নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ফিলিপাইনে উদ্ভাবিত ব্লাক রাইস বা কালো ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছে বাংলাদেশের চাষিরা। কৃষকরা বলছেন, সাধারণ ধানের মতো সোনালী রঙ না নয় এ জাতের। ছাই বর্ণের হওয়ায় এর নামকরণ করা হয়েছে ব্লাক রাইস হিসেবে। বর্তমানে ব্ল্যাক রাইস, চায়না ব্ল্যাক এবং বেগুনি জিঙ্ক চাষ হচ্ছে দেশে।

দিনাজপুরের হিলিতে ক্যানসার প্রতিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পুষ্টি সমৃদ্ধ উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করছেন শামীম হোসেন। এছাড়া দেশের উত্তরের জেলা নওগাঁ, দিনাজপুর এবং সর্বপশ্চিমের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জেও চাষ হচ্ছে এই ব্লাক রাইস।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ ধরণের ধান চাষে তেমন কোনো রোগবালাই না থাকায় ভালো ফলন হয়। বাজারে দামও সাধারণ ধানের তুলনায় বেশি। উচ্চ ফলনশীল এসব ধান আবাদ বৃদ্ধি করতে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করছে।

দিনাজপুরের হিলি থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্ব দিকে বোয়ালদাড় গ্রামের মাঠে জুড়ে চোখে পড়বে ভিন্ন এসব ধানের সৌন্দর্য। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ, তার মাঝে খণ্ড খণ্ড জমিতে কালো ও বেগুনী জাতের ধান বাড়িয়েছে বাড়তি শোভা। ধান তার নিজের শোভা দিয়ে স্থানীয়দের দৃষ্টি জুড়ানোর পাশাপাশি আগ্রহী করে তুলছে অন্য কৃষকদের।

বোয়ারদাড় গ্রামে ধানক্ষেতে কাজ করছিলেন কৃষক শামীমের। এ এলাকায় প্রথমবারের মতো এমন নতুন জাতের উচ্চফলনশীল ধান আবাদ করেছেন তিনি। এ নিয়েই তার ব্যস্ত সময় কাটছে।

এমন জাতের ধান চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে শামীম বলেন, কৃষক পরিবারের সন্তান আমি। ব্যাংক ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেছি টানা ১৮ বছর। তবে কর্মজীবনের শুরু থেকেই কৃষিকাজ পিছু ছাড়েনি। সে টানেই চাকরি ছেড়ে গ্রামে এসে কৃষি কাজ শুরু করা।

প্রথমদিকে মিশ্র ফলের বাগান করে সফলতা পাওয়ার পরে এবারই প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে জমিতে চাষ শুরু করেছেন উচ্চ ফলনশীল ক্যানসার প্রতিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ চায়না ও ফিলিপাইনের ব্ল্যাক রাইস, জিংক বা বেগুনী জাতের ধান। বিদেশী এসব জাতের ধানের বীজ তিনি সংগ্রহ করেছেন নাটোরের ইমরান, ঢাকার মোক্তাদির ও পার্বতীপুরের সায়েদের কাছ থেকে।

শামীম আরও বলেন, প্রথমে শখের বসে আবাদ করা। এরইমধ্যে কিছু ধান কাটা হয়েছে তাতে ফলনও বেশ ভালো পেয়েছি। এসব ধানের বীজ সংগ্রহ করে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে কম দামে বিক্রি করার ইচ্ছে আছে।

ধানের আবাদ সম্বন্ধে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, প্রথমে যখন এই ধরণের ধান রোপন করা হয়েছে তখন দেখেছি ধানের রঙটা লালচে ধরণের। পরিণত ধানের বর্ণ অনেকটা এমন যে, সাধারণত ধান পুড়ে গেলে যে কালছে রঙ হয়, সে রঙ ধারণ করে। প্রথমে ভেবেছিলাম ধানগুলো হয়তো পুড়ে গেছে। তবে এখন দেখছি এ ধানের রঙটাই এমন। শুনেছি এটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি এবং দামও নাকি অনেক বেশি। আগামীতে আমরাও লাগাবো এসব ধান।

হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মমতাজ সুলতানা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ব্লাক রাইস কৃষিখাতে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। রোগ বালাই খুব কম থাকায় উন্নতজাতের এসব ধান এলাকায় ছড়িয়ে দিতেই নিজ উদ্যোগে চাষ শুরু করেছেন কৃষক শামীম। এখানে উৎপাদিত এসব ধানের বীজ দেয়া হবে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে। আমরা উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করছি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ