নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নাজেহাল মানুষ। সীমিত হয়ে পড়েছে বৈশ্বিক অর্থ-বাণিজ্য। বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে পড়েছে করোনার প্রভাব। দেশের অন্যতম খাত দুগ্ধ ও মাংস শিল্পে নেমেছে ধ্বস। খামারি, ব্যবসায়ী, সংশ্লিষ্ট খাতের সাথে জড়িতদের লোকসান হয়েছে কোটি কোটি টাকা। একদিকে ভারত থেকে ঢুকছে গরুর মাংস অন্যদিকে করোনায় গরুর খামারিদের ২ হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন।

বর্তমানে মাংস উৎপাদনকারী খামারিদের মাথায় হাত। লকডাউন শুরু হওয়ায় গত আড়াই মাসে গবাদি পশুর বিক্রি কমেছে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ। প্রতিদিন ৪৫ থেকে ৫০ কোটি টাকার মাংস বিক্রি হতো সেটা ১৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। মাংস উৎপাদনকারী খামারগুলো দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে।করোনা ভাইরাসে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানায় সংগঠনটি।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ‘প্রান্তিক খামারিরা হাট বন্ধ থাকায় গরু কেনা বেচা করতে পারছে না। যারা মাংস উৎপাদন করে তারা সাধারণত দোকান থেকে বাঁকিতে খাবার এনে খামার চালায়, পরে গরু বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করেন। এখন খামারিরা গরু বিক্রি করতে পারছে না, যে কারণে দোকান থেকে খাবার বাকিতেও দিচ্ছে না। খাবার বাকিতে না দেওয়ার কারণে গরুকে ঠিক মতো খাবার খাওয়াতেও পারছে না, গরু শুকিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে খামারিরা খুবই ক্ষতির সম্মুখীন। করোনা আসার আগে দৈনিক ৪৫ থেকে ৫০ কোটি টাকার গবাদি পশু বিক্রি করতো খামারিরা, সেটা ১৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। বর্তমানে ৭০ শতাংশ খামারিদের বিক্রি বন্ধ রয়েছে।

ভারত থেকে বাংলাদেশে ফ্রোজেন মাংস আসার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনোরকম পরীক্ষা করা ছাড়াই প্রচুর মাংস ঢুকছে। মাংসের যে রোগ সেটি পরীক্ষা করার মতো ল্যাবরেটরি সাধারণত আমাদের দেশে নেই। ভারতের সার্টিফিকেটে বাংলাদেশে ঢুকছে মাংস। এই মাংসগুলো স্ব্যাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

আগামী কুরবানী ঈদ পর্যন্ত এ অচলাবস্থা চলমান থাকার আশঙ্কা করে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আরোও বলেন, আগামী দু-চার মাসে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পাওয়া যাবে না। মধ্যস্বত্বভোগীরা খামারিদের জন্য বড় হুমকির কারণ। খামারিদের কাছে থেকে কম দামে কিনে কিন্তু ভোক্তাদের হাতে পোঁছে বেশি দামে। বাজারব্যবস্থার একটা বড় গ্যাপ রয়েছে দেশে। প্রায় তিনলাখ ছোট বড় ডেইরি খামার রয়েছে দেশে। বছরে এসব খামারে ৭৬ লাখ মেট্রিক টন মাংস এবং ৯৯ লাখ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয়।

মাংস উৎপাদনের প্রতিটি গরুকে ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত বিশেষ পরিচর্যা করতে হয়।আর এ পরিচর্যা করে দাম পায় না খামারিরা। প্রতিটি গরুর পেছনে ব্যয় হয় ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। বেঁচার সময় লাভ হয় কম, টাকা যায় মধ্যস্বত্বভোগীর হাতে। ফলে চলমান পরিস্থিতিতে তিন মাসের জন্য খামারের বিদ্যুৎ ও পানির বিল মওকুফসহ প্রান্তিক খামারিদের জন্য আর্থিক সহায়তা, মধ্যস্বত্বভোগীর হাত থেকে বাজারব্যবস্থাকে রক্ষা করা এবং সাহায্য সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন।

কুষ্টিয়া জেলা ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও লিয়াকত আলী ডেইরি ফার্মের মালিক মো. জাকিরুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন,আমরা প্রান্তিক খামারিরা একদমই গরু বিক্রি করতে পারছি না। গরু বড় হয়ে যাচ্ছে ক্রেতা নাই। অধিকাংশ গরু খামারেই আটকে রয়েছে। দোকান থেকে বাঁকিতে গরুর খাবার নিয়ে আসি। গরু বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এখন দোকানদাররা বাঁকিও দিতে চাচ্ছে না।’

ফরিদপুর জেলা ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মার্শ অ্যাগ্রোর মালিক মীর কাশেম আলী বলেন, ‘দিন দিন গো-খাদ্যের দাম বেড়েই যাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারণে সময়মতো গরু বিক্রি করে টাকা দিতে পারবো কিনা সেই ভয়ে ব্যবসায়ীরা আমাদের খাবার সরবরাহ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই খামার চালানোর জন্য কিছু গরু কম দামে বিক্রি করে দিতে হয়েছে। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতার হাত না বাড়ায় তাহলে আমরা ক্ষতির মুখে পড়ব’

এদিকে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ জেলার গরুর খামারি, ব্যবসায়ী, মাংস বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ঈদুল আযহার ঈদে গরুর দাম নিয়ে শঙ্কায় তারা। দীর্ঘদিন কেনাবেঁচা না থাকায় ব্যবসায়ীদের অলস বসে থাকতে হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে ব্যবসায়ীদের তেমন দৌড়ঝাঁপ নেই।

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় গরুর হাট সিটি হাটে করোনায় প্রায় বন্ধ গরু বেঁচাকেনা। রাজশাহী সিটি হাটের কাউন্টার ক্যাশিয়ার ফারুক আলী এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন,‘ দুই- তিন ভুটভুটি গাড়িতে কয়েকটা করে গরু আসে। লকডাউন খুললে, গাড়ি চলাচল করলে হাট লাগবে। আগামী বুধবার নাগাদ ভালো হাট লাগতে পারে। হাট না করতে পারলে খামারি, ব্যবসায়ীরা বাঁচবে কিভাবে!’