নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কৃষিকাজে পোকা দমনের জন্য কীটনাশক কিংবা বিষাক্ত বাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার ব্যাঙের জন্য ক্ষতিকর। এসব কীটনাশক ব্যবহারের ফলে যেসব পোকামাকড় মরে যায়, সেই সব মৃত বিষাক্ত পোকামাকড় পরবর্তীতে ব্যাঙ খেয়ে মারা যাচ্ছে।

কৃষকের বন্ধু হিসেবে পরিচিত এই ব্যাঙ ফসলের ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে উপকার করে। এপর্যন্ত গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে ফসলি জমি এবং ধানক্ষেতে প্রায় ১০ প্রজাতির ব্যাঙ পাওয়া যায়। এসব ব্যাঙের মধ্যে রয়েছে কোলা ব্যাঙ (দুই প্রজাতির), কুনোব্যাঙ, ঝি ঝি ব্যাঙ (৭ প্রজাতির), কটকটি ব্যাঙ।

এসব ব্যাঙ সাধারণত ফসলি জমির পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। ফলে ধানক্ষেতে ব্যাঙ থাকলে বাড়তি করে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়াও ব্যাঙের মলমূত্রে বেশির ভাগই ইউরিয়া জাতীয় পদার্থ যা জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

বিশ্ব ব্যাঙ দিবস ২০১৮ উপলক্ষে আজ শনিবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

দিসবটি উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করা হয়। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মিলনায়ানে অনুষ্ঠিত সভায় প্রফেসর ড. গুলশান আরা লতিফা এর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. তপন কুমার দে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. মোহাম্মাদ ফিরোজ জামান এবং মোঃ মোকলেসুর রহমান, প্রভাষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. নূর জাহান সরকার।

বক্তারা বলেন, ব্যাঙ প্রচুর পোকা খায়, প্রকৃতি থেকে এরকম ব্যাপকহারে ব্যাঙ সংগ্রহের ফলে ধান ক্ষেতসহ অন্যান্য ফসলি ক্ষেতে পোকার সংক্রমণ বেড়ে যায়। ফলে পোকা দমনে এমনকি দেশের বাইরে থেকেও কীটনাশক আমদানি করা হয়। শুধু মাত্র প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বিধায় বাংলাদেশ সরকার ১৯৯২ সাল থেকে প্রকৃতির যত্রতত্র থেকে ব্যাঙ ধরা এবং বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করেছে।

তারা জানান, ছত্রাক ও ভাইরাস বাহিত রোগের আক্রমনের পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ ব্যাঙ আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছে। অচিরেই অনেক প্রজাতির ব্যাঙ বিলপ্ত হওয়ার আশংকা আছে।

আশির দশকে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ব্যাঙ নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকার (১৬টি ব্যাঙের প্রজাতি) গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক, এমিরেটাস প্রফেসর এবং বাংলাদেশের বন্যপ্রাণি গবেষণার পথিকৃত প্রয়াত ড. কাজী জাকের হোসেন।

বিশ্বব্যাপী এপর্যন্ত  উভচর প্রাণি বা ব্যাঙের  প্রজাতির সংখ্যা ৭৮৩৬ ( সূত্র : আমেরিকান ন্যাচরাল হিস্টরি মিউজিয়ামের অনলাইন ডাটাবেজ ২০১৮) এবং বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ৪৯ প্রজাতির (সূত্র: আইইউসিএন-বাংলাদেশ ২০১৫)। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশি হতে পারে, যার জন্য দরকার মাঠ পর্যায়ে গবেষণা বৃদ্ধি করা। দেশের একেক অঞ্চলে একেক ধরণের ব্যাঙ পাওয়া যায়।

ব্যাঙ যে সব কারণে হুমকির সম্মুখীন: ১। জলজ পরিবেশ নষ্ট: ২। আবাসস্থল ধ্বংস: ৩। রোগ: ৪। জলবায়ুর পরিবর্তন:

বাংলাদেশে ব্যাঙের বর্তমান অবস্থা: আমাদের দেশে ব্যাঙের সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে ব্যাপকহারে আবাসস্থল ধ্বংস, প্রাকৃতিক পরিবেশের রূপান্তর।

সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব এবং দুক্ষিণপূর্ব অঞ্চলের কিছু জায়গায় বিষ দিয়ে মাছ মারা প্রচলন আছে, যা মূলত বেআইনি। একটি নির্দিষ্ট জলাশয়ে কিংবা পুকুরে এভাবে মাছ মারা হয়। এতে করে বিষক্রিয়ার কারণে উক্ত জলাশয়ের ব্যাঙও মারা যায়।

চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ, রংপুর এবং সিলেট অঞ্চলে বেশ কিছু আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে। এরা মাংসের চাহিদা মেটানোর জন্য বড় আকারের ব্যাঙ বিশেষ করে কোলা ব্যাঙ ব্যাপকহারে শিকার করে থাকে।

এছাড়াও চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় বিভিন্ন স্থানীয় বাজারে অতি উচ্চমূল্যে ব্যাঙ বিক্রি করা হয়। এসব বাজারে এক কেজি ব্যাঙের মাংসের দাম প্রায় ২০০ টাকা। কোলা ব্যাঙ ছাড়াও বিপন্ন প্রজাতির পাহাড়ী ঝর্ণা ব্যাঙও ব্যাপকহারে শিকার করা হয়।

এছাড়া বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও রংপুর অঞ্চলের সাওতাল গোষ্ঠীরাও ব্যাঙের মাংস খায়। ব্যাঙ সংরক্ষণ করতে হলে প্রয়োজন এই আইনের বাস্তব প্রয়োগ এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।