নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কুড়িগ্রামে বন্যায় মৎস্য বিভাগের ৫৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর। অন্যদিকে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল মিলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রাণিসম্পদের সাড়ে ১১ লাখ টাকা।

কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, চলতি বন্যায় ৭৪২টি পুকুরের ৭০৫ জন মৎস্য চাষির এখন পর্যন্ত ৫৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। উপজেলা মৎস্য দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় ১১৫ মেট্রিক টন মাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলায় ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে।

পড়তে পারেন: পুকুরে সকাল-বিকেল মাছ খাবি খায়, যা করবেন

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাই সরকার এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, বন্যা পরিস্থিতিতে ১৮টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যায় প্রায় ৫০টি মুরগি মারা গেছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে গো-চারণভূমি, খড় ও দানাদার শস্যে। খাবারের ক্ষেত্রেই ১১ লাখ ৫২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চালু করা হবে।

কুড়িগ্রামে বেসরকারিভাবে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়ালেও জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য মতে ৪৯টি ইউনিয়নে ৮৭ হাজার ২৩২ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রামে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিকেল টিম, ৯টি উপজেলায় একটি করে মনিটরিং টিম এবং সিভিল সার্জন অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রাণি সম্পদ বিভাগ থেকে ১৮টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

সোমবার (২০ জুন) সকালে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫১ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্র।

পড়তে পারেন: অল্প পুঁজিতে লাভজনক গ্রাসকার্প মাছ চাষ পদ্ধতি

সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের গারুহাড়া গ্রামের খুটু মিয়া বলেন, আমি অন্যের পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করি। এবারও কয়েকটি পুকুরে মাছ চাষ করছি। কিন্তু বন্যার পানিতে সব মাছ ভেসে গেছে। এতে আমার দেড় থেকে ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ওই ইউনিয়নের মিলপাড়া গ্রামের কাজিয়াল বলেন, বাড়িতে বন্যার পানি উঠায় গবাদিপশুগুলোকে নিয়ে উঁচু সড়কে এসেছি। আমাদের সঙ্গে সঙ্গে গরুগুলোরও খুব কষ্ট হচ্ছে। এখন রাস্তায় থাকা লাগবে। বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলে তারপর বাড়ি যাব।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে জানান, বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে জেলা প্রশাসক দপ্তরে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সকল দপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতিদিনের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য প্রদান করতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ লাখ টাকা এবং ৪০৭ মেট্রিক টন চাল মজুত রয়েছে। এছাড়া আরও ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ২০ লাখ টাকার চাহিদা দেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ