নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া গ্রামের নূর মোহাম্মদ দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বড়সড় কোন ডিগ্রি নেই। তারপরও স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন সারাদেশে। কৃষি উৎপাদনে সাফল্যের জন্য নূর মোহাম্মদ ২০০৫ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক।

স্বশিক্ষিত এই কৃষিবিজ্ঞানীর ১০ বছরের গবেষণালব্ধ ৬২ জাতের ধান একত্র করে তছনছ করা হয়েছে। তাঁর গবেষণা প্লটে রোপণ করা ধান নষ্ট করে দিয়েছে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাব। ক্ষেতের ভেতর দিয়ে ট্রলি পার করে ধানের সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য জাতের ধান। ১০ বছরের কঠোর পরিশ্রমের ফসল রক্ষায় চিৎকার করে বাধা দিতে গেলে তাঁকে আটকে রেখে মারধর করা হয়েছে।

এ সময় তিনি বাধা দিতে গেলে সেখানে উপস্থিত যুবলীগ নেতা আবদুল ওহাব (৩৮) হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমরা পুলিশের ভয় করি না। তোর যা করার তুই কর।’ অঞ্জন মালাকার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোর কোন বাপ আছে, ডেকে নিয়ে আয়। আমরা তোর জমির ওপর দিয়েই ধানের ট্রলি পার করব।’

বরেন্দ্রভূমিতে প্রায় প্রতিবছরই খরায় নষ্ট হয়ে যায় ধান। সেই ধান রক্ষা করতেই কাজে লেগে যান তিনি। মাটির ঘরে চলে তাঁর গবেষণাগা। সেখানেই তিনি ধান নিয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবন শুরু করেন। এ পর্যন্ত সংকরায়ণের পর নূর মোহাম্মদের কৌলিক সারির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই শতাধিক। এগুলোর মধ্যে চার-পাঁচটি ধান জাত হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এর আগে তিনি খরাসহিষ্ণু, সুগন্ধি ও স্বল্প জীবনকালের ধান উদ্ভাবন করেছেন।

উপজেলার গোল্লাপাড়া গ্রামে গত সোমবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় রাতেই তানোর থানায় একটি মামলা করেছেন নূর মোহাম্মদ। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও যুবলীগ নেতা আবদুল ওহাবের ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পৌর যুবলীগ নেতার নির্দেশে বিজ্ঞানীকে মারধর করে তাঁর গবেষণা প্লটের ধান নষ্ট করা হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। এতে তাঁর ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। তবে এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যুবলীগ নেতার নির্দেশে তাঁর কয়েকজন শ্রমিক নূর মোহাম্মদকে তুলে নিয়ে এক জায়গায় আটকে রেখে মারধর করেন। অন্যরা তাঁর গবেষণা প্লট নষ্ট করে ট্রলি পার করে নিয়ে যান। গাড়ি পার করা হলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গোল্লাপাড়া গ্রামে সোমবার বিকেল সাড়ে চারটায় স্থানীয় অঞ্জন মালাকারের (৪৫) জমির ধান কাটা হচ্ছিল। সেখানে টিটু নামের চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন সরদারের নেতৃত্বে ২৪২৫ জন শ্রমিক ধান কাটার কাজ করছিলেন। পাশে নূর মোহাম্মদের গবেষণা প্লটের ছোট ছোট অংশে বিভিন্ন জাতের ধান ছিল। এর মধ্যে কিছু ধান কাটা ছিল, কিছু এখনো কাটা হয়নি। তাঁরা নূর মোহাম্মদের গবেষণা প্লটের ৬২ জাতের কাটা ধান একত্র করে এবং জমির খাড়া ধান নষ্ট করে ট্রলি পার করছিলেন।

তাঁদের হুকুম পেয়ে একদল শ্রমিক নূর মোহাম্মদকে তুলে নিয়ে এক জায়গায় আটকে রেখে মারধর করেন। অন্যরা তাঁর গবেষণা প্লট নষ্ট করে ট্রলি পার করে নিয়ে যান। গাড়ি পার করা হলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯এ ফোন করেন। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।

অঞ্জন মালাকার বলেন, শ্রমিকেরা ধানের ট্রলি পার করেছিলেন। এতে যা ক্ষতি হয়েছিল নূর মোহাম্মদ মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি আর গাড়ি পার করতে দেবেন না বলে জেদ ধরে বসেন। অন্য দিক দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে বলেন, এ সময় কয়েকজন শ্রমিক তাঁকে ধরে রাখেন এবং অন্যরা গাড়ি পার করে নিয়ে যান। তিনি তাঁকে হুমকি দেওয়ার বিষয় অস্বীকার করে বলেন, তিনিই শ্রমিকদের নূর মোহাম্মদকে ধরতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি জানেন যে নূর মোহাম্মদ বিজ্ঞানী, ধান নিয়ে গবেষণা করেন।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল হাসান জানান, অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্তে যা পাওয়া যায়, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ