মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ত্বীন ও জয়তুন ফলের কথা উল্লেখ রয়েছে পবিত্র কোরআন শরীফে। বর্ণিত এ মরুভূমির মিষ্টি- সুস্বাদু ও রসে টইটম্বুর ত্বীন শোভা পাচ্ছে রাজশাহীর শামীম আরার ছাদ বাগানে।

মরু অঞ্চলের ফল হলেও বাংদেশের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে বেশ। নগরীর মহিষ বাথান এলাকার গৃহবধু শামীম আরা। স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা শিহাব উদ্দিন। স্বামী-স্ত্রীর মেলবন্ধনের চিত্র যেন ফুটে উঠেছে ছাদ বাগানে। ছাদটি যেন এক টুকরো ‘গ্রাম’। প্রায় ৮০ রকমের ফুল-ফলের গাছে সবুজ বাগান করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই দম্পতি।

বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন দেশি-বিদেশি মিশ্র ফলের বাগান। তার ছাদবাগানের শোভাবর্ধন করছে ত্বীন ফল। শামীর আরা বাগানের তেমন দেখাশুনা করতে পারেন না। শারীরিক অসুস্থতা তার যেন পিছু ছাড়ে না। বাগানের গাছের ডাল ছাঁটাই, জৈব সার দেওয়া, পানি দেওয়া, খুঁটি পুঁতে দেওয়া সবকিছুই করেন শিহাব উদ্দিন। এতে তাঁর স্ত্রীর উপর বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই। পড়ন্ত বিকেলে স্বামী-স্ত্রী মিলে মাঝেমধ্যেই বসান চায়ের আড্ডা। দু-একজন আত্মীয়-স্বজনও যোগ দেন তাতে।

নার্সারি থেকে ত্বীন ফলের চারা আনার সময় ফল ধরা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন শামীম আরা। পরে ত্বীন গাছে ফল ধরতে দেখে কিছুটা অবাক হন। মুখে ফোটে স্বস্তির হাসি।

সিহাব উদ্দিন জানান, ২০১১ সালের শেষের দিকে মাত্র কয়েকটি ফুল-ফল এবং সবজির গাছ দিয়ে ছাদ বাগান শুরু করেন। তাঁর স্ত্রী শামীম আরার শৈশব থেকেই গাছের প্রতি তার চরম আগ্রহ। বিয়ে হয়ে আসার কিছুদিন পর থেকেই গাছ লাগাতে শুরু করেন। তখন ছাঁদ না থাকায় বাড়ির সামনে বাগানে লাগাতেন। পাকা বাড়ি করার সময় ছাঁদে সিমেন্ট দিয়ে বেদী তৈরি করে দেন স্ত্রীর ইচ্ছাতেই। নিজের প্রচেষ্টা আর স্ত্রীর অনুপ্রেরণা এ দ-ুয়েই গড়ে উঠে মনোরম বাগান।

বাগানের ত্বীন গাছ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, কোনো রাসায়নিক সার ছাড়াই, মাটিতে জৈব ও কমপোস্ট সার মিশিয়ে টবে লাগিয়েছেন ত্বীনগাছ। সবুজ লকলকে প্রসারিত শ্যামল পাতার গাছ লম্বায় ৩ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত। এই গাছ লম্বায় ১০ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। বর্ষা ও শীতে ফল কম হলেও বছরের অন্যান্য সময়ে প্রতিটি পাতার গোড়ায় জন্মে একটি করে ফল।
বাগানে চোখে পড়ে আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ডুমুর আকৃতির এই ফল। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে ত্বীন ফল পাকতে শুরু করে। পাকলে গোলাপি ও হলুদাভ রঙ ধারণ করে। ফলের আকারও বড় হয়। পুরোপুরি পাকলে রসে ঠাসা ও মিষ্টি হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশে এই ফলের চারা অনেকটাই সহজলভ্য। স্বাভাবিক পরিচর্যার মাধ্যমে ত্বীন বড় হয়ে ওঠে। বেশি পানি ব্যবহার করতে হয় না। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা গেলে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণে তা সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছি।

পবিত্র কোরআন শরিফে যে ত্বীন ও জয়তুন ফলের কথা উল্লেখ আছে সেটিই এই ফল। রাজশাহীর এক নার্সারি থেকে এই গাছ সংগ্রহ করেছেন। শুধু এই ত্বীন ফল নয়, বাগানে প্রায় ৮০ প্রকারের ফুল ফলের গাছ আছে। সৌখিন এই বাগানি জানান, সিডলেস জাম, জামরুল, এলাচী লেবু, ব্যানানা ম্যাংগো, পেঁপে, গৌড়মতি আম, মিষ্টি তেঁতুল, থাইড্রপ আম, তেঁতুল, কালো পাতার ব্ল্যাক বক্স আম, কলা, থাই জাম, দেশি জাম, করমচা, বেদানা, অভিসারিকা আম, সুইট লেমন, অরুনা (আম) বনসাই করে রাখা হয়েছে।

মসলা জাতীয় গাছের মধ্যে আছে অল স্পাইস, তেজপাতা, দারুচিনি, গোলাপজামনসহ আরও অনেককিছু। শোভাবর্ধনকারী গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে, নীল অপরাজিতাসহ বিভিন্ন রঙের অপরাজিতা, ফায়ার বল, বিভিন্ন ধরনের জবা, এ্যাডেনিয়াম, এলামুন্ডা, ৩০ থেকে ৩৫ প্রজাতির গোলাপ, লাইলী-মজনু, বিভিন্ন ধরনের পাতা বাহার, সাইকাস, এ্যারোমেটিক জুঁই, টগর, কামিনী, মধুমালতি, মাধবীলতা, বিভিন্ন ধরনের অর্কিড, ক্যাকটাসসহ ৭০ থেকে ৮০ প্রজাতির ফুল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে এই ফল খুবই উপকারী। এ ছাড়া নানা রোগ নিরাময়ে বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ত্বীন। এতে আছে প্রচুর পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম। পুষ্টি চাহিদা পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করে।

ত্বীন ফল চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোছা: ছালমা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ত্বীন বা ডুমুর সম্পর্কে তেমন জানা নেই। বাজারে কেমন চাহিদা, বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে কতটুকু লাভবান সম্ভব এসব নিয়ে বিস্তারিত জানার পর বলা যাবে।

 এগ্রিকেয়ার/এমএইচ