযোগিতা না পেলে অচিরেই গড়ে উঠা প্রায় ৫০% খামার বন্ধ হয়ে যাবে।

করোনা ভাইরাস সমস্যায় আক্রান্ত পরবর্তী সময় এবং আসন্ন রোজার মাসে আমাদের দেশে দেখা যেতে পারে দুধ এবং দুধ জাতীয় পন্যের সংকট।

তাই এই সময় দুধ মজুত করে রাখতে পারলেই দেশে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় হবে, তেমনি দেশের খামার শিল্পকে আমাদের এগিয়ে নেয়া যাওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ দুগ্ধ খামার রয়েছে যেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ যাদের জীবন জীবিকা এই দুগ্ধ শিল্পের উপর নির্ভর করে।

বর্তমানে সিন্ডিকেট করে পশুখাদ্যের অত্যাধিক উচ্চমূল্য, বিদ্যুত ও পানির বিল কৃষির আওতায় না এনে বানিজ্যিকিকরন সহ নানা সমস্যার কারনে দেশের দুগ্ধ খামার শিল্প ভিষনভাবে হুমকীর সমুক্ষীন।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ইমরান হোসেন, জেনারেল সেক্রেটারী মো শাহ এমরান, ভাইস প্রেসিডেন্ট আলী আজম রহমান শিবলী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব তথ্য তুলে ধরেন।