নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কৃষির উৎপাদন ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে দারিদ্র্যের হার ০.৪১ শতাংশ হ্রাস পায়। তবে কৃষি বহির্ভূত খাতে উৎপাদন ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে দারিদ্র্য হ্রাস পায় ০.২ শতাংশ। অর্থ্যাৎ কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি অন্যান্য খাতের প্রবৃদ্ধির তুলনায় দিগুণ হারে দারিদ্র কমায়।

রাজধানীতে সিরডাপ মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার (২২ মে) ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ এর উদ্যোগে এবং ক্রিশ্চিয়ান-এইডের সহায়তায় অনুষ্ঠিত ‘কৃষিখাতে স্বয়ম্ভরতা ও খাদ্য অধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে সম্প্রতি বাংলাদেশে পরিচালিত এক সমীক্ষার এ ফল তুলে ধরা হয়।

এতে বক্তারা বলেন, বর্তমানে দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১৮ শতাংশ আসছে কৃষি (শস্য, মৎস্য, প্রাণী ও বন) খাত থেকে এবং এর মধ্যে শস্য খাতের অবদান ১৩ শতাংশ। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের যত অর্জন আছে, তার মধ্যে কৃষি খাতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। ‘টেকসই কৃষি ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠিত হলে সকল মানুষের খাদ্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রধান শর্ত পূরণ হবে। এজন্য প্রয়োজন, কৃষিখাতে স্বয়ম্ভরতার পাশাপাশি খাদ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনী কাঠামো প্রণয়ন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির  বক্তব্যে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তির ব্যাপক হারে সম্প্রসারন-এর মাধ্যমে কৃষির উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব এবং প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরন সহায়তা বিশেষত কৃষি বিনিয়োগের সুদ কমানো ও কৃষকদের উৎপাদিত পন্যের উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করে দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন সম্ভব।

সভাপতির বক্তব্যে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদিত হলেও যথাযথ বন্টন ব্যবস্থার অভাবে খাদ্য সকলের কাছে পৌছায় না, পাশাপাশি রয়েছে নীতিমালা অনুযায়ী বাস্তবায়নের সমস্যা। এজন্য ৪ কোটি অতি দরিদ্র ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ‘খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার’ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খাদ্য অধিকার আইন করা প্রয়োজন।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ ড. মাহবুবার রহমান, প্রাক্তন উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর, কৃষিবিদ মোঃ হামিদুর রহমান, সাবেক মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশ কর্মসূচি ব্যবস্থাপক, সঞ্জীব কুমার সঞ্জয়।

সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সঞ্চালনা করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। এছাড়া সেমিনারে বক্তব্য রাখেন প্রাকটিক্যাল একশন বাংলাদেশ, হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড, বাংলাদেশ আদিবাসি সমিতি, ভূমিহীন সমিতি, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন-এর নেতৃবৃন্দসহ দেশের কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করে এমন সংগঠন ও ব্যক্তিরা।

আলোচকের বক্তব্যে সঞ্জীব কুমার সঞ্জয় বলেন, উৎপাদনযোগ্য পরিবেশ ও আবহাওয়া এবং বাজার চাহিদা বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক নির্দিষ্ট ফসলের চাষাবাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করে কৃষিজ উৎপাদনের উপযুক্ত দাম প্রাপ্তির মাধ্যমে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন করা সম্ভব।

কৃষিবিদ মোঃ হামিদুর রহমান বলেন, আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি তার পুষ্টিমান-এর বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রাখা। দেশের বাজার ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন কৃষির উৎপাদনকে প্রভাবিত করে থাকে সুতরাং খদ্যের স্বয়ম্ভরতার জন্য এগুলো প্রধান বিবেচ্য বিষয় হওয়া দরকার এবং প্রয়োজন যথাযথ গবেষণা ও সম্প্রসারন কার্যক্রম।

কৃষিবিদ ড. মাহবুবার রহমান বলেন, কৃষিতে আমরা এখন স্বয়সম্পূর্ন সুতরাং প্রয়োজন খাদ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনী কাঠামো প্রণয়ন করে সকলের নিকট প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা।

প্রবন্ধ উপস্থাপনে বলা হয়, কৃষি তথ্য সার্ভিস ২০১৮ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ফসল উৎপাদনের নিবিড়তা হয়েছে ১৯৪ শতাংশ। অনেক ক্ষেত্রে ফসলের ভাল উৎপাদন হলেও ফসল উত্তোলনের সময় ব্যাপক ক্ষতি হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রধান ৭ শ্রেণীর ফসলের মোট উৎপাদন ৫ কোটি ৮৪ লাখ টন এবং যার প্রায় ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টন নষ্ট হয়েছে।

যা মোট উৎপাদিত ফসলের প্রায় ১৪ শতাংশ এবং এর বাজারমূল্য প্রায় ৩০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা মোট  বাজেটের প্রায় ১০ শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রায় ৩১ শতাংশ। সম্প্রতি বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কৃষিখাতের গুরুত্ব কম বলে মনে হচ্ছে। ২০১০-১১ সালে মোট বাজেটে বৃহত্তর কৃষিখাতের বরাদ্দ ছিল ১০.৪৭ শতাংশ এবং ২০১৭-১৮ সালে ৮.৩৩ শতাংশে নেমে আসে।

কৃষিখাতে স্বয়ম্ভরতা ও খাদ্য অধিকার নিশ্চিতে ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ এর সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশমালা তুলে ধরে। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ-এর পক্ষে কানিজ ফাতেমা এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।